বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চলছে ইরি-বোরো কাটার ধুম কোথাও ব্লাস্ট কোথাও চিটা!

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৪৪

উদ্বিগ্ন কৃষক

ইত্তেফাক ডেস্ক

চলছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। আগাম জাতের ইরি-বোরো ধান কাটার ধুম লেগেছে। কোথাও কোথাও আবার নেক ব্লাস্ট রোগে ধানে চিটা হওয়ায় চাষিরা চিন্তিত। আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:

নেত্রকোনায় আনন্দ নেই কৃষকের মনে

নেত্রকোনায় বোরো ধান কাটার ধুম পড়ে গেছে। যদিও হাওর উপজেলায় প্রায় তিন হাজার হেক্টরের মতো বোরো ধানে চিটা হয়েছে, তারপরও জেলায় বোরোর ফলন ভালো বলে কৃষি বিভাগ জানায়। যে পরিমাণ জমির ধান চিটা হয়েছে, সেই পরিমাণ জমি এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত আবাদ করা হয়েছিল। জেলার হাওর উপজেলাগুলোতে কোল্ড ইনজুরির কারণে বোরো জমির ধান চিটা হয়েছিল বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। এদিকে ধানের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় আনন্দ নেই কৃষকদের মনে।

নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান জানান, হাওর উপজেলা মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুরি এবং কলমাকান্দার আবাদি জমির মধ্যে ২,৫২০ হেক্টর জমির ধান চিটা হয়েছে। আগামীতে যাতে করে কৃষকরা অধিক লাভের জন্য আগাম ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ না করেন তার জন্য ইতোমধ্যে পরামর্শ দেওয়া  হয়েছে। এছাড়া তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।          

রাণীনগরে বাম্পার ফলনের আশা

নওগাঁর রাণীনগরের সোনালী মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে আগাম জাতের ইরি-বোরো ধান কাটার মৌসুম।

উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম, কাশিমপুর গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, বিগত সময়ের তুলনায় এবার ধানে পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ অনেক কম। ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে বিগত সময়ের তুলনায় উপজেলার কৃষকরা চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ধানের ফলন পাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ও প্রকৃতি ধানের পক্ষে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া যদি ধানের অনুকূলে থাকে এবং কৃষকরা ভালোভাবে ধানগুলো ঘরে তুলতে পারেন তাহলে সকল প্রকার ধানের প্রচুর ফলন হবে। আমরা বিঘাপ্রতি খাটো-১০ এর ফলন ২০-২২ মণ এবং জিরা ধানের ফলন বিঘাপ্রতি ২২-২৫ মণ হারে পাওয়ার আশা করছি।

ত্রিশালে ব্লাস্ট, দিশেহারা কৃষক

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বোরো ধানে নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধানে চিটা হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছলিমপুর, চিকনা মনোহর, চরপাড়া, পাঁচপাড়া, সতরপাড়া ও গোলাভিটা গ্রামের বোরো মৌসুমে চাষকৃত ব্রিধান-২৮, বিধান-২৯, ব্রিধান-৫৮ এবং ছক্কা জাতের হাইব্রিড ধানে নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ব্রিধান-২৮ জাতে এ রোগের আক্রমণে ক্ষতি হয়েছে বেশি।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শোয়েব আহমেদ জানান, উপজেলার সর্বত্র বোরো ধানে নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ নেই। তবে কোথাও কোথাও এ সমস্যা রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস মৌসুমের শুরু থেকে চাষিদের এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে আসছে।

কচুয়ায় ইরিতে নেক ব্লাস্ট, ধানে চিটা

চাঁদপুরের কচুয়ায় ইরি ধান ব্যাপকভাবে নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষেতে ধান মরে সাদা হয়ে শীষ ঝুলে আছে। ব্রি-২৮ ধান সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবিব ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ইরি ফসল নষ্ট হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ রোগ দমনে কৃষি বিভাগ প্রতিদিন মাঠে ময়দানে গিয়ে কাজ করছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা বীজ ১০ বছরের বেশি হলে এর বিশুদ্ধতা থাকে না। ব্রি-২৮ এর বীজের সময়কাল ১০ বছরের বেশি হওয়ায় এখন আর এ বীজ বিশুদ্ধ নয়। ফলে দিনে গরম-রাতে ঠান্ডা, কুয়াশা ও ঝড়ো হাওয়া ইত্যাদি কারণে ব্রি-২৮ ধান দ্রুত সময়ে নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ব্রি-২৮ ধান পরিহার করে ব্রি-৮১, ৮৮, ৭৪ এর ভিত্তি বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।