মেহেরপুর প্রতিনিধি
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার তত্কালীন বৈদ্যনাথতলা বর্তমান মুজিবনগর আম্রকানন। যা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালে এখানেই বাংলাদেশের ১ম সরকারের শপথ ও অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করা।
৩৬ একর এই আম্রকাননের মালিক ছিলেন জমিদার বৈদ্যনাথবাবু। সে কারণেই এই স্থানটির নাম বৈদ্যনাথতলা হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৭১ সালে এখানে গাছের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৫০টি। স্মৃতিসৌধ, বিজিবি ক্যাম্প, গণপূর্ত রেস্ট হাউজসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে কাটা পড়ে সহস্রাধিক গাছ। পরবর্তীকালে বাগানটিতে ১ হাজার ১০৭টি গাছ ছিল। ওই গাছগুলোর মধ্যে পরিচর্যার অভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩৩টি গাছ মারা যায়। যেগুলো বেঁচে আছে তার মধ্যে অধিকাংশ গাছ অসুস্থ। এভাবে মরতে থাকলে আম্রকানন হুমকির মুখে পড়বে বলে অভিমত উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের। যত দ্রুত সম্ভব পরিচর্যা না করলে বাগানটি ক্রমান্বয়ে বিলীন হতে থাকবে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীরা বাগানের এই অবস্থা দেখে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। রাজশাহীর সাকলাইন ইশতিয়াক নামের এক দর্শনার্থী জানান, ঐতিহাসিক এই স্থানে আম বাগান হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় বিষয়। এই আম বাগানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্বাধীনতার গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস। অথচ স্বাধীনতার পাঁচ দশকেও এই বাগানটি অবহেলিত।
এদিকে প্রতিবছর এই বাগানের ফল বিক্রি করে জেলা প্রশাসন কয়েক লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব খাতে জমা করে। অথচ বাগানটি পরিচর্য়ার জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয় না। এলাকাবাসীর দাবি, শুধু ইতিহাস ঐতিহ্যের কারণেই নয় এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হলেও বাগানটিকে যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
উদ্ভিদ প্রযুক্তিবিদ ড. ফেরদৌসী বেগম রিনা জানান, ক্যান্সার বা গুলডিজিজ হপার নামক পোকার আক্রমণ আছে বাগানটিতে। ফলে অনেক গাছে গোলাকার ফোড়া আকৃতির যে গুল জন্মেছে সেগুলো মেশিন দিয়ে কেটে ফেলতে হবে। এই বাগানের ১২০ ফিট নিচে পানির অবস্থান। সে ক্ষেত্রে বাগানটিকে ভালো করে চাষ দিয়ে নিয়মিত সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। এসময় কিছু মেডিসিন ব্যবহার করলে গাছগুলোকে বাঁচানো সম্ভব হবে। তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে মুজিবনগর আম্রকাননে আমি তিনবার গিয়েছি। গাছগুলো সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে অবহিত করেছি। তিনি একটি কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে বলেছেন। সেটি নিয়ে কাজ করছি। দুই-একদিনের মধ্যেই সেটি জমা দেওয়া হবে।
মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বাগানের বর্তমান অবস্থা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানানো হয়েছে। তিনি অতি সত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে নিশ্চিত করেন। বর্তমানে ৩৩টি গাছ মৃত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন। —ইত্তেফাক