শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সচল হলো পুড়ে যাওয়া সেই রেল ইঞ্জিন

আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:৫৭

৩০ কোটি টাকা সাশ্রয়ের দাবি কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার

মো. আমিরুজ্জামান, সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা

ট্রেন দুর্ঘটনায় পুড়ে গিয়ে নষ্ট হওয়া একটি রেলওয়ে ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) সচল করা হয়েছে। কাজটি সম্পন্ন করেছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা (কেলোকা)। সচল ইঞ্জিনটি বুধবার রেল বহরে যুক্ত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

রেলওয়ের সূত্র জানায়, গত ২০১৩ সালে জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায় এমইআই-১৫ শ্রেণির ১১টি ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। বিশ্বমানের ঐ ইঞ্জিনগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানিতে তৈরি। এসব ইঞ্জিন দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ট্রেন পরিচালনা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৯৩৩ নম্বর ইঞ্জিনটি ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর দুর্ঘটনায় পড়ে। ইঞ্জিনটি ঢাকা-সিলেট রেলরুটে পারাবত আন্তঃনগর ট্রেনটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় হবিগঞ্জের মাধবপুর নোয়াপাড়া স্টেশনে ঐ ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনায় পতিত হলে ইঞ্জিনটির নিচের অংশের জ্বালানি ট্যাংকে আগুন লেগে যায়। ফলে তা সম্পূর্ণ বিকল (ড্যামেজ) হয়ে পড়ে। পুড়ে যাওয়া ইঞ্জিনটি নেওয়া হয় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ডিজেল শপে। ইঞ্জিনটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা কোনোক্রমে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে এর সচল হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরে ২০১৯ সালের ১৫ মে মেরামতের জন্য কেলোকার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয় ইঞ্জিনটি।

কেলোকার প্রধান নির্বাহী (সিএক্স) মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা জানান, এখানে আনার পর ইঞ্জিনটি সম্পূর্ণ খুলে ফেলা (ডিসমেন্টাল) হয়। অতঃপর কারখানার শ্রমিক-প্রকৌশলীরা অক্লান্ত চেষ্টায় ইঞ্জিনটি পুনর্নির্মাণে (রিকন্ডিশানিং) হাত দেন। তিনি বলেন, ইঞ্জিনটি নতুন করে নির্মাণ করা ছিল আমাদের জন্য বড়ো চ্যালেঞ্জ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মেরামত ও রিকন্ডিশনিংয়ে সফল হই আমরা। অগ্নিদগ্ধ ইঞ্জিনটি ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়। যা প্রতিস্থাপন করে সফলতা দেখিয়েছে কেলোকা। দীর্ঘ আট মাস অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে আমরা ইঞ্জিনটি সচল করেছি। এরই মধ্যে ইঞ্জিনটি রেলপথে পরীক্ষামূলক দৌড় (ট্রায়াল রান) সম্পন্ন করেছে। তিনি বলেন, দেশে এই প্রথম এ ধরনের একটি ড্যামেজ লোকোমোটিভ সচল করা সম্ভব হলো। কেলোকার একটি সূত্র মতে, ইঞ্জিনটি রিকন্ডিশনিংয়ে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি টাকা। অথচ একটি নতুন মিটারগেজ ইঞ্জিন আমদানিতে খরচ হতো ৩৩ কোটি টাকা।

এ নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টোক) মো. মঞ্জুরুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে। পুড়ে যাওয়া ইঞ্জিনটি সচল করাকে তিনি চমকপ্রদ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আমাদের ইঞ্জিন সংকট রয়েছে। এ ধরনের একটি ড্যামেজ ইঞ্জিন সচল হওয়ায় রেল অঙ্গনে আনন্দ বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে।