শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কুয়াকাটায় হচ্ছে ২২ কিলোমিটার মেরিনড্রাইভ

আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৩৪

প্রকৃতির লীলাভূমি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সাগর সৈকতে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁসে নির্মিত হচ্ছে ২২ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ। একই সঙ্গে পুনরাকৃতিকরণ হচ্ছে ৩৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এ কাজ শেষ হলে বদলে যাবে কুয়াকাটা পর্যটন এলাকার দৃশ্যপট। সৈকতের দৃষ্টিনন্দন চেহারায় আকৃষ্ট হবে এখানে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা। এ ছাড়া, সাগরের অব্যাহত ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে কুয়াকাটা সৈকত। অপরদিকে, জানমাল রক্ষা পাবে বাঁধের অভ্যন্তরের মানুষের।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে চায়নার চংচিং ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন দুই বছর আগে ২০১৭ সালে এই বাঁধ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন শুরু করে। ইতোমধ্যে ৪৮ নম্বর পোল্ডারের মিরাবাড়ির দুটি, মাঝিবাড়ি ও খাজুরার এই ভাঙনকবলিত স্পটগুলোতে ভাঙনরোধের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকের কৃষিকাজের সুবিধার্থে এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনটি স্লুইস গেট মেরামত এবং আটটি স্লুইস গেট নতুন করে নির্মিত হবে। আশাখালী পয়েন্টের একটি স্লুইস গেট নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। শেষের পথে ফাঁসিপাড়া স্লুইসের নির্মাণ কাজ। বাকি তিনটির কাজ চলমান রয়েছে। আধুনিক পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তর ছাড়াও সাগর উপকূলের মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষাসহ কৃষিকাজের নিরাপত্তায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাজ সম্পন্ন হলে দীর্ঘ মেরিনড্রাইভ রোড দেখতে হবে দৃষ্টিনন্দন। অস্বাভাবিক জোয়ারের প্লাবন থেকে রক্ষা পাবে কুয়াকাটা পৌরশহরসহ গোটা পর্যটন এলাকা। শঙ্কা কেটে যাবে জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা থেকে। লগ্নিকারকসহ হোটেল-মোটেল মালিকদেরও কেটে যাবে বিনিয়োগ উত্কণ্ঠা। বদলে যাবে সৈকতের চেহারা।

প্রকল্পের পরামর্শক পাউবোর সাবেক প্রধান প্রকৌশলী দিদারুল আলম জানান, সাগরঘেঁষা লতাচাপলী ও ধুলাসার দুই ইউনিয়নসহ কুয়াকাটা পৌরএলাকার রক্ষাকবচ ৩৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আধুনিকভাবে বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধের মতো করে পুনর্নির্মাণ করা হবে। বাঁধটির সাগরঘেঁষা ২২ কিলোমিটার এলাকার টপ চওড়া হবে ছয় মিটার। রিভার সাইটের এক ফুট উঁচু করা হলে সাত ফুট থাকবে স্লোপ। কান্ট্রি সাইটের এক ফুট উচ্চতায় স্লোপ হবে দুই ফুট। এরমধ্যে হবে ২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, হবে মেরিনড্রাইভ রোড। যার উচ্চতা হবে সাড়ে ২৪ ফুট। এই অংশে দেওয়া হবে সিসি ব্লক। পর্যটকের বিশ্রামের জন্য এবং সাগরের দৃশ্য অবলোকনের জন্য নির্মাণ করা হবে বেঞ্চি। বাঁধটির আধুনিকায়নের মধ্যে টপে পর্যটকের ভ্রমণের জন্য ওয়াকিং জোন থাকছে। এক কথায় দীর্ঘ বাঁধটি হবে দৃষ্টিনন্দন। এ বাঁধটির বাকি অংশ যেভাবে আছে সেভাবেই পুনরাকৃতিকরণ করা হবে। ২০২১ সালে এ কাজটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে স্লুইসগুলো নির্মাণের কাজ চলছে। এর আগে বাঁধের দুই দিকের ঢালে গড়ে তোলা স্থাপনার মালিকসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা বসবাস করছিল তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের পরামর্শক আরো জানান, শুধু জলোচ্ছ্বাস ঠেকানো উদ্দেশ্য নয়। কুয়াকাটাকে পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয় করতে এবং মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় এমন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, সাগরের অব্যাহত তীব্র ভাঙনে সৈকতের বেলাভূমি ভাঙনের কবলে পড়ে। এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষায় পুরানো বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের চারটি স্পটে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। সাগর তীরবর্তী স্লোপসহ মূলবাঁধের টপ এক-তৃতীয়াংশ বিলীন হয় মাঝিবাড়ি ও মিরাবাড়ি স্পটের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে সিসি ব্লক দিয়ে ভাঙন রোধে প্রটেকশন দেওয়া হয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, এই কাজটি শেষ হলে কুয়াকাটার সকল মানুষ ও পর্যটকের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে। এ ছাড়া লগ্নিকারকরাও আগ্রহ পাবে বিনিয়োগে। কুয়াকাটার সৌন্দর্যও বাড়বে বহুগুণে।