শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অযত্ন আর অবহেলায় পলাশের বধ্যভূমি

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০১৯, ২২:০১

পলাশ (নরসিংদী) সংবাদদাতা

স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো অযত্ন আর অবহেলায় রয়েছে পলাশের তিনটি বধ্যভূমি। দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান আর তাদের পরিবারের উন্নতি হলেও উন্নতি হয়নি ৭১-এর সময় হায়েনাদের হাতে নিহত বীর সেনাদের স্মৃতি চিহ্নগুলো। ১৯৭১-এ পাক-বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের কথা মনে হলে এখনো ভয়ে আঁতকে উঠে পলাশবাসী। স্বজন হারানোর বেদনায় এখনও ভারী হয়ে উঠে আকাশ-বাতাস। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছরেও সংরক্ষণ করা যায়নি নরসিংদীর পলাশের বধ্যভূমিগুলো।

১৯৭১ সালে পাক-বাহিনী কয়েকটি স্থানে ঘাঁটি স্থাপন করে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় সাধারণ মানুষ ধরে এনে নিমর্মভাবে হত্যা করে। তার মধ্যে পলাশে তিনটি স্থান বধ্যভূমিতে পরিণত হয়।

ঘোড়াশাল পৌর মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার ও পৌর কাউন্সিলর মো. রফিক ভুঁইয়া জানান, পলাশের ডাঙ্গা বাজারের পাশে নদীর পাড়ে ২২ জন, ঘোড়াশাল পৌর এলাকার আটিয়াগাঁও গ্রামে ১২ জনকে একসাথে গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু এই স্থানগুলো আজো সরকারিভাবে চিহ্নিত করা হয়নি।

পলাশের জিনারদী ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জামাল উদ্দিন সরকার জানান, জিনারদী ইউনিয়নের গয়েশপুর পদ্মলোচন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে পাক-হানাদার বাহিনী এ এলাকার আশ-পাশের গ্রাম থেকে শতাধিক সাধারণ মানুষকে ধরে এনে মাঠে দাঁড় করায়। পরে লাইন থেকে এক এক করে সাতজনকে গুলি করে হত্যা করে এখানেই মাটি চাপা দেয়। এদের মধ্যে চরনগরদীর মনির হোসেন নামে একজনকে আমি নিজে এখান থেকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে কবর দেই।

পলাশ উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোফাজ্জল হক মন্টু জানান, ২০১৭ সালে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গয়েশপুর বধ্যভূমিতে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান করেছিল। আর কখনো সরকারিভাবে কোনো অনুষ্ঠান করা হয়নি। আমরা চাই সরকারিভাবে যেন এসব জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করা হয়। বধ্যভূমিগুলো চরম অযত্ন আর অবহেলায় পরে থাকার ফলে বর্তমান প্রজন্মের কাছে অজানা থাকছে গণহত্যা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান।

৭১-এর বীর সেনাদের সেই গণকবরগুলো আজো অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও কোথাও সেই গণকবরগুলো চিহ্নিতই করা হয়নি। এতে নির্মমতার স্মৃতিচিহ্ন গায়েব হয়ে যাচ্ছে। গণহত্যার বীর সেনাদের স্বজনরা ও এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা এ সকল বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত ও সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।