শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সাত বছরের আইনি লড়াই শেষে উচ্ছেদ সদরঘাটের ২৭ দোকান

আপডেট : ২১ মে ২০১৯, ২১:৫৬

দীর্ঘ সাত বছর আইনি লড়াইয়ের পর ঢাকা নদী বন্দরের (সদরঘাট) ২৭টি দোকান উচ্ছেদ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাটির বন্দর বিভাগের কর্মকর্তারা এসব দোকান উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। ২০১২ সালে অভিযান চালালেও আইনি জটিলতার কারণে তা উচ্ছেদ করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ।

বিআইডব্লিউটিএর বন্দর বিভাগের পরিচালক মোঃ শফিকুল হক জানান, সোমবার রাতে মালিকরা দোকান থেকে মালামাল সরিয়ে নেন। মঙ্গলবার ওই সব দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদ করা জমিতে সৌন্দর্য্যবর্ধন করা হবে।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, ২০০৬ সালে এসব দোকান গড়ে ওঠে। টার্মিনালের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ২০১২ সালে দোকান মালিকদের সরে যাবার নোটিস দেয় বিআইডব্লিউটিএ। এর বিরুদ্ধে দোকান মালিকরা উচ্চ আদালতে রিট করেন। দোকান উচ্ছেদে স্থগিতাদেশ দেয় উচ্চ আদালত। এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে বিআইডব্লিউটিএ। গত রবিবার ওই সব দোকান উচ্ছেদে বাধা নেই মর্মে রায় দেন আপিল বিভাগ। এরপরই সোমবার দোকান মালিকদের সরে যেতে নোটিস দেওয়া হয়। তারা আরো জানান, মালিকরা মালামাল সরিয়ে নেওয়ায় কোনো বাধা ছাড়াই দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদকৃত মালামাল অপসারণে ২ লাখ ৪০০ টাকায় নিলাম দেওয়া হয়। আগামী তিনদিনের মধ্যে এসব মালামাল অপসারণ করা হবে।

 বিআইডাব্লিটিএর যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দীন ইত্তেফাককে বলেন, এ নদী বন্দর থেকে প্রতিদিন দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে প্রায় লক্ষাধিক লোক যাতায়াত করে। এক সময় এই নদী বন্দরে এত যাত্রীচাপ ছিল না। বর্তমানে এই বিরাট সংখ্যক যাত্রী যখন বন্দরে অবস্থান করে তখন ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। তারা এই ২৭টি দোকানের কারণে অপেক্ষ্যমান ছাউনি থেকে সরাসরি নদী দেখতে পায় না। তাদের জাহাজ কখন ভিড়ছে কখন ছেড়ে যাচ্ছে তা দেখার জন্য তাদের পন্টুনে যেতে হয়। এতে সেখানে কৃত্রিম মনুষ্যজটের সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন ধরণের হয়রানির ঘটনা ঘটে। এছাড়া সদরঘাটের সমস্ত ভ্রাম্যমান হকারের মূল উত্স এই ২৭টি দোকান। বর্তমান সদরঘাট নদী বন্দরকে অত্যাধুনিকায়নের আওতায় এই দোকান ব্যাপক বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা প্রায় ৭ বছর আইনি লড়ায় শেষে আপিল বিভাগ থেকে রায় পেয়ে দোকানগুলো উচ্ছেদ করেছি। এখন আমরা ওই জায়গায় স্বচ্ছ কাচ দিয়ে বেড়া তৈরি করব। যাতে যাত্রীরা বন্দরের অপেক্ষ্যমান ছাউনিতে বসেই তাদের গন্তব্যের জাহাজের আসা যাওয়া দেখতে পারে এবং যাত্রী হয়রানি না হয়।

তিনি আরো বলেন, সদরঘাটের বন্দর, গ্যাংওয়ে, পন্টুন থেকে হকার মুক্ত করা সম্ভব হলেও জাহাজের মধ্যে উপদ্রব এখনও রয়েছে। একধরণের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী নৌকাযোগে হকারদের জাহাজে তুলে দেয়। তারা জাহাজের ডেকে মালামালের পসরা বসায়। এতে যাত্রীদের অবস্থানের জায়গা কমে যায়। সৃষ্ট বর্জ্য এলাকার পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া দুই জাহাজের মাঝে ভাসমান নৌকা থেকে কেনাকাটা করার সময় প্রায়ই বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে। এজন্য আমরা ঈদ উপলক্ষে জাহাজের মালিকদের নোটিস দিয়েছি আগামী ২৯ মে’র পর কোন জাহাজেও হকার থাকতে পারবে না।

ঈদ উপলক্ষে নির্বিঘ্নে যাত্রী চলাচলের কেমন প্রস্তুতি নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সদরঘাটে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি এলাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় থাকবে। জাহাজে কোন ধরনের অনিয়ম দেখা দিলে যাত্রীরা যাতে সহজে সরাসরি অভিযোগ করতে পারেন এজন্য প্রতিটি জাহাজে আমাদের হেল্প লাইন মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকবে। জাহাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা মানার জন্য প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ সদস্য থাকবেন।