বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সামাজিক দূরত্বে পেটের আগুনে পুড়ছে সেলুন কর্মীরা

আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ২২:৩০

বিশেষ প্রতিনিধি

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী চলছে সাধারণ ছুটি। কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া বন্ধ আছে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও গণপরিবহন। ফলে মানুষ খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। এ অবস্থায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পড়েছেন বিপাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম সেলুনের কর্মীরা। সেলুনে খদ্দেরের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন। ফলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকলেও রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় হাতেগোনা দুয়েকটি সেলুন খোলা থাকলেও অধিকাংশই বন্ধ। যারা দোকান খুলে রাখছেন তারাও পাচ্ছেন না সেবাগ্রহীতা বা খদ্দের। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পেটের আগুনে পুড়ছে সেলুন কর্মীরা।

নগরীর একাধিক সেলুন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছুটিতে অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণার পর বেশিরভাগ সেলুন কর্মী নিজ বাড়িতে চলে গেছেন। যারা রাজধানীতে বাস করেন তারাও কর্মহীন। ফলে অর্থকষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের ।

 তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মিরপুরের পীরেরবাগ, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, তালতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় প্রধান সড়ক সংলগ্ন সেলুন বন্ধ রয়েছে। তবে অনেক এলাকার অলিগলিতে কয়েকটি সেলুনের ঝাঁপ অর্ধেক খোলা দেখা যায়। তবে সাধারণ সময়ের ৫ ভাগ খদ্দেরও আসছেন না। মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনের সিটি ক্লাব মাঠ সংলগ্ন একটি সেলুনের ম্যানেজার গোলাপের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ থেকে সেলুন বন্ধ। কাজ নেই। একদম অলস সময় পার করছি। আমার কাছে যা টাকা ছিল তা দিয়ে পরিবার নিয়ে কয়েকদিন চলেছি। এখন টাকা শেষ হয়ে গেছে। কী করব বুঝতে পারছি না। ধার-কর্জ করে চলা ছাড়া আর কোনো পথও দেখছি না।’

তিনি বলেন, এ বিপদে যতদিন উদ্ধার না হই, ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। আমাদের মালিকও কোনো সহযোগিতা করেননি। কাস্টমাররা ফোন করে জানতে চায় কখন সেলুন খুলবে। জানতে চায় কখন কাজ করাতে পারবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কাজ করলে টাকা পাই। কাজ না করলে টাকা পাই না। সেলুন খোলা থাকলে সবমিলিয়ে মাসে ১৮ হাজার টাকা রোজগার হয়। এখন তো কোনো টাকাই পাচ্ছি না। খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি।

বর্ধিত পল্লবী এলাকার এক সেলুনের মালিক ও কারিগর শাহজালাল মিয়া বলেন, থানা থেকে এসে বলে গেছে সেলুন বন্ধ রাখতে। প্রথম কিছুদিন বন্ধ রেখে ঢাকায়ই ছিলাম। কিন্তু এরপরেও যখন দোকান খোলার অনুমতি পাই নাই তখন বাড়ি চলে এসেছি। এদিকে নিয়মিত কাস্টমাররা ফোন দেন। তবে কবে দোকান খুলব, জানি না।

এদিকে মিরপুর-১ নম্বরে এক ঝাঁপ বন্ধ রেখে সেলুনে কাজ করছেন কর্মী জাবেদ। তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে আমি এ কাজ করি। আজ সকাল থেকে মাত্র দুটো কাজ করেছি। সেলুন খোলা রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, গরীব মানুষ কী করে খাব? এছাড়া অন্য কোনো কাজও পারি না। পেটের দায়ে সেলুন খোলা রেখেছি।