কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ধলাইর পার গ্রামের বর্গা চাষি জহুর মিয়ার চাষাবাদকৃত জমির ধান কেটে দিয়েছে কৃষক সমিতি ও শব্দকর ছাত্ররা। নিজের জমি না থাকায় তিনি জবলারপার গ্রামের প্রতাপ সিংহের ৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বোরো চাষাবাদ করেন। উত্পাদন ব্যয় আর টাকার অভাবে জমিতে ধান পাকার পরও তিনি কাটতে না পারায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে পাশে এসে ধান কেটে দিল কৃষক সমিতির কয়েকজন কৃষক ও শব্দকর ছাত্র পরিষদের কয়েকজন সদস্য। গতকাল রবিবার সকাল ১১টায় জবলারপার গ্রামে বেশ উত্সাহ উদ্দীনায় ৫ বিঘা জমির বোরো ধান কেটে দেন।
জানা যায়, জহুর মিয়ার নিজের জমি না থাকলেও দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তিনি জবলারপার গ্রামের প্রতাপ সিংহের জমিতে বর্গা হিসেবে চাষাবাদ করেন। জহুর মিয়া জানান, তিনি বর্গা চাষি হিসেবে চাষাবাদ করে জমির মালিককে খড়সহ উত্পাদিত ফসলের অর্ধেকের চেয়েও বেশি দেন। তবে এ বছর ধানের উত্পাদন ব্যয়ে আর ধানের বাজার নিম্ন থাকার কারণে তিনি অসুবিধায় পড়েন। ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষাবাদে তার ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ৬০ মণ ধানের অর্ধেক জমির মালিককে ৩০ মণ দেওয়ার পর অবশিষ্ট ৩০ মণ ধানের মণ প্রতি ৪৫০ টাকা করে বাজার মূল্যে লোকসান গুণতে হয়। ৩০ মণ ধান বিক্রি করে কোনোভাবেই তার খরচ উঠবে না। ধান কাটার শ্রমিককে দৈনিক খাওয়াসহ মজুরি দিতে হয় ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। তাই জমিতে ধান পাকার পরও তিনি কাটতে পারছিলেন না।
এ অবস্থায় কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষক সমিতি ও উপজেলা শব্দকর ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা কৃষকের জমির ধান কেটে দেন। জমির মালিক প্রতাপ সিংহ জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার জমিতে চুক্তি বর্গা হিসেবে জহুর মিয়া চাষাবাদ করেন। তবে এবার ধানের দাম কমে যাওয়ায় আর উত্পাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সব কৃষকদের মতো বর্গা চাষি জহুর মিয়াও সমস্যায় পড়েন।
সিপিবি কমলগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি আহমদ সিরাজ ও মৌলভীবাজার জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি জহর লাল দত্ত বলেন, একজন অসহায় বর্গা চাষির পাশে দাঁড়িয়ে জমির ধান কেটে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। এ কাজে ধান কাটার মজুরি ব্যয় থেকে বর্গা চাষিকে সাহায্য করা গেলে। কমলগঞ্জ উপজেলা শব্দকর ছাত্র পরিষদের সভাপতি সঞ্জিত শব্দকর বলেন, বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ভাবনায় তারা বর্গা চাষি জহুর মিয়ার ধান কেটে দিলেন।