বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তীব্র পানিসংকটে চলনবিল পিছিয়ে পড়েছে আমন চাষ

আপডেট : ১৭ জুন ২০১৯, ২১:৩২

হেলালুর রহমান, চাটমোহর (পাবনা) সংবাদদাতা

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বর্ষা শুরু হয় আষাঢ়ে। বৃষ্টি আর মাঠভরা পানি এটাই ছিলো চিরাচরিত রূপ। কালের আবর্তনে সেই রূপের বদল হয়েছে। তাই তো আষাঢ়ের শুরু হলেও বাংলাদেশের বৃহত্তর বিল চলনবিল পানিশূন্য। নেই কোনো বৃষ্টি। রবিবার ২ আষাঢ়ে চলনবিল অধ্যুষিত বিলগুলো ঘুরে দেখা গেল, কোথাও কোনো পানি নেই। বোরো ধান কাটার পর ফাঁকা মাঠ। বিচ্ছিন্ন কিছু জমিতে পাট ও আউশ আবাদ করা হয়েছে। বৃষ্টি বা পানির অভাবে সে ফসল বাড়ছে না। বিশাল চলনবিলের মাঠে মাঠে গরু চড়ছে। তবে গুমানী, চিকনাই আর বড়ালে সামান্য পানি এসেছে। এদিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অস্থির হয়ে পড়েছে। কোথাও যেন নেই স্বস্তির নিঃশ্বাস। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো গোটা চলনবিল এলাকায় একই অবস্থা বিরাজমান।

চাটমোহরের হান্ডিয়াল গ্রামের প্রবীণ কৃষক আকবর আলী বলেন, বদলে গেছে সবকিছুই। আগে বর্ষাকালের শুরুতেই চলনবিল জুড়ে নতুন পানির আগমন ঘটতো। আকাশ ভেঙে যেন বৃষ্টির পানি পড়তো। সে সময় কৃষক মাঠে গিয়ে খেয়া জালসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে নতুন পানিতে নানা প্রজাতির দেশি মাছ শিকার করতো। এখন পানিও নেই, মাছও নেই, বদলে গেছে সবই। চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান রশীদ হোসাইনী বলেন, বর্ষাকালে বৃষ্টি না থাকায় কৃষক আমনের আবাদ থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। পাট ও আউশ আবাদে প্রভাব পড়ছে। তবে মাত্র বর্ষাকাল শুরু হলো। বর্ষায় হয়তো বৃষ্টি হবে। তখন কৃষির জন্য উপকার হবে।

চলনবিল ও বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত চলনবিলের পানি সরবরাহের অন্যতম বড়াল নদে পানিপ্রবাহ ছিল। ১৯৮১ সালে রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা থেকে বড়ালের উত্সমুখে ও পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সীমান্ত এলাকা দহপাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দুটি জলকপাট নির্মাণ করে। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে নৌযান চলাচল ব্যাহত হতে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা তখন নদ পারাপারের জন্য সেতু তৈরির দাবি তোলেন। কিন্তু সেতু না করে বড়ালে চারটি আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে বড়ালে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড চলনবিলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বেশ কিছু জলকপাট নির্মাণ করায় চলনবিলে পানি প্রবেশের পথ বাধাগ্রস্ত হয়। দিনে দিনে দখল-দূষণে ২২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বড়াল পরিণত হয় মরা খালে। পানি না পেয়ে ব্যাহত হতে থাকে বিস্তীর্ণ চলনবিলের চাষাবাদ। ফলে ভরা বর্ষা মৌসুমেও চলনবিল পানিশূন্য।’