শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চাই বিশেষ বরাদ্দ

আপডেট : ২৫ জুন ২০১৯, ২২:১৬

মোহাম্মদপুর বস্তিতে থাকেন জমিলা খাতুন। বাসাবাড়িতে কাজ করে মাসে রোজগার হয় ৪ হাজার টাকা। স্বামী রিকশা চালান। ছয়জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। বর্ষার দিনে কাজে যেতে সমস্যা হয়। কোনো নোটিশ ছাড়াই কাজ চলে যায়। জমিলা খাতুন তাঁর মতো শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছেন— ‘জাতীয় বাজেট ও নগরের বস্তিবাসী নিম্ন আয়ের মানুষের ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে। বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন পবা যৌথভাবে গতকাল মঙ্গলবার এই বাজেট বৈঠকের আয়োজন করে।

বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবীণ রাজনৈতিক পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষরাই নিজেদের রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু গরিব, মেহনতি ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কোনো বাজেট হয় না। বাজেট হয় কালোটাকার মালিক, হারামখোর আর ধনীদের স্বার্থে। সংবিধান থেকে শুরু করে নির্বাচনী ইশতেহার সর্বত্র গরিব মেহনতি মানুষের উন্নয়নের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো শহরের বস্তিবাসী নিম্ন আয়ের মানুষেরা অধিকারবঞ্চিত ও নিষ্পেষিত। বস্তিবাসীদের আবাসন, শিক্ষা ও চিকিত্সা খাতের জন্য জাতীয় বাজেটে নির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখতে হবে। প্রতিজন বস্তিবাসীর জন্য সরকারিভাবে ১০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও পরিচয়কার্ড দিতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি হলে মাথাপিছু গড় ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ৭৭৬ টাকা। কিন্তু এই বাজেটে নগর দরিদ্র মানুষের কথা কোনো স্থানেই সুস্পষ্টভাবে স্থান পায়নি। ঢাকা শহরে প্রায় ৫ হাজার বস্তি রয়েছে। বারসিক-এর গবেষণায় দেখা যায়—বন্যা, নদীভাঙন এবং গ্রামে কৃষিকাজ করে সংসার চালাতে না পেরে এবং অন্য কোনো আয়মূলক কাজ না পেয়ে গ্রাম থেকে মানুষ বস্তিতে আসতে বাধ্য হয়। বস্তিবাসীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা তাদের আবাসন এবং কর্মসংস্থানের সংকট। বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের বিশাল অংশকে উন্নয়নের সাথি না করে কোনোভাবেই এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।

বৈঠকে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে অংশগ্রহণকারীরা নিম্নোক্ত দাবিগুলো তুলে ধরে বলেন—বস্তিবাসীদের জন্য সরকারিভাবে সহজ শর্তে আবাসনের ব্যবস্থা, তাদের সকল কাজের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে বেতনকাঠামো ও উত্সব ভাতা নির্ধারণ ও মর্যাদাপূর্ণ কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। বস্তির শিশুদের জন্য অনুপাতিক হারে সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা, যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানবান্ধব প্রশিক্ষণব্যবস্থা, বস্তিবাসীদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের ব্যবস্থা ও বিনা মূল্যে তাদের জন্য চিকিত্সার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বৈঠকে সভাপ্রধানের বক্তব্য রাখেন পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। আলোচনা করেন নগর দারিদ্র্য বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীর আলম, গবেষক পাভেল পার্থ, বারসিক প্রতিনিধি সুদীপ্তা কর্মকার, নৃবিজ্ঞানী সৈয়দ আলী বিশ্বাস, বস্তিবাসী ইউনিয়নের নেতা কুলসুম বেগম এবং রাফেসা বেগম। মোহাম্মদপুর বস্তির নাছিমা বেগম, ঝুমুর বেগম, নূরুজ্জামান, কুদ্দুস মিয়া প্রমুখ। বৈঠক সঞ্চালনা করেন পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল।