শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বগুড়ায় সৌরবিদ্যুতে চলছে সেচপাম্প

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৩৬

পালটে গেছে কৃষিচিত্র

মিলন রহমান, স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া

বগুড়ায় সৌরবিদ্যুতে পালটে গেছে কৃষিচিত্র। সৌরবিদ্যুত্ চালিত শতাধিক পাম্পের মাধ্যমে স্বল্প খরচে জেলার লাখো কৃষক প্রায় ২০ হাজার বিঘা জমিতে ধান ছাড়াও শাকসবজি ও আলু চাষ করছেন।

জেলার সোনাতলা ও শিবগঞ্জ উপজেলায় সৌরবিদ্যুত্ চালিত ৬৫টি সেচপাম্প চালুর মাধ্যমে ১৩ হাজার বিঘা জমিতে সেচসুবিধা দিচ্ছে সালেক সোলার পাওয়ার লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকার এবং জার্মান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশনের অর্থায়নে এ কাজে সহযোগিতা করছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)। কৃষকেরা বলছেন, সৌরবিদ্যুত্ চালিত সেচপাম্পে চাষাবাদ করে খরচ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। হয়রানি থেকেও মিলেছে মুক্তি।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিজেলচালিত শ্যালোমেশিনে সেচ দেওয়ার জন্য মেশিনের মালিকদের কাছে ধরনা দিতে হয়। সঠিক সময়ে পানি মেলে না। সৌরবিদ্যুত্ চালিত পাম্পে এসব সমস্যা নেই। এ প্রযুক্তি দিয়ে দিনে টানা আট ঘণ্টা পানি ওঠানো সম্ভব। প্রতিটি সোলার পাম্প থেকে দিনে ৩০ লাখ লিটার পানি ওঠে।

ইডকলের ভাইস প্রেসিডেন্ট (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) নাজমুল হক ফয়সাল বলেন, ইডকল এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৮৮টি সৌরবিদ্যুত্ চালিত সেচপাম্প স্থাপন করে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এসব সেচপাম্পের ৬৫ শতাংশই উত্তরাঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ২ লাখ ৫৭ হাজার বিঘা জমি সেচসুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ায় স্থাপন করা হয়েছে সৌরবিদ্যুত্ নির্ভর পরিবেশবান্ধব ৬৫টি নলকূপ।

সমপ্রতি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার উত্তর কালাইহাটা, অড়িয়ার ঘাট, ভেলুরপাড়া, বালুয়াহাট, সিচারের পাড়া, কাচারিবাজার, হরিখালী, পদ্মপাড়া এবং শিবগঞ্জ উপজেলার গুজিয়া, শ্যামপুর, তালুকপুর, মজুমদার ও শিবতলা মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ৪২ কিলোওয়াট শক্তির সৌর প্যানেল এবং ৩০ হর্স পাওয়ারের ৬৫টি পাম্প স্থাপন করেছে সালেক সোলার পাওয়ার লিমিটেড। সৌরবিদ্যুত্ চালিত সেচসুবিধায় বদলে গেছে কৃষির চিত্র।

বালুয়াহাটের কৃষক আজহার আলী বলেন, এ মাঠে ২০০ বিঘা জমিতে সেচ দিতে একসময় ডিজেলচালিত ছয়টি শ্যালোমেশিন চলত। বোরো মৌসুমে সেচ দিতে গিয়ে সেচপাম্পের মালিকদের হিমশিম খেতে হতো। কখনো ডিজেলের সংকট, কখনো ইঞ্জিন বিকল হতো। সেচ বিঘ্নিত হওয়ায় ধান চিটা হতো। এখন সৌরবিদ্যুত্ চালিত একটি সেচপাম্পের আওতায় এসেছে পুরো মাঠ। এই পাম্পে পানি বেশি ওঠায় খেতে সেচ দিতে বেশি সময় লাগে না। খরচও অর্ধেক। খেতে পর্যাপ্ত পানি থাকায় ফলনও বেড়েছে দেড় গুণ। উপজেলার উত্তর কালাইহাটের কৃষক জহর আলী বলেন, ‘এ মাঠে ১০ বিঘা জমি রয়েছে। তিন বছর আগেও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মোটর পুড়ে যেত, ঠিকমতো সেচ দেওয়া যেত না। সৌরবিদ্যুত্ চালিত নলকূপ স্থাপনের পর সেখান থেকে সেচ দিচ্ছি। এতে খরচ কম। পাশাপাশি অন্য কোনো ঝামেলা নেই।

সোনাতলা উপজেলার জোড়গাছা ইউপি চেয়ারম্যান রোস্তম আলী মণ্ডল বলেন, সেচের জন্য সৌরবিদ্যুত্ কৃষকের জন্য আশীর্বাদ। তার এলাকার কৃষকেরা সৌরবিদ্যুতে জমি চাষ করতে পেরে খুব খুশি। এই উপজেলার তেকানি চুকাইনগর ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক বলেন, এই এলাকা বন্যাপীড়িত এলাকা। সেখানে কম খরচে কৃষকরা সৌরবিদ্যুত্ ব্যবহার করতে পারায় তারা লাভবান হচ্ছে। উপজেলার ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল করিম ছোবহান বলেন, সৌরবিদ্যুতের জন্য কৃষকরা এখন অনেক জমি চাষ করছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার সোলারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। সেজন্য আমরাও কৃষকদের সোলারে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য উত্সাহিত করছি।