শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও বটিয়াঘাটার সেবাদাসী বীরাঙ্গনা খেতাব পায়নি

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০১৯, ২১:৪৯

১৯৭১ সালের ১৯ মে বুধবার জ্যৈষ্ঠ মাসের সকালে পাক হানাদার ও রাজাকার বাহিনী গানবোট থেকে নামে উপজেলার ফুলতলা মঠ এলাকায়। তারা সংবাদ পায় বহু লোক দেশ ত্যাগের উদ্দেশ্যে বাদামতলা বাজারে জড়ো হয়েছে। হানাদার বাহিনী দেবীতলা গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া চরার খালের পাশ দিয়ে এগিয়ে যায়। এ সময় চরার খালের ভিতর একটি নৌকায় বৃদ্ধ মাদার চন্দ্র ঢালী অন্যান্যদের উঠিয়ে পালাবার চেষ্টা করছেন। তখন ষড়সী সুন্দরী গৃহবধূ সেবাদাসী বিশ্বাস দ্রুত দৌড়ে নৌকায় ওঠার চেষ্টা করলে এক খান সেনা তার দিকে রাইফেল তাক করে উঠতে বাধা দেয়। তারা সেবাদাসী এবং তার সঙ্গে থাকা স্বামী দেবীতলা গ্রামের প্রফুল্ল বিশ্বাসকে ধরে ফেলে। নৌকার উপরে মাদার চন্দ্র ঢালীর মাথায় গুলি করলে সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে। পরে সেবাদাসীকে পাশের একটি ফাঁকা ভিটার মধ্যে নিয়ে যায়। ভিটার চারিদিকে লতাপাতায় ঘেরা বাগান।

সেবাদাসী লজ্জা ভরা ছলছল চোখে জানান, একজন খান সেনা ওই ফাঁকা ভিটায় বাগানের মধ্যে তার মুখ চেপে ধরে সতিত্ব ছিনিয়ে নেয়। অন্যান্যরা একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে আমাকে ছেড়ে দেয়। এ দৃশ্য দেখে বাগানের মধ্যে পালিয়ে থাকা বিমল মণ্ডল দৌড়ে পালায়। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে একই গ্রামের যুবক নগেন্দ্রনাথ মণ্ডল বিলের মধ্যে বাগানের আড়ালে বসে প্রত্যক্ষ করেন।

নগেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, বিলের ভিতর এক বাগানের আড়ালে লুকিয়ে খান সেনাদের তাণ্ডবের সকল দৃশ্য তিনি দেখেন। সেদিনের গুলিতে ফুলতলা গ্রামের নীল কমল মণ্ডল, বসুরাবাদ গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথ তরফদার, বয়ারভাঙ্গা গ্রামের বলরাম মণ্ডল, দেবীতলা গ্রামের নিত্যানন্দ মণ্ডল, মাদার চন্দ্র ঢালী, উপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, কুঞ্জলাল মণ্ডল, নির্মল মণ্ডল, পার্বতী চরন মণ্ডল, মনোহর মণ্ডল, হূদয়নাথ মণ্ডলসহ আরও অজ্ঞাতনামা দু’জনসহ ১৪ জন নিহত হয়। আহত হয় দেবীতলা গ্রামের প্রেমলতা মণ্ডল স্বামী মৃত কালিপদ মণ্ডল, টুকু রানী রায় স্বামী কার্তিক রায় ও কার্তিক রায়ের কন্যা তৃপ্তি রানী রায়। পরে হানাদার এবং রাজাকার বাহিনী বাদামতলা বাজারে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে। তাদের গুলিতে সেখানে বহুলোক নিহত হয়।

বিধবা সেবাদাসী বলেন, গ্রামের বহু মানুষের তিরস্কার নিন্দা সহ্য করে আজো বেঁচে আছি। তবে বারবার চেষ্টা করেও আজো বীরাঙ্গনা হতে পারিনি। বহুবার বটিয়াঘাটা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডে আবেদন করেছি। কোনো ফল মেলেনি। জীবনবেলার শেষপ্রান্তে এসে সেবাদাসীর একান্ত ইচ্ছা বীরাঙ্গনা খেতাব নিয়ে যেন পৃথিবী ছাড়তে পারি। মৃত্যুর পর যেন সম্মানের সাথে শেষকৃত্ত সম্পন্ন হয়।