বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নারীর দক্ষ হাতে তৈরি নানা পণ্যের সমাহার

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০১৯, ২২:৩০

 ‘সুই-সুতোর রঙিন ফোঁড়ে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য উঠে এসেছে নকশি কাঁথায়। এই কাঁথার অপরূপ নকশার মধ্যে গেঁথে আছে অসংখ্য গ্রামীণ নারীর সুখ-দুঃখের গল্প। তবে অতীতে এই সেলাইয়ের ফোঁড়ে গ্রামীণ নারীদের কান্নার আধিক্য থাকলেও এখন সেই চিত্রের পরিবর্তন হয়েছে। এখন এই নকশি কাঁথার ভেতর আছে তাদের জীবন বদলানোর যত গল্প। সে গল্প শুধুই তাদের অর্জনের, নিজেকে বদলানোর, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার’ —কথাগুলো বলছিলেন ‘নূর নকশী মহিলা জাগরণ’-এর প্রতিষ্ঠাতা তাহরিমা বেগম। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে যিনি কাজ করছেন যশোরের ‘নকশি কাঁথা’ নিয়ে। 

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য নিয়ে এসেছেন এসএমই মেলায়। বসেছে শতাধিক স্টল। আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত ১৬ মার্চ শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী এ মেলা। এতে অংশ নিয়েছেন নতুন-পুরাতন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। এখানে কেউবা প্রথমবারের মতো এসেছেন, কেউবা এসেছেন শুধুই পরিচিতি পাওয়ার জন্য। ‘সুবসনা’র স্বত্বাধিকারী ফ্লোরিনা রহমান বলেন, আমি দ্বিতীয়বারের মতো এ মেলায় অংশ নিয়েছি। এখানে আসলে কী ধরনের পরিবর্তন হয় এখন তা জানছি, বুঝতে পারছি। আমার এখানে এসে একটি সালোয়ার ও একটি হাতের কাজের কামিজের অর্ডার পেয়েছি ২০০ পিস করে মোট ৪০০ পিস। এখন বুঝতে পারছি আমার একটি ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে নিয়ে আসা উচিত ছিল। আরেকজন উদ্যোক্তা সাজিদা ইসলাম বলেন, আমি পাটের ব্যাগের অর্ডার পেয়েছি এক হাজার পিস। এ মেলায় আসার এটাই প্রাপ্তি।

এসএমই মেলায় আরও পাওয়া যাচ্ছে শীতলপাটি, শাড়ি, মাটির তৈজসপত্র, পুঁতি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন গহনা, পাটের ব্যাগ, পুতুল, ম্যাট, টেবিলম্যাট, শো পিস, পাটের স্যান্ডেল। হাতে তৈরি কাঁথা, ব্লক ও বাটিকের থ্রিপিস, টুপিস, ওয়ানপিস। আরও আছে পার্সব্যাগ, কুর্তি, ফতুয়া, শার্ট, লেদারের স্যান্ডেল, হাতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের শো পিস, বিভিন্ন ফলের আচার, মধু ও পিঠা।

চট্টগ্রাম থেকে আসা একজন  ক্রেতা সোহানা বলেন, আমি ভিন্নধর্মী পণ্য কিনতে খুব পছন্দ করি। এখানে এসে বৈশাখের জন্য তিনটি শাড়ি কিনেছি। থ্রি পিস, হ্যান্ডব্যাগ, পুঁতির গহনাসহ আরও বেশকিছু পণ্য কিনেছি। যা আমার পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয়দের উপহার দিব। তবে এখানে এলে আমারও উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছে করে। অন্য আরেকজন ক্রেতা রাজিয়া সুলতানা বলেন, এই নারীরা কেবল নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তা নয়, তারা আরও অনেকের কর্মসংস্থান করেছেন, এটা শুনলে ভালো লাগে।

সিলেট থেকে মনিপুরি তাঁতশিল্পজাত পণ্যের ব্যতিক্রমী আয়োজন নিয়ে এসেছেন মোইরাং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা বিক্রি করছেন নিজেদের তৈরি তাঁতের মনিপুরি শাড়ি, গামছা, মাফলাসহ আরও বেশকিছু শো পিস। এ মেলায় অংশ নিয়ে অনেক নিয়ম কানুন শিখছেন বলে জানান শ্রাবণী, লাবিবা ও মিতু। মিতু  বলেন, আমি চার বছর ধরে এই পণ্য বেচা-কেনা করছি কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক একাউন্ট করি নাই। ফলে এখনো ঋণ নিতে পারছি না। এটা আমি আগে জানতাম না। এখানে এসেই সেটা শিখতে পারলাম।