শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকারকে বিদায়

আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৫৮

ইত্তেফাক রিপোর্ট

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শিল্পী কালিদাস কর্মকারকে বিদায় জানালেন ভক্ত শুভার্থীরা। তারা বললেন, বাংলাদেশের চিত্রকলায় ইউরোপীয় ঘরানার কাজকে তুলে এনেছিলেন কালিদাস। বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাদেশের চিত্রকলাকে তুলে ধরেছিলেন। তার মৃত্যুর মধ্যদিয়ে দেশ এক কর্মব্যস্ত চিরতরুণ শিল্পীকে হারালো। মানুষের ভালোবাসার ফুলে ভরে উঠেছিল তার কফিন। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ও চারুকলা প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সবুজবাগ বরেদশ্বরী কালী মন্দির শ্মশানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। গত শুক্রবার দুপুরে চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকারকে ঢাকার বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিত্সকরা কালিদাসকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল সোমবার সকাল নয়টায় বারডেম হাসপাতালের হিমঘর থেকে কালিদাস কর্মকারের মরদেহ নিয়ে আসা হয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখান থেকে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় চারুকলা প্রাঙ্গণে। শিল্পী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বরেণ্য এ চিত্রশিল্পীকে।

কালিদাস কর্মকারের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন শিল্পী হামিদুজ্জামান খান, হাশেম খান, মনিরুল ইসলাম, শহীদ কাজী, রোকেয়া সুলতানা, ফরিদা জামান, নেপালি বন্ধু ডি প্লামা, ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান ও উপ-উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদ, নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী, প্রাবন্ধিক মফিদুল হক প্রমুখ। চারুকলা অনুষদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। এছাড়াও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগ, ছাপচিত্র বিভাগ, ভাস্কর্য বিভাগ, কারুশিল্প বিভাগ, গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ, প্রাচ্যকলা বিভাগ, মৃিশল্প বিভাগ এবং শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আরো শ্রদ্ধা জানায় বিটিভি, গ্যালারি কসমস, ঢাবি ভাস্কর্য বিভাগ প্রাক্তনী সংঘ, ঢাকা আর্ট সার্কেল, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে কালিদাস কর্মকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, শিল্পী হাশেম খান, রফিকুন নবী, সৈয়দ আবুল বারক্ আলভী, কনকচাঁপা চাকমা, রোকেয়া সুলতানা প্রমুখ।

এরপর শহিদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয় নাগরিক শ্রদ্ধানুষ্ঠান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার দুই মেয়ে কঙ্কা কর্মকার ও কেয়া কর্মকার। সাংগঠনিকভাবে শ্রদ্ধা জানায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গ্যালারি কসমস, ঢাকা গ্যালারি, বিসিক নকশাকেন্দ্র, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

মেয়ে কঙ্কা কর্মকার বলেন, বাবা প্রতি মুহূর্তে দেশ ও দেশের শিল্পকর্মকে প্রচার করেছেন। এখন থেকে প্রতিবছর বাবার নামে প্রদর্শনী করব। তার সৃজনশীল কাজের কারণে মানুষ তাকে মনে রাখবে। এ সময় বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান।

ড. গওহর রিজভী বলেন, আমরা শুধু একজন শিল্পীকে নয়, পরম বন্ধুকে হারিয়েছি।

শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, তার চলে যাওয়াটা আকস্মিক। তার চলে যাওয়াটা শিল্পকলার জন্য অপূরণীয় এক ক্ষতি। হাশেম খান বলেন, কালিদাস কর্মকার বাংলাদেশের শিল্পকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করার জন্য নিরলস কাজ করেছেন। নিসার হোসেন বলেন, কালিদাস কর্মকার বহু ধরনের কাজ করতেন। শিল্পমাধ্যমের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে তিনি কাজ করেননি।