বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামলেই পুলিশ ধরে!

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৩৪

রাজশাহীতে শুক্রবার গণশুনানিতে অংশ নিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর রাজশাহী জোন, বিআরটিএ রাজশাহী ও বিআরটিসি রাজশাহীর কার্যক্রম সম্পর্কে ভুক্তভোগীদের বিস্তর অভিযোগ শুনলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। এদিন সকাল ১০টায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর রাজশাহী জোন কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে সভাপতিত্বও করেন তিনি। এ সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) মো. এহছানে এলাহী এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাজশাহী জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে অংশ নিয়ে রাজশাহী ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আজকের এই শুনানিতে পুলিশের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলে অনেক ভালো হতো। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলেই পুলিশ ধরে এবং বলে কাগজ লাগবে না, যা দরকার সেটা দিয়ে যাও। এ কারণে ভুক্তভোগীরা আর গাড়ির কাগজপত্র করতে চান না। স্বচ্ছতার জন্য পুলিশের সঙ্গে বিআরটিএ’র সমন্বয় দাবি করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, সড়কে দুর্ঘটনার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নছিমন-করিমন দায়ী। অথচ এগুলোই সড়কে বীরদর্পে চলে। কিন্তু পুলিশ সেগুলো আটক করে না। পুলিশ শুধু ট্রাক আটকায়। বিআরটিএ নছিমন-করিমনের কাগজপত্র দেয় কি না জানা দরকার। তিনি ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের পরিবর্তে বিআরটিএ’র সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে গাড়ির কাগজপত্র সরবরাহ করার দাবি জানান।

রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল চৌধুরী জ্যোতি বলেন, রাজশাহীতে বিআরটিসির কিছু নেই। সেবা নিতে গিয়ে জনগণকে হয়রানির শিকার হতে হয়। বিআরটিসির সেবার বিষয়ে তিনি বিভাগীয় কমিশনার অফিসে অভিযোগ বাক্স স্থাপনের দাবি জানান।

পাবনার আব্দুল মতিন বলেন, পাবনায় সড়ক ও ড্রেন উন্নয়ন কাজে সমন্বয়ের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। এসব কাজ কবে শুরু ও শেষ হবে তারও নিশ্চয়তা প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে গোলচত্বর নির্মাণ করলে জনগণের চলাচলে সুবিধা ও দুর্ঘটনা কমে যায়। দিনের বেলা শহরে ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে হবে। আগে সড়ক নির্মাণের স্থায়িত্ব বেশি ছিল, এখন কেনো যেনো নির্মাণের পরই রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। তিনি বিআরটিএ অফিসের কার্যক্রম স্বচক্ষে দেখতে সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে গণশুনানির আয়োজকদের সরেজমিনে পরিদর্শনের অনুরোধ জানান।

একজন ঠিকাদার বলেন, আমরা সড়ক নির্মাণের জন্য এমন সময় কার্যাদেশ পাই, যখন প্রায় বর্ষা চলে আসে। ফলে একদিকে বৃষ্টি আর আরেক দিকে চলে সড়কের কাজ। কিন্তু বর্ষার আগেই কাজ শুরু করতে পারলে সড়কের কাজ যেমন ভালো হবে, তেমনি সড়কের স্থায়িত্বও বাড়বে বলে মতামত দেন।

আরেক ঠিকাদার ট্রাকে দ্বিগুণ-তিনগুণ পণ্য পরিবহনের অভিযোগ করে বলেন, ৪০ টনের ওজনের ট্রাক কীভাবে দেড় থেকে দুই ইঞ্চি পুরু ঢালাইয়ের সড়ক বহন করবে? শুনানিতে দীর্ঘদিন ধরে বিল না পাওয়া ঠিকাদার এবং বেতন না পাওয়া কর্মচারীরা তাদের পাওনা পরিশোধের জন্য সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।  

রাজশাহী চেম্বারের পরিচালক সাদরুল ইসলাম মহাসড়কের ওপর থেকে বড় বড় হাটবাজারগুলো পার্শ্ববর্তী এলাকায় সরিয়ে দুর্ঘটনা হ্রাসের এবং বিআরটিএ অফিসের জনবল বাড়ানোর পরামর্শ দেন। পরে সচিব মো. নজরুল ইসলামের নির্দেশে জনগণের অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজশাহী জোনের আওতাধীন রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন। তারা সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন। সচিব সড়ক উন্নয়ন কাজ যথাসময়ে শেষ করার এবং মন্থরগতির কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেন। এছাড়া নিরাপদ সড়কের জন্য সড়কের দুইধারে উপযুক্ত স্থানে পর্যাপ্ত সংখ্যক সাইন, সিগন্যাল, জেব্রাক্রসিংসহ অন্যান্য নির্দেশনামূলক চিহ্ন বসানোর উপর জোর দেন।

আরএমপির পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবিরকে উল্লেখিত অভিযোগ সম্পর্কে জানানো হলে তিনি বলেন, গণশুনানীর ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। সুতরাং এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।