বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

পিরোজপুরে বিদ্রোহী ও শরিকদের মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৯, ২২:৫১

৩১ মার্চ ৪র্থ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পিরোজপুর জেলায় আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় সকলেই চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন। ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় নৌকার প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় বাকি ছয়টি উপজেলার প্রার্থীরা দলীয় বিদ্রোহী এবং ১৪ দলের শরিকদের চাপের মুখে রয়েছেন। আবার মঠবাড়িয়া উপজেলার মতো বিদ্রোহী প্রার্থীর সহিংসতার কবলে পড়েও নাস্তানাবুদ হচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে পিরোজপুরের প্রতিটি উপজেলায় নৌকা মার্কার প্রার্থীদের সরব তত্পরতা শুরু হয়।

সদর উপজেলায় ক্ষমতাসীন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের জেলা যুগ্ম সম্পাদক মুজিবুর রহমান খালেক দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জোরেসোরে মাঠে রয়েছেন। তার বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল, মেঝো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেকসহ সরকারি দলের প্রায় সকলেই খালেকের সাথে রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তার অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ় বলে অবস্থাদৃষ্টে নিশ্চিত বলা যায়; কিন্তু সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মতিউর রহমান সরদার মাঠে থাকায় এ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে সাধারণ ভোটারদের এক ধরনের সমর্থন লক্ষ্য করা যায়। আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী ছাত্রলীগের সাবেক জেলা সভাপতি ও সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি-জিএস মাকসুদুল ইসলাম লিটন দলীয় তরুণ কর্মী-সমর্থকদের একাংশকে তার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পেরেছেন বলে তিনি দাবি করেন।

নাজিরপুর উপজেলায় নৌকা মার্কার প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রবীণ শিক্ষক অমূল্য রঞ্জন হালদারকে সরাসরি মোকাবিলা করতে হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে। অ্যাডভোকেট দ্বীপ্তিশ চন্দ্র হালদার বয়সে তরুণ হওয়ায় এ উপজেলায় দলীয় নেতা-কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে তার সাথে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এ উপজেলায় ভোটাররা এ নির্বাচনে পুরনো নেতৃত্ব নাকি বিকল্প নবীন নেতা খুঁজে নেবেন তা নিয়ে মাঠে রয়েছে না জল্পনা-কল্পনা। 

নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলায় নৌকার প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুইদুল ইসলাম মুহিদকে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিগত নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হক (হক হাজী) এবার আটঘাট বেঁধেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ উপজেলাটি একটি নদী দ্বারা বিভক্ত হওয়ায় নির্বাচনে আঞ্চলিকতার প্রভাব ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যা সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাঝেও বিদ্যমান।

কাউখালী উপজেলায় নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী রুহিয়া বেগম হাসি নির্বাচনী ফল তার পক্ষে নিতে সব ধরনের চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টি-জেপি মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করা আবু সাইদ মিয়া মনু সরাসরি নির্বাচনী যুদ্ধে যথেষ্ট শক্তিশালী। দলীয় প্রতীক সাইকেল নিয়ে তিনি সারা উপজেলায় ভোটারদের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ দুইজন চেয়ারম্যান প্রার্থীই ১৪ দলের শরিক হওয়ায় এ উপজেলার নির্বাচন নিয়ে রয়েছে ভোটারদের ব্যাপক উত্সাহ। 

ইন্দুরকানি উপজেলায় আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান ত্রিমুখী লড়াইয়ে অবতীর্ণ। জাতীয় পার্টি-জেপির সাইকেল মার্কার প্রার্থী মো. শাহীন হাওলাদার ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফায়জুল কবির তালুকদার শক্তিশালী প্রার্থী হওয়ায় নৌকার প্রার্থী বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন। ১৪ দলের দুই শরিক আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি-জেপির ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থী থাকায় এ উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে গভীর আগ্রহ।

জেলার দক্ষিণ প্রান্তের দূরবর্তী উপজেলা মঠবাড়িয়ায় যেকোনো নির্বাচন নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সব সময়ই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চলতি উপজেলা নির্বাচনে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থীসহ দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ২০ জন বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। শনিবার রাতে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী হোসাইন মোশাররফ সাকু বিদ্রোহী প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রিয়াজ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুর রহমানের ভাই। মঠবাড়িয়ায় দলীয় নেতা-কর্মী ও ভোটারদের মধ্যে আশরাফের প্রভাব বেশ। সব মিলিয়ে এখানে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ের আভাষ পাওয়া যায়।