বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

খামারিরা ননি তুলে দুধ ফেলে দিচ্ছেন নদীতে

আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২০, ২১:৩৬

বেড়ায় নেই দুধের ক্রেতা

রতন কুমার আচার্য্য, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ক্রেতার অভাবে দুধ বিক্রি করতে পারছেন না দেশের অন্যতম দুধ উত্পাদনকারী এলাকা পাবনার বেড়া উপজেলার খামারিরা। এ অবস্থায় বেশির ভাগ খামারি উত্পাদিত দুধ থেকে ননি তুলে রেখে ননিবিহীন দুধ ফেলে দিচ্ছেন। এতে খামারিদের প্রতিদিনই মোটা অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে।  

পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর এবং সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর ও উল্ল­াপাড়া উপজেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান গরুর দুধ উত্পাদনকারী এলাকা। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এ এলাকার ২৫ হাজারেরও বেশি খামারে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ লিটার গরুর দুধ উত্পাদিত হয়। এর মধ্য থেকে প্রায় পাঁচ লাখ লিটার দুধ বাঘাবাড়ি মিল্ক ভিটা, আড়ং দুধ, প্রাণ ডেইরি, ফার্মফ্রেশ, অ্যামোমিল্ক, আফতাব, রংপুর ডেইরিসহ কয়েকটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান সংগ্রহের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করে থাকে। বাকি দুধ স্থানীয় ঘোষ বা দুগ্ধ ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে থাকেন।  এ অবস্থায় খামারিরা স্থানীয় বাজারগুলোতে দুধ বিক্রির চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেখানেও এত দুধ নেওয়ার মতো ক্রেতা নেই।

লোকসান কমাতে অনেক খামারিই দুধ থেকে ননি তুলে রেখে ননিবিহীন দুধ নদী বা খালে ফেলে দিচ্ছেন।  খামারিরা হিসাব দিয়ে জানান, এক ক্যান (৪০ লিটার ধারণক্ষমতার দুধের পাত্র) দুধ থেকে প্রায় তিন কেজি ননি তৈরি হয়। প্রতি কেজি ননির দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। সে হিসেবে এক ক্যান দুধে ৯০০ থেকে এক হাজার ৫০ টাকার ননি পাওয়া যায়। তার মানে এভাবে ননি তৈরি করে প্রতি লিটার দুধ বাবদ খামারিরা ২৩ থেকে ২৫ টাকার মতো পাচ্ছেন।

বেড়া পৌর এলাকার আমাইকোলা মহল্লায় রয়েছে ছোটো-বড়ো বেশ কয়েকটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান। স্বাভাবিক সময়ে এসব প্রতিষ্ঠান খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাত। কিন্তু এখন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ঢাকায় দুধ পাঠানো বন্ধ রেখেছে। এর পরিবর্তে এসব প্রতিষ্ঠান খামারিদের কাছ থেকে অল্প দামে দুধ সংগ্রহ করে ননি তুলে রাখছে। এরপর ননিবিহীন দুধ ফেলে দেওয়া হচ্ছে পাশের ইছামতী নদীতে। শুধু এই গ্রাম থেকেই প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ হাজার লিটার ননিবিহীন দুধ নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।

ঐ মহল্লার দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ইছামতী ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টের মালিক আব্দুর রউফ বলেন, ‘আগে প্রতিদিন আড়াই হাজার লিটার দুধ ঢাকায় পাঠাতাম। অথচ এখন দুই-তিন দিন পর পর ১ হাজার লিটারের মতো দুধ পাঠাচ্ছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে খামারিদের মতো আমরাও ব্যাপক লোকসান গুনছি। এ অবস্থায় খামারিরা ননি তৈরির কারখানায় দুধ দিচ্ছেন।’

একই মহল্লার আরেক দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান সেফ মিল্কের মালিক মাসুদ শেখ বলেন, ‘ননি তুলে রাখায় অনেক কৃষক কিছুটা হলেও লোকসান কমাতে পারছেন। ননিবিহীন দুধ ইছামতী নদীতে ফেলে দেওয়ার পর নদীর পানি অনেক সময় পর্যন্ত সাদা হয়ে থাকছে।’

বেড়া উপজেলার যমুনার চরে অবস্থিত দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা গ্রামের খামারি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘এই গ্রামে প্রতিদিন ৮০ ক্যানের মতো দুধ হয়। এসব দুধ আমরা দুধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানে দিতাম। এখন তারা না নেওয়ায় গ্রামের খামারিরা মিল্যা ননি তোলার মেশিন ভাড়া কইর্যা আনছি। ননি তোলার পর বাকি দুধ যমুনায় ফালায়া দিতেছি।’