শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও গণআন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তিনি

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০১৮, ২২:১১

নারী জাগরণের অগ্রদূত জননী সাহসিকা কবি বেগম সুফিয়া কামাল। যিনি আজীবন কথা বলেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। প্রতিভাময়ী এই নারী আজীবন মুক্তবুদ্ধির চর্চার পাশাপাশি সামপ্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে সংগ্রাম করেছেন। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। কবি সুফিয়া কামালের ১৯তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে ‘বাংলার সমাজ ও নারী জাগরণে কবি সুফিয়া কামাল’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। মহীয়সী এই নারী ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন, আর জন্মগ্রহণ করেন ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদের অভিজাত পরিবারে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১৯৫৬ সালে শিশুদের সংগঠন কঁচিকাচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন কবি সুফিয়া কামাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবি জানান তিনি। ১৯৬১ সালে তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন, পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ইতিপূর্বে প্রদত্ত তমঘা-ই-ইমতিয়াজ পদক বর্জন করেন। ১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন।

বিশেষ অতিথি সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে নারীজাগরণ এবং সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এই সংগ্রামী নারী উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছেন, কার্ফিউ উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন। মুক্তবুদ্ধির পক্ষে এবং সামপ্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষাবিদ লেখক ও জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, এই সাহসী নারী শুধু আজীবন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন তা কিন্তু নয়, তিনি নারীদের দেখিয়েছেন কিভাবে নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হয়। সুফিয়া কামালের প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’ নারী অধিকার আদায়ের এক অনন্য প্রতিষ্ঠান। তার কাব্যপ্রতিভা ও কর্মের গুণে তিনি আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।

আলোচনায় মানবাধীকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, কবি সুফিয়া কামালের জীবনের বিস্তার যতটা বড় তা সংক্ষিপ্ত আকারে বলে শেষ করা যাবে না। তিনি কাজ করতেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সকল সাধারণ মানুষের জন্য।

মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়শা খানম বলেন, ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় কবির সাঁঝের মায়া কাব্যগ্রন্থটি। এর ভূমিকা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি পড়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এর মাধ্যমেই সুফিয়ার কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় যখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধে, তখন দাঙ্গাপীড়িতদের সাহায্যের ক্ষেত্রে সুফিয়া সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক কাজী মদিনা বলেন, কবি সুফিয়া কামাল শুধু কবি নন, তিনি একাধারে ছিলেন সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ এবং অপ্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধা। তার অবদান বাংলাদেশের সকল আন্দোলন এবং নারী আন্দোলনে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখে। তিনি তার সারা জীবন অতিবাহিত করেন সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য।