শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভোটের অনিয়ম দূর করতে ইসির ভরসা ইভিএম

আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:০৯

আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ত্রুটিমুক্ত নির্বাচন করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনই (ইভিএম) তাদের একমাত্র ভরসা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ইভিএম ব্যবহারে সুফল মিলেছে। তাই ইভিএম ধরে রেখেছে ইসি। ব্যালটের চেয়ে ইভিএমের খরচ একটু বেশি হলেও নির্বাচনি অনিয়ম দূর করা সম্ভব বলে মনে করছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ইভিএম ব্যবহারের মূল লক্ষ্য নির্বাচনি অনিয়ম দূর করা। স্বল্প সময়ে নির্বাচনে বিশেষ করে রাতে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট বা অনিয়ম ইভিএমে বন্ধ সম্ভব। এজনই ইভিএমে পুরোপুরি নির্বাচনের পক্ষে আমরা।

বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে আসছে। তবে আওয়ামী লীগসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল ইভিএমে ভোটের পক্ষে রয়েছে। এই পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থানের মাঝে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে আসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামীতে দেশে অনুষ্ঠিত সব স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচন ইভিএমে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এরই অংশ হিসাবে ঢাকা দুই সিটির সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হবে। ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো সন্দেহ থাকলে তা পরীক্ষা করে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।

কেন্দ্রে প্রার্থীর এজেন্ট থাকলে অনিয়ম বন্ধ হবে :ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচনি অনিয়ম অনেকাংশেই দূর করা সম্ভব। কারণ সব প্রার্থীর এজেন্ট কেন্দ্রে থাকলে ইভিএমে অনিয়ম বা কারচুপির আশ্রয় নেওয়া সহজ হবে না। তবে যন্ত্র পরিচালনায় যারা থাকবেন তাদের আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এবারের ভোটে সব দলের প্রার্থী এজেন্ট দিবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী আরো বলেন, নির্বাচন তুলে আনতে কমিশনকে অনেকের ওপর নির্ভর করতে হয়। যারা সবাই কমিশনের নিজস্ব জনবল নয়। কমিশনের কাছে কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ আসলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই নির্বাচনের একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। এ ব্যাপারে কমিশন সদস্যরা সবাই একমত হয়েছেন।

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইসির দেওয়া স্মার্ট আইডি কার্ড বা সাধারণ আইডি কার্ড নিয়ে ভোট দিতে যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ভোট—কোন কেন্দ্রে; কত নম্বর কক্ষে; তা আগেই নিশ্চিতভাবে জেনে যাওয়া ভালো। তাহলে হয়রানি কম হবে। আইডি কার্ড ছাড়াও ইভিএমে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকছে। এমনকি ফিঙ্গার প্রিন্ট না মিললেও প্রিজাইডিং অফিসার বা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এই মেশিনে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারবেন। তবে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা কত ভাগ ভোট ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়া দেওয়ার সুযোগ রাখবেন তা কমিশন থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, প্রার্থিতা চূড়ান্ত, প্রতীক বরাদ্দ এবং প্রচার শুরুর পরে এসব বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের তারা জানিয়ে দেবেন।

নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো কমিশন সদস্যদের মধ্যে আলাপ হয়নি। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। তবে এটা শতকরা ৫ ভাগের বেশি হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ঢাকার দুই সিটিতে ৩০ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোট হবে। দুই সিটির ভোটে ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। আড়াই হাজার কেন্দ্রে ৩৫ হাজার ইভিএম ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে দুই জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ইভিএম ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবেন।