শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শীতার্তদের পাশে থাকুন

আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৫২

মো. মনির হোসেন

সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। বইছে শৈত্যপ্রবাহ। শীতের তীব্রতা ক্রমে বাড়ছে। এখন দেশের উত্তরাঞ্চলের জনপদে শীত কেমন, তা সংবাদ-মাধ্যমে জানা যাচ্ছে—শীতের সঙ্গে আছে ঘন কুয়াশা, গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ও কনকনে বাতাস উত্তরাঞ্চলের জনজীবনকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে।

তীব্র শীতে উচ্চ ও মধ্য বিত্তদের তেমন অসুবিধা না হলেও সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ, ছিন্নমূল, হতদরিদ্র, ভাসমান-গৃহহীন ও নিম্ন-আয়ের মানুষগুলোকে। শীতের নানা উত্সবের সময়ে তারা নিরুত্সব, নিরাসন্ন। শীত তাদের কাছে কাব্যিক বা রোমান্টিক অনুভূতির জন্ম দেয় না; শীত তাদের কাছে হাজির হয় রীতিমত যমরূপে। 

পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও রংপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে রাজধানীর আশ্রয়হীনদের শীতের রাতে উন্মুক্ত আকাশকে গায়ে জড়িয়ে রাত্রিযাপন করতে হয়। প্রচণ্ড শীতের রাতে গরিব, ভবঘুরে, ভিখারি, নিরাশ্রয় মানুষের আশ্রয় হয় ফ্লাইওভারের নিচে, ফুটপাতের ওপর ও  অলিগলিতে।

প্রচণ্ড শীতের রাতে গরিব মানুষ চটের বস্তা কাঁথা হিসেবে ব্যবহার করে। তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ  পোহায় ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষ। কর্মহীন হয়ে পড়ে তারা। একদিন কাজ না করলেই  পুরো পরিবারকে উপোষ করতে হয়। গরম কাপড় কেনা তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। যেখানে উত্তরাঞ্চলে ৪ ডিগ্রি  থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা ওঠানামা করে, সেখানে শীতার্ত মানুষগুলোর টিকে থাকা অনেকটা সমুদ্রে নেমে হাঙরের সঙ্গে লড়াই করার মতো। এই অঞ্চলে এখনো শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি শুরু হয়নি। শীতের কাপড় না-থাকায় নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছে হতদরিদ্র্র পরিবারগুলো। শীত নিবারণের ব্যবস্থা না থাকায় খড়-কাঠে আগুন জ্বালিয়ে শীত তাড়াচ্ছে তারা। আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে ইতোমধ্যে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। আরো অনেকে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।

পঞ্চগড় ও এর আশপাশের জেলায় শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধ। বৃদ্ধরা হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে এবং শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া হাঁপানি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশিসহ হূদরোগের প্রকোপ বেড়ে চলেছে। প্রতিদিন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষ ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।

শীতের কারণে কৃষকেরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আলু ও রসুন খেতে বিভিন্ন ছত্রাক জাতীয় রোগ দেখা দিয়েছে। এতে কৃষকদের বাড়তি অর্থ ব্যয় করে ফসলে ছত্রাক জাতীয় ওষুধ স্প্রে করতে হচ্ছে। কৃষকরা মাঠে নামতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে বোরো রোপণ। ঘন কুয়াশার কারণে অনেক বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।

এ মৌসুমে শীতের রাতে ঢাকাবাসীরই দু-তিনটা লেপ-কম্বল না হলে চলে না। এ সময়ে উত্তরাঞ্চলের শীতার্তদের আর্তি কি শুনতে পাচ্ছে সমাজের বিত্তবানরা? স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি দেশের সর্বস্তরের ধনাঢ্য, বিত্তবান, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সবাইকে গরিব, অসহায়, দুঃখী মানুষের শীত নিবারণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়