শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অণুভাবনা

ছোটোদের চাহিদা কতটা পূরণ করতে পারছি?

আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:২৪

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তাদের বই নিয়ে স্টলগুলো বর্ণিল সাজে সাজিয়েছে প্রশস্ত চত্বরে। এখানে ছোটোদের বইয়ের পসরা বসেছে ‘শিশু-কর্নার’-এ। এখানকার স্টলগুলোই মূলত শিশু-কিশোর পাঠকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে : তাদের আগ্রহ ও চাহিদা আমরা কতোটা পূরণ করতে পারছি? স্টলের সমস্ত বই-ই কি একশোভাগ তাদের উপযোগী? ছোটো বাচ্চারা চটকদার নাম ও অলংকরণ দেখে বেঁকে বসে—বইটি সে কিনবেই; একেবারে নাছোড়বান্দা! কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল—সে-বইয়ের ভেতরে প্রকৃতপক্ষে ভালোলাগার মতো তেমন কিছুই নেই। এমন অন্তঃসারশূন্য বাহ্যিক চাকচিক্য দিয়ে শিশুদের ভোলানো প্রতারণা ছাড়া আর কী? অবশ্য মেলায় তাদের জন্য ভালো বই যে নেই, তা নয়—আছে, কিন্তু আমাদের প্রশ্ন : মানহীন বই কেন থাকবে?

বাচ্চাদের বইয়ের বাহ্যিক চেহারাসুরত রঙচঙা-ঝলমলে হলেও বহু বই যথার্থ মানে পৌঁছাতে পারে না। বিষয়ের দিক দিয়ে ততটা না-হলেও শব্দ ব্যবহার, ভাষাশৈলী ও উপস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে সেসব বই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বা সমাদর পায় না। এমনকি বাচ্চাদের বইয়ের সাইজ বা আকার, অক্ষরের ফন্ট ও সাইজ, কভার ও ভেতরের কাগজ, বাঁধাই, রংবিন্যাস, নির্ভুল প্রুফ—এসব অনুষঙ্গও যে বইয়ের পাঠক আকর্ষণ-ক্ষমতাকে অনেকটা প্রভাবিত করতে পারে—সে-বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন না বা করতে পারঙ্গম নন অনেক প্রকাশকই। আসলে লেখক-প্রকাশকের পারস্পরিক সমঝোতা ও মেলবন্ধনের অভাব, কম খরচে প্রকাশকের দ্রুত বই বাজারে আনার ব্যতিব্যস্ততা, পেশাদার ও দক্ষ সম্পাদক দ্বারা পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার ব্যবস্থা প্রায়শই না-থাকা, নীতিহীন অর্থলোভী কিছু প্রকাশকের ‘মুরগি জবাই’ বা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে খ্যাতিপ্রত্যাশী তথাকথিত উঠতি লেখকদের মানহীন বই প্রকাশ, লেখকের পূর্বাপর পরিকল্পনাহীনতা, শিশু-মনস্তত্ত্ব সম্বন্ধে অসচেতনতা কিংবা অজ্ঞতা এবং সর্বোপরি শিশুদের মনের চাহিদা মেটানোর উপযোগী উপস্থাপনার ঘাটতিই মূলত বই মানসম্মত না-হওয়ার কারণ। এ কারণেই ‘শিশুদের জন্য আমরা কেমন বই চাই?’ প্রশ্নটি ওঠে।

প্রাইমারি, হাই স্কুল এবং ইন্টরমিডিয়েট লেভেল পর্যন্ত জাতিসংঘের সংজ্ঞায় একবাক্যে শিশু, কিন্তু বাস্তবে তাদের বয়সের বিভাজনভিত্তিক রুচি, চাহিদা, ধারণক্ষমতা ও সার্বিক জীবনাচরণের মধ্যে বিস্তর হেরফের রয়েছে। এদিকে সযত্ন দৃষ্টি রেখেই তাদের জন্য বই প্রণীত ও প্রকাশিত হওয়া জরুরি। পাশ্চাত্য গবেষক-লেখক ড. রবার্ট সুইটল্যান্ডের ভাষায়: ‘শিশুসাহিত্য অবশ্যই সহজ-সরল, সোজাসাপটা ও স্বচ্ছন্দ হবে;...তবে সেই সহজতার মধ্যে কৌতূহল উদ্রেককারী সুমসৃণ উপাদান থাকবে; শিশুদের আগ্রহ ও চাহিদাকে জাগিয়ে তোলার মতো ঘটনা ও কর্মকাণ্ড থাকবে; সেই সাহিত্যে শিশুরা প্রবলভাবে উপস্থিত থাকবে—তাদের শৈশব-কৈশোরের স্বপ্ন ও চিন্তাচেতনা এবং ঘটনাবলি অন্তর্ভুক্ত থাকবে...।’