শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় হতাহতদের ৪৯ শিশু বেড়ে উঠছে অরকা হোমে

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৪৭

বিগত ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটেছিল ঢাকার সাভারস্থ রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনা। ভয়াবহ এ ট্র্যাজেডির ছয় বছর পূর্ণ হলো। ওই দুর্ঘটনায় হতাহত গার্মেন্টস শ্রমিকদের পরিবারের ৪৯ সন্তানের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার হোসেনপুরস্থ ‘অরকা হোম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও মাতৃস্নেহে বেড়ে উঠছে এসব শিশু। তাদের মধ্যে গাইবান্ধার ১০ জন, পাবনার সাতজন, জামালপুরের একজন, রংপুরের আটজন, সিরাজগঞ্জের দুইজন, দিনাজপুরের দুইজন ও সাভারে ১৯ জন। এর মধ্যে ২৯ জন ছেলে এবং ২০ জন মেয়ে। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন (ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন) এর সদস্যরা ২০১৪ সালে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে “অরকা হোম” নামের এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। অরকা হোমের মাঠেই রয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হোসেনপুর মুসলিম একাডেমি। এখানেই ওইসব সন্তানরা লেখাপড়া করে আসছে। তাদের জন্য মানসম্মত আবাসিক ব্যবস্থাসহ ক্যাডেট কোচিং, প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠগ্রহণ, বিনোদন, ক্রীড়া ও পাঠাগার রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির যাবতীয় সুবিধাসহ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী  সূর্য্যমুখী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে।

রানা প্লাজায় আহত শ্রীমতি গীতারানীর ছেলে শংকর কুমার রায়। তার পিতা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা গ্রামের স্বপন চন্দ্র রায়। অরকা হোমে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। সে জানায়, আমার মা রানা প্লাজার ৪র্থ তলার পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে মা। সরকারিভাবে ৩ লাখ টাকা সহযোগিতা পেয়েছিল। যা দিয়ে কোনোমতে চলছে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর সহযোগিতায় অরকা হোমে থেকে লেখাপড়া করছি। উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে প্রকৌশলী হতে চাই।

নিহত নার্গিস বেগমের ছেলে আল-আমিন মিয়া। পিতা গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কিশামত শেরপুর গ্রামের তোজাম্মেল হক তুহিন। অরকা হোমে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। সে জানায়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় মা মারা যাওয়ার পর এখানেই আমার ঠাঁই হয়েছে। সরকারিভাবে ৯ লাখ টাকা পেয়েছি। পিতা তুহিন মিয়া পেয়েছেন ৭ লাখ। বাবার টাকা বিভিন্ন কাজে বিনিয়োগ করে। আমার টাকা এখনো ব্যাংক থেকে উঠানো হয়নি। অরকা হোমের সহায়তায় লেখাপড়া করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

হোসেনপুর মুসলিম একাডেমি ও অরকা হোমের সভাপতি মো. জাহিদুল হক বলেন, রানা প্লাজার ট্র্যাজেডির হতাহত পরিবারের যেসকল সন্তান এখানে রয়েছে তাদের লেখাপড়া, থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ অরকা হোম থেকে বহন করা হচ্ছে। সেই সাথে বিজিএমইএ নামের সংগঠনটি প্রতি মাসে কিছুটা আর্থিক সহযোগিতা করে আসছে। গাইবান্ধা জেলাসহ বিভিন্ন জেলার হতাহতের ছেলেমেয়েরা এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এদের কারো বাবা, আবার কারো মা এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। এসব হতাহত পরিবারের সন্তানদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হবে। তিনি আরো বলেন, ওইসব সন্তানদের ব্যয়ভার বহনে আমরা সরকারি কোনো সহযোগিতা প্রত্যাশা করি না।