শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘যমুনার চরের জাহাজ ঘোড়া’

আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২০, ২১:৩৩

সিরাজগঞ্জে যমুনা তীরবর্তী চর এলাকায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বর্ষাকালে যেমন নৌকা ছাড়া চলে না আবার শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে চলতে হয়। এসময় পণ্য পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় চরবাসীর। চরের গরম বালির মধ্যে কোনো পণ্য নিয়ে চলা খুবই কঠিন কাজ।

এই পরিস্থিতিতে মরুর জাহাজ উটের মতো চরের জাহাজ হয়েছে ঘোড়া। চরের বালির ওপর দিয়ে এই ঘোড়া টেনে নিয়ে যায় বিশেষ ধরনের এক যান। যা দেখতে অনেকটা গরুর গাড়ির মতো। তবে ভিন্ন ধরনের যান। চরের মানুষ ঘন বালির ওপর দিয়ে সহজে হাঁটতে পারে না। গ্রীষ্মে তপ্ত ও শীতে বরফ। হেঁটে চলা খুবই কষ্ট। মানুষ দূরে থাক তপ্ত বালির ওপর দিয়ে গরু ও মহিষ গাড়ি টানাতে পারে না। এমন অবস্থায় ঘোড়ায় চালিত নতুন এক ধরনের গাড়ির প্রচলন হয়েছে। যা দেখতে টমটমও না আবার গরুর গাড়ির মতো নয়। এই গাড়ির সঙ্গে মোটরের টায়ারের চাকা যুক্ত করা হয়েছে। ঘোড়া তার শক্তিতে  চরের বালির ওপর দিয়ে পায়ের নিচে লাগানো বিশেষ প্রলেপে চলতে পারে। এমন যান নদী চরে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে। ভোগান্তি কমিয়েছে চরের মানুষের। এখন আর তাদের শীত-গ্রীষ্মে বালির ওপর দিয়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয় না। কৃষি কাজেও এই যান ব্যবহার করা হচ্ছে। দূরের হাটবাজারে পরিবহনের কষ্ট দূর হয়েছে।

বর্ষা মৌসুম শেষে অনেক চর জেগে থাকে। যমুনা তীরের সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার অন্তত ২০টি  ইউনিয়ন বালিয়াড়িতে ঢাকা পড়ে। এক সময় উত্পাদিত পণ্য বিপণনে হাটবাজারে নিয়ে যেতে পোহাতে হতো মহাদুর্ভোগ। অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ছিল কঠিন। গরুর গাড়ি গ্রামের সড়কে যতটা সহজে চলতে পারে চরের বালির ওপর দিয়ে সেভাবে যেতে পারে না। চরের ওপর দিয়ে এক ঘোড়া যে পরিমাণ বোঝা বহন করতে পারে এক জোড়া শক্তিশালী গরু তা পারে না। আবার ভুটভুটি, ট্রাক-বাস, রিকশা-ভ্যানও চলতে পারে না। যে কারণে চরের যোগাযোগে ঘোড়ার গাড়ি বড় ভূমিকা রাখছে। চরবাসী এখন বলে ঘোড়া এখন চরের জাহাজ।

কাজীপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া চরের আবুল হোসেন বলেন, ‘মোটরগাড়ির চাকা টায়ার, রিং আনুষঙ্গিক জিনিস ঠিকঠাক করে বাঁশ-কাঠের কাঠামোর সঙ্গে এঁটে দিয়ে ঘোড়ায় চালিত এই গাড়ি তৈরি করেন।’ পার্শ্ববর্তী জামালপুরের মাদারগঞ্জ হাট থেকে ঘোড়া কিনে আনেন। স্বচ্ছন্দে পরিবহন করেন যাত্রী ও উত্পাদিত পণ্য। অন্তত ১০ মণ করে পণ্য পরিবহন করা যায়। উত্পাদিত ফসল পরিবহন করে নিয়ে যান দূরের হাটবাজারে। ঘোড়াগাছা গ্রামের দুলাল মিয়া বললেন, তার ঘোড়ার গাড়ি এক চর থেকে আরেক চরে লোকজন নিয়ে যায়। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে চরের অনেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। দিনে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় করছে।

মনসুরনগর ইউনিয়নের চরছিন্না হোসেন আলী বললেন, ঘোড়াসহ তার গাড়ি তৈরিতে খরচ পড়েছে ৫৫ হাজার টাকা। শুষ্ক মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ির চাহিদা থাকলেও বর্ষার সময় তারা ঘোড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন। এসময় অনেকেই  ঘোড়ার খাবারের জোগান দিতে না পাড়ায় বাধ্য হয়ে ঘোড়া বিক্রি করে দেয়। আবার অনেকেই ঘোড়াগুলো রাখে শহরের কোনো র্যালি, কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে টমটম ভাড়া খাটানোর জন্য।