শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দেশীয় অগ্রাধিকারকে সামনে রেখেই ডেল্টা পরিকল্পনা

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৫৮

ইত্তেফাক রিপোর্ট

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেছেন, পৃথিবীতে বাংলাদেশ ২য় দেশ যারা শতবর্ষী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর আগে নেদারল্যান্ড এ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে সফল হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা প্রণয়নে তাদের থেকে অভিজ্ঞতা নেওয়া হয়েছে। আমরা নেদারল্যান্ডের পরিকল্পনা পর্যালোচনা করেছি, নিজেরা গবেষণা করেছি। যারা প্রশ্ন তুলছেন, নেদারল্যান্ডের অভিজ্ঞতা আমাদের দেশের সাথে কতটা প্রাসঙ্গিক। আমি তাদের বলবো, মোটেও প্রাসঙ্গিক নয়। কারণ নেদারল্যান্ডের সাথে আমাদের অনেক পার্থক্য রয়েছে। সেখানে সারা বছর বৃষ্টি হয়। নদীগুলো শান্তভাবে প্রবাহিত হয়। আমাদের বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, নদী ভাঙন হয়। তাদের অভিজ্ঞতা এবং সফলতা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। ডেল্টা প্লানের একটি বাক্যও বিদেশি পরামর্শকের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি। দেশীয় অগ্রাধিকারকে সামনে রেখেই শতবর্ষী এ দলিল দেশীয় বিজ্ঞানি ও বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রণয়ন করা হয়েছে। সমাজের সকল শ্রেণির মতামতের ভিত্তিতে এটা প্রণয়ন করা হয়েছে। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মতামত গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। এটি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। সুতরাং ডেল্টা প্লান নিয়ে ভুল বোঝার সুযোগ নেই। এটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক এবং অংশগ্রহণমূলক একটি পরিকল্পনা। ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এবং বাংলাদেশের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন’ শীর্ষক দুইদিনব্যাপী এক বিশেষ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

ড. শামসুল আলম আরো বলেন, বিভিন্ন গবেষণা, পর্যালোচনার মাধ্যমে যুগোপযোগী করে ডেল্টা প্লান প্রণয়ন করা হয়েছে। সব ধরনের পরিকল্পনার সাথে এটির সমান্তরাল যোগসূত্র রয়েছে। এটা একটা ডায়নামিক প্লান। পাঁচ বছর অন্তর এর সংশোধন করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করা শতবর্ষী ডেল্টা পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য। পাঁচ বছর মেয়াদি জাতীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে ডেল্টা প্লান বাস্তবায়ন করা হবে।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সভাপতিত্বে এবং অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদের স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাপার সহ-সভাপতি ড. নজরুল ইসলাম, বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ার সম্ভাবনা কম। খাদ্যের অভাবে কখনো দুর্ভিক্ষ হয়নি। যা হয়েছে তা মনুষ্যসৃষ্ট। আমাদের আবহাওয়া আর্দ্র থাকে। বৃষ্টিপাতের অভাব নাই। তাই মাটিও কখনো পরিত্যক্ত হবে না। অন্যদিকে হিমালয়ের সাথে যতগুলো প্রধান নদী রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশ বাংলাদেশে এসে মিশেছে। তবুও আমরা একটা বড় সমস্যার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। মানুষকেই জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব প্রতিহত করতে হবে।

ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা একদিনে হবার নয়। এমন শতবর্ষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে।

ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, বাপা, বেন ডেল্টা প্লান বিরোধী নয়। আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে পরিকল্পনাটি আরো যুগোপযোগী হয়ে উঠতে পারে। এ ধরনের একটি বড় পরিকল্পনা নিয়ে বুঝে শুনে আগাতে হবে।