শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সৈয়দপুরে পচানালা খনন নিয়ে বিতর্ক

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৩৩

গাছ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর এই গাছ কাটতেই কি-না মরিয়া হয়ে উঠেছে সংস্কার কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা বাধ্যতামূলক গাছ কাটতে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মামলা ও জেল-জুলুমের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পচানালা এলাকায়।

জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের সোনাখুলি মৌজার নিম্নাঞ্চল একটি ডোবা থেকে সৈয়দপুরের পচানালার উত্পত্তি। জনশ্রুতি রয়েছে জমিদার পচা সরকার কৃষিতে সেচ কার্যে সুবিধার জন্য এটি প্রায় দেড়শত বছর পুর্বে খনন করেন। যা দশ ফুট গভীর ৮ ফুট চওড়া হয়ে ২১.৮৩ কিলোমিটার দক্ষিণে রংপুরের বদরগঞ্জের বারাতি নদীতে গিয়ে মিশেছে। এ নালাটির বাঁধ ও পতিত জমিতে সরকারের ঘোষণানুযায়ী স্থানীয় কৃষক ও সৈয়দপুর বন বিভাগ দুই ধারে ইউক্যালিপটাস, গড়াই, শিশু, মেহগনি, কদম, কড়াই, কাঁঠাল, আম, হরতকি, বহেরা, নারিকেল, খেজুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলজ ও ঔষধি মিলে প্রায় ৭০ হাজার গাছ রোপণ করেন। যা কয়েক যুগে বিশালাকৃতি ধারণ করেছে। এতে নালাটির ধারশক্ত হয়ে দীর্ঘকায় বনে পরিণত হয়েছে। বর্তমান তাপদাহে এ বনের গাছ-গাছালির শীতল ছায়া এলাকাবাসী ও পথচারীরা বিশ্রাম নেন। এ বনকে কেন্দ্র করেই সৈয়দপুর ওয়াপদা নামক এলাকায় পাতাকুড়ি নামে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বিনোদন পার্ক তৈরি হয়েছে। যেখানে প্রতিদিন শত শত দশনার্থী ভিড় করছে। এতে গাছগুলো ছায়া, ফল, ফুলসহ ঔষধি উপকরণ প্রদানে প্রতিনিয়ত মানুষের উপকার করছে।

এ নালাটি সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৬৪ জেলার অভ্যন্তর ছোট নদী খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে পুনঃখননের কাজ গত ২৭ মার্চ শুরু হয়। যা খননে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আর শুরুতেই স্কেভেটর লাগানোয় উভয় ধারের প্রায় ৫০ হাজার গাছের দীর্ঘ সারিগুলো বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে গাছ কাটতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দুই দিন মাইকিং করেন। এরপরেও গাছ মালিকরা অসম্মত হলে তাদেরকে বাড়িতে গিয়ে শাসিয়ে মামলার জড়ানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে ওই এলাকার গাছ মালিকরা আতঙ্কে দিন যাপন করছেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রূপান্তরের তদারকি কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম জানান, গাছ কাটার বিষয়ে কৃষকদের হুমকি ও মামলার বিষয়টি সত্য নয়।

পৌর মেয়র অধ্যক্ষ মো. আমজাদ হোসেন সরকার খননকৃত মাটি দিয়ে দুইপাশে রাস্তা তৈরি এবং গাছ রক্ষার জন্য ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান।

সোনাখুলি এলাকার মাটিকাটা শ্রমিকদের সর্দার আবুল হোসেন জানান, এ কাজে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক সিডিউল সময়ে কাজ করতে পারবে। এতে গাছগুলো রক্ষা পাবে। এতে দরিদ্র মানুষরা ভালই থাকত।

গাছ মালিক মুন্না, সফিয়ার রহমান ও জয়নাল আবেদীন জানান, সরকারের ঘোষণানুযায়ী পতিত জমিতে এ সকল গাছ কয়েক যুগ আগে লাগানো হয়েছে। দিন-রাত তাদের পরিচর্যার মাধ্যমে বড় হয়েছে। আজ হঠাত্ করেই সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো নোটিস ছাড়াই কাটতে বলছে। না কাটলে মামলায় জড়িয়ে জেল-জুলুম খাটাবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এখন আমরা কোথায় যাব।

মো. আওলাদ হোসেন খোকন নামে এক গাছ মালিক জানান, সরকারি নির্দেশনায় এ গাছ লাগানো হয়েছে। তারা বাধ্যতামূলকভাবে গাছ কাটতে বাড়িতে এসে হুমকি দিচ্ছে।

শফিকুল নামে এক কৃষক জানান, মানুষের দ্বারা খাল খনন করলে আমাদের গাছ রক্ষা পেত। রক্ষা পেত প্রকৃতি ও পরিবেশ। এ বিবেচনায় গাছ রক্ষায় স্থানীয় সকল সরকারি দপ্তরে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো সুরাহা পেলাম না। এ নিয়ে কৃষকসহ সকল গাছ মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সৈয়দপুর সামাজিক বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আহসান হাবিব জানান, পচানালার ডাঙ্গার হাট ব্রিজ পর্যন্ত আমাদের ১৪ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি, বনজ ও ফলজ গাছ রয়েছে। কোনো গাছ কেউ কাটতে পারবে না। এর জন্য অনেক প্রক্রিয়া রয়েছে।

সৈয়দপুর পানি উনয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শত ভাগ নীতিমালা মেনেই কাজ করা হচ্ছে। শ্রমিকদের স্বার্থ আর গাছ রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে উন্নয়নের স্বার্থে সকলের সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, কৃষকদের হুমকি ও মামলা দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।

পচানালা খননকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুপান্তরের তদারকি কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম জানান, গাছ কাটার জন্য কৃষকদের হুমকি ও মামলা করার বিষয়টি সত্য নয়।