মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কমলগঞ্জের কালেঞ্জী পুঞ্জি

সমস্যায় জর্জরিত খাসিয়া সম্প্রদায়ের ১৯০ পরিবার

আপডেট : ১৯ মে ২০১৯, ২১:৪১

নূরুল মোহাইমীন, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা

সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৫শ ফুট উপরে পাহাড়ি টিলার স্তরে স্তরে টিন শেডের ঘরে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। আঁকাবাঁকা পথে ১৫২টি সিঁড়ি বেয়ে টিলার উপরে পুঞ্জির হেডম্যানসহ অন্যদের বাসায় পৌঁছতে হয়। কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে আদমপুর বনবিটের সংরক্ষিত বনে ১৯০টি পরিবার নিয়ে গড়ে উঠা কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি। তাদের আয়ের প্রধান উত্স জুমের খাসিয়া পান ও লেবু। তবে বিদ্যুতায়নের অভাব, যাতায়াতের দুরবস্থা, পানের জুম চাষে গবাদি পশুর বিচরণ ও পানের গোড়া পচা রোগ এসব নানা সমস্যায় জর্জরিত কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জির সদস্যরা।

সরেজমিনে কালেঞ্জি পুঞ্জি ঘুরে খাসিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের অভিযোগে জানা যায়, কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জির ৯০ পরিবারের দৈনন্দিন নানা সমস্যার কথা। প্রধান চারটি সমস্যাই পুঞ্জির মুখ্য সমস্যা। অনেক আগে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করে তার টানিয়ে রাখা হলেও কখন বিদ্যুত্ সরবরাহ করা হবে তার হিসেব নেই। রয়েছে পানীয় জলের সমস্যা।

পুঞ্জির নারী পুরুষ সদস্যরা টিলার নিচের কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে বালতি, কলসি ও হাঁড়িপাতিলে করে টিলার উপরে তুলে নিয়ে আসেন। বিদ্যুত্ সুবিধা প্রাপ্ত হলে বৈদ্যুতিক পাম্প বসিয়ে নিচ থেকে টিলার উপরে ঘরে ঘরে পানি তোলা যেত। খাসিয়া সদস্যদের আয়ের প্রধান উত্স পাহাড়ি টিলায় জুমের পান। খাসিয়া পান বৃহত্তর সিলেটের ভাটি অঞ্চল ও যুক্তরাজ্যে সরবরাহ করা হয়। এখন খাসিয়া পান ভালো দামে বিক্রি হলে পানের গোড়া পচা রোগের কারণে পান উত্পাদন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। আশপাশের গ্রামের মানুষের গবাদি পশু বিচরণে পান জুমে ক্ষতি বয়ে আনছে। এই জুমের ভিতরই এসব গরু থাকে একাধারে দীর্ঘদিন।

যাতায়াত ব্যবস্থার কারণেও কালেঞ্জী খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আদমপুর বাজার থেকে ৯ কিলোমিটার পূর্বে সংরক্ষিত বনের মাঝে কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি। ভাড়া করে সিএনজি অটোরিকশায় আসা যাওয়ায় চার থেকে ৫শ টাকা ভাড়া দিতে হয়। পুঞ্জির নারী সদস্য উত্পলা খাসিয়া বলেন, তাদের পুঞ্জির প্রায় ৫০ জন ছেলেমেয়ে বেশিরভাগ সময়ে পায়ে হেঁটে ৯ কিলোমিটার পার হয়ে আদমপুরে উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে হয়। পুঞ্জির ভিতরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও এই খাসিয়া ছাত্ররা ৮ম থেকে নবম শ্রেণিতে গিয়ে ঝরে পড়ছে। তবে যাদের সামর্থ্য ভালো তারা সিলেটে বিভিন্ন ছাত্রাবাসে রেখেও পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাতায়াতের দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে খাসিয়া পরিবারগুলো দৈনন্দিন হাটবাজারে ৯ কিলোমিটার দূরের আদমপুর বাজারে যেতে হয়।

পুঞ্জির হেডম্যান নাইট খেরাম কুবলাই বৈদ্যুতিক খুঁটি দেখিয়ে বলেন, কবে নাগাদ বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করে তার টানার পর এখানে বিদ্যুত্ সরবরাহ করা হবে তা কেউ জানেন না। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন এলে প্রার্থীরা এই পুঞ্জির সবার খোঁজখবর রাখেন। তবে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে ও বৈদ্যুতিক সংযোগ পেতে খাসিয়া পরিবারগুলোর দিকে কেউ এগিয়ে আসেন না।

আদমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, আদমপুর বনবিট অফিস থেকে তিন কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ হয়ে গেলে এই পুঞ্জির যাতায়াত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিষয়টি উপজেলা পরিষদের নজরে রয়েছে বলে তিনি জানান।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুত্ সমিতির কমলগঞ্জ আঞ্চলিক অফিসের ডিজিএম মোবারক হোসেন সরকার বলেন, সরকারের শতভাগ বিদ্যুত্ নিশ্চিতকরণের আওতায় কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জিসহ তার পাশের গ্রামে বিদ্যুতায়নের জন্য খুঁটি আনা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জিকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হবে।