শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দিনাজপুরে ইটভাটায় পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন!

আপডেট : ১৫ মে ২০১৯, ২১:৫৩

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর

দিনাজপুরে ইটভাটার ধোঁয়ায় কৃষকের বিভিন্ন ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক। জেলার ৩ শতাধিক কৃষকের আশঙ্কা—যদি এসব ফসলের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া যায় তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদেরকে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে। তবে কৃষকদের ক্ষতির বিষয়গুলো নিয়ে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার আজিমপুর ইউনিয়নের রাজুরিয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বর্গাচাষি রয়েল ইসলাম বলেন, সাড়ে পাঁচ বিঘা জমি অন্যের কাছ থেকে এক বছরের জন্য বর্গা নিয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার টাকায়। সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করতে গিয়ে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। অন্যের কাছে দেনা করে এই খরচ করেছেন। সার ও কীটনাশকের দোকানেও বাকি পড়েছে। কিন্তু ভাটার প্রভাবে সাড়ে পাঁচ বিঘা জমির পুরো ধানক্ষেত নষ্ট হয়েছে, পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খাবেন কি, জমির মালিককেই কি দেবেন আর দেনা শোধই করবেন কি দিয়ে- এই চিন্তায়ই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

শুধু রয়েল ইসলামই নয়, ওই গ্রামের মমিনুল ইসলাম, আজগার আলী, লক্ষ্মী রায়সহ ২০ জনেরও বেশি কৃষক ঘরে ধান ও অন্যান্য ফসল তোলার পরিবর্তে এখন নিঃস্ব। বিরল উপজেলা ছাড়াও খানসামা, চিরিরবন্দর, সদর ও বীরগঞ্জ উপজেলায়ও ভাটার প্রভাবে নষ্ট হয়েছে ক্ষেতের ফসল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুটি ইটভাটার প্রভাবে পুরোপুরি ক্ষতি হয়েছে বিরলের রাজুরিয়া গ্রামে। এখানকার জেবিএম ব্রিক্স ও এস কে ব্রিক্স ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের কারণে ৪০ একরেরও বেশি জমির ফসল পুড়ে গেছে। দিনে দিনে আক্রান্ত ও ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।

এস কে ব্রিক্স-এর স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম কৃষকদের ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, স্থানীয়ভাবে আলোচনা চলছে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য।

এদিকে ইটভাটার প্রভাবে বেশি ক্ষতি হয়েছে খানসামার ভাবকী ইউনিয়নের কুমড়িয়া গ্রামে। সেখানকার এস এইচ এস এবং টু-স্টার নামে দুটি ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ওই এলাকার প্রায় ২শ একর জমির বোরো ধান, আম, কাঁঠাল, লিচুসহ পুড়ে গেছে বাঁশঝাড়। শুধু তাই নয়, বিষাক্ত গ্যাসে মারা গেছে খামারের ৪ শতাধিক মুরগি। ওই দুটি ইটভাটার প্রভাবে পার্শ্ববর্তী চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর এলাকারও প্রায় ২০ একর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে।

কুমড়িয়া আলমপাড়া এলাকার রবিউল ইসলাম জানান, তার প্রায় ৪৫ শতক জমিতে তিনি বোরো ধান রোপণ করেছেন। কিন্তু গত ১০ মে দেখেন গাছে আসা ধানগুলো সব পুড়ে গেছে।

খানসামার ভাবকী ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত ফসল পরিদর্শন করেছি। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও পরিদর্শন করেছেন। আমি চাই কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।

খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহমেদ মাহবুব-উল ইসলাম বলেন, ভাটার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। ভাটা মালিকদের সাথেও ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে আলোচনা চলছে।

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম জানান, ভাটার কারণে যেসব এলাকায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে সেসব এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। কৃষকরা যাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।