বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কালিয়াকৈরে ১৭ ইটভাটার অনুমোদন নেই

আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:২৪

পরিবেশদূষণ ও শিশুশ্রমের অভিযোগ

আরিফ হোসেন খোকন, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) সংবাদদাতা

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৩৯টি ইটভাটার মধ্যে ১৭টি ইটভাটার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই বলে গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এসব ইটভাটার কালো ধোয়ায় মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ। অপরদিকে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে এসব ইটভাটায় অবাধে শিশুশ্রম চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার আষাড়িয়া বাড়ি, উত্তর দাঁড়িয়াপুর, উত্তর হিজলতলী, ভোঙ্গাবাড়ি, মেদিয়াশুলাই, শুনাখালি, বেগুনবাড়ি, বলিয়াদী, সাহবাজপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আইন অমান্য করে ঘনবসতিপূর্ণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে দ্বি-ফসলি জমির ওপর গড়ে উঠেছে ৪৩টি ইটভাটা। এর মধ্যে নানা কারণে চারটি ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ৩৯টি ইটভাটার মধ্যে ১৭টিরই জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের  কোনো অনুমোদন বা বৈধ ছাড়পত্র নেই। ঐ সব ইটভাটার কালো ধোয়ায় পরিবেশ হচ্ছে দূষিত, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি, গাছের ফল। কালিয়াকৈর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম আরজুও জানান, আগে এখানে ৪৩টি ইটভাটা ছিল। কিন্তু এখন চালু ইটভাটার সংখ্যা ৩৯।

এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের সময় অভিযোগ পাওয়া যায়, উপজেলার সুত্রাপুর, উত্তর দাঁড়িয়াপুর ও আষাড়িয়া বাড়ি এলাকায় স্থাপিত তিনটি ইটভাটায় অল্প বয়সি শিশু শ্রমিকরা অমানবিক পরিশ্রমের কাজ করছে। কম মজুরিতে শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে। ইট পরিবহনের মতো এমন ভারি কাজ করতে গিয়ে শিশুরা দুর্ঘটনার শিকার হয় নিয়মিত। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবিএম ইটভাটার মালিক পারভেজ আহম্মেদ বলেন, ইটভাটার ঐ সব শিশুরা  শ্রমিক নয়। শ্রমিকদের সঙ্গে আসা তাদের শিশুরা ইটভাটায় খেলাধুলা করে। বিএনবি ইটভাটার মালিক আব্দুল মালেক তার ইটভাটার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঐ সব শিশুরা তাদের মায়ের সঙ্গে ইট খোলায় এসে ইট নিয়ে নাড়াচাড়া করে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা কালিয়াকৈর উপজেলা শাখার সভাপতি মো. শাহজাহান মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইটভাটার কালো ধোয়ায় জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে, ঝরে যাচ্ছে গাছের ফল, শিক্ষার্থীসহ এলাকার কোমলমতি শিশুরা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি শিশুশ্রম বন্ধসহ অবৈধ ইটভাটা দ্রুত বন্ধ করার দাবি জানান।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী হাফিজুল আমিন বলেন, শিশুশ্রম ও পরিবেশ দূষণ বন্ধসহ অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, কালিয়াকৈরে ২২টি ইটভাটার অনুমোদন রয়েছে। বাকি ইটভাটাগুলোর কোনো অনুমোদন নেই। আমরা এরই মধ্যে অবৈধ ও পরিবেশ দূষণকারী ইটভাটার বিরুদ্ধে গাজীপুরে অভিযান শুরু করেছি। অচিরেই কালিয়াকৈরেও অভিযান পরিচালিত হবে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে দুই-এক দিনের মধ্যে অভিযান শুরু হবে।