শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিপাকে পাবনার তাঁত কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীরা

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২১, ২১:৩৬

রুমী খোন্দকার, পাবনা প্রতিনিধি

করোনার কারণে গত দুই ঈদের পর দুর্গাপূজা এবং এবারের বৈশাখে মার্কেট বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে তাঁত শিল্প। এতে বিপাকে পড়েছেন পাবনার তাঁত কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, উত্পাদিত বস্ত্র বিক্রি করতে না পারায় তাঁত শিল্প এবং এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

তাঁত কারখানা মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শাড়ি ব্যবসার জন্য পয়লা বৈশাখ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা আর দুর্গাপূজা প্রধান মৌসুম। করোনার প্রথম ধাপে ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখে শাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। করোনার কারণে বিক্রি না হওয়ায় সেগুলো রাখা হয়েছিল মজুত করে। এবারও লকডাউনের কারণে বৈশাখী মেলা না হওয়ায় সেগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বৈশাখী কাপড় কেনার জন্য ব্যাপারীরা না আসায় এবারও কাপড়গুলো অবিক্রিত রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের পাবনার সাঁথিয়া বেসিক সেন্টারের লিয়াজোঁ অফিসার শ্রী জুয়েল চন্দ্র পাল বললেন, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে জালালপুর নতুনপাড়া, দোগাছি, মাসুমদিয়া, কুড়িপাড়া, গোপালপুর, একদন্ত, শিবপুর চাচকিয়া, আতাইকুলা, বনগ্রাম, হাতিগাড়া, হাটুরিয়া, জগন্নাথপুর, পেঁচাকোলা, রাকশা, বাটিয়াখরা, সোনাতলা, ছেচানিয়া, ডহরজানি, ডেমরা, নাগডেমরা, পার ফরিদপুর, বনওয়ারিনগর, আমিনপুরসহ বিভিন্ন এলাকা তাঁত শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখন হস্তচালিত তাঁত এবং বিদ্যুত্চালিত পাওয়ারলুমের সংখ্যা ৩২ হাজারের মতো। 

পাবনার বেড়া উপজেলার হাতিগাড়া গ্রামের নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন তাঁত মালিক জানান, পুঁজি হারিয়ে তাঁত বিক্রি করে দিয়ে গ্রাম ছেড়ে সাভারে চলে এসেছি। পোশাক কারখানায় কাজ করছি। সাঁথিয়ার তাঁত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হারেছ জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এ শিল্প টিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি তাঁতবাজার তৈরিতেও সরকারের ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা করেন তিনি।

শাহজাদপুর হাটের কাপড় ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান জানান, দূরের ব্যবসায়ীরা হাটে না আসায় বৈশাখী শাড়ি-লুঙ্গির বেচাকেনা নেই। বেড়া পৌর এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম জানান, গত কয়েক মাসে তেমন কোনো কাপড় বিক্রি হয়নি। উপরন্তু দোকানভাড়া, বিদ্যুিবলসহ বিভিন্ন খাতে খরচ বেড়েই গেছে। ভাবছি দোকান ছেড়ে দেব। তাঁত কারখানার মালিক গিয়াসউদ্দিন বলেন, তার ৪৯টি তাঁতের মধ্যে ৪৫টিই বন্ধ।

পাবনা জেলা তাঁতি সমবায় সমিতির সভাপতি কামরুল আনান রিপন জানান, করোনার শুরু থেকে অব্যাহত লোকসানের কারণে প্রায় ৭০ ভাগ তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মালিক, শ্রমিক ও কাপড় ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত দুই ঈদের পর দুর্গাপূজায় এবং এবারের বৈশাখেও ব্যবসা না হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মালিকরা। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এখন অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে বিদ্যুত্ বিল, ঋণের কিস্তি দিতে পারছেন না। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে সবাইকে পথে বসতে হবে।