শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

খুলনা অঞ্চলের ৯ পাটকলের কাছে পাওনা ৫৬০ কোটি টাকা!

আপডেট : ২২ মে ২০১৯, ২১:৫২

আর্থিক সংকটের কারণে বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না মিল কর্তৃপক্ষ

এনামুল হক, খুলনা অফিস

চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকল। সাতটি খাতে পাটকলগুলোর বকেয়া রয়েছে প্রায় ৫৬০ কোটি টাকা। আর্থিক সংকটের কারণে বিশাল অঙ্কের এই বকেয়া দেনা মিলগুলো পরিশোধ করতে পারছে না। মিল কর্তৃপক্ষ বলছেন, উত্পাদিত পণ্য সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন (বিজেএমসি) খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলে ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ক্রিসেন্ট জুট মিল, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, স্টার জুট মিল, ইস্টার্ন জুট মিল, আলিম জুট মিল, জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল। এসব পাটকলে স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন ৩০ হাজার ৫৮৩ জন। এসব শ্রমিকের ৯ থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি বাবদ বকেয়া রয়েছে ৪২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। শ্রমিকদের পাশাপাশি মিলগুলোর এক হাজার ১৮৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর গত চার মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে ১৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এছাড়া পাটকলগুলোতে প্রায় দেড়শ’ পাট সরবরাহকারীর পাওনার পরিমাণ ১৫৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বিদ্যুত্ বিল খাতে বকেয়া রয়েছে ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা, ভ্যাট ও ট্যাক্স খাতে বকেয়া রয়েছে ২১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বিভিন্ন সময়ে মিলে যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীদের পাওনা রয়েছে ২৪ কোটি টাকা। অন্যান্য বিভিন্ন খাতে বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে ৯টি পাটকলের দেনার পরিমাণ প্রায় ৫৬০ কোটি টাকা।

এদিকে, আর্থিক সংকটের কারণে মিলগুলো প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কিনতে পারছে না। চলতি অর্থবছরে কাঁচা পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৬ কুইন্টাল। এ পর্যন্ত কেনা হয়েছে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮৯৪ কুইন্টাল; যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৯ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছর শেষ হতে আর বাকি আছে মাত্র দেড়মাস। আর্থিক সংকটের কারণেই মূলত পাটকলগুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। সময়মতো বকেয়া মজুরি না পাওয়ায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গত ৫ মে ৯টি পাটকলের উত্পাদন বন্ধ করে দেয়। এখনো পাটকলগুলোর উত্পাদন বন্ধ রয়েছে। উত্পাদন বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ৯টি পাটকলে প্রায় এক কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।

এদিকে বকেয়া মজুরি প্রদান ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে পাটকল শ্রমিকরা বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের ব্যানারে প্রতিদিন খুলনা মহানগরীর নতুন রাস্তা মোড়, আটরা শিল্প এলাকা এবং যশোরের অভয়নগর উপজেলার রাজঘাট এলাকায় খুলনা-যশোর মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মুজিবর রহমান জানান, তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে মিলের কলোনিতে থাকেন। সপ্তাহে তার মজুরি দুই হাজার ২৬০ টাকা, কিন্তু সেই মজুরিও বাকি ১২ সপ্তাহ। দোকানি আর বাকি দিতে চাচ্ছে না। এখন অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন বলেন, বকেয়া মজুরি পরিশোধ এবং মজুরি কমিশন কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো.সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় উত্পাদিত পাটজাত পণ্য সময়মতো বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ৯টি পাটকলে বর্তমানে ৩২ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য মজুদ রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৩২৪ কোটি টাকা। সে কারণে মিলগুলোতে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি-বেতন পরিশোধ, কাঁচা পাট ক্রয় ও অন্যদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে উত্পাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারলে সংকট কিছুটা কাটানো সম্ভব হবে।