শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জৌলুস হারাচ্ছে মাঝিরঘাট

আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৯, ২১:১৯

পলি জমে ভরাট, সিঁড়ি ভাঙাচোরা

  মুহাম্মদ নিজামউদ্দিন, চট্টগ্রাম অফিস

বন্দর নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা মাঝিরঘাট জৌলুস হারাচ্ছে। আগের মতো জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামা নিয়ে ব্যস্ততা নেই বাণিজ্যিক ঘাটগুলোতে। আউটার থেকে আমদানি করা পণ্যের বেশিরভাগই নৌপথে পরিবহন হচ্ছে। কাজ কমে যাওয়ায় শ্রমিকরা পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। এদিকে ঘাটে কাঠের ও লোহার তৈরি সিঁড়িগুলো বেহাল। ভাঙাচোরা সিঁড়ি দিয়ে পণ্য ওঠানামার সময় শ্রমিকরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। কর্ণফুলি নদীর উত্তর তীরে সদরঘাট থেকে বাংলাবাজার পর্যন্ত আমদানি পণ্য খালাসের ১৭টি বাণিজ্যিক ঘাট রয়েছে। এসব ঘাটে প্রতিদিন টনে টনে পণ্য খালাস করা হচ্ছে। পণ্য খালাসের এই ঘাটকে কেন্দ্র করে মাঝিরঘাট এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাণিজ্যিক গুদাম ও আমদানিকারকদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করে গুদামে রাখা ও আবার গুদাম থেকে পণ্য গাড়িতে করে ডেলিভারি দেয়ার কারণে দিনেরাতে সরব থাকে মাঝিরঘাট এলাকা।

ঘাট শ্রমিকরা জানান, মাঝিরঘাটে আগের মতো ব্যস্ততা নেই। আগে চট্টগ্রাম ও দেশের অন্য অঞ্চলের আমদানিকারকরা পণ্য মাঝিরঘাটে খালাস করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুদামে মজুদ রাখতেন। এখন আমদানি করা পণ্যের সিংহভাগ আউটার থেকে খালাস হয়ে লাইটার জাহাজে করে নৌপথে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চলে যাচ্ছে। ফলে সীমিত পণ্য মাঝিরঘাট দিয়ে খালাস হচ্ছে। এরফলে অনেক ঘাট শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। কাজ কমে যাওয়ায় শ্রমিকরা পেশা পরিবর্তন করেছে। বর্তমানে প্রায় ৪ হাজারের মতো ঘাট শ্রমিক রয়েছে। চট্টগ্রাম ঘাট ও গুদাম শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক ইত্তেফাককে বলেন, ঘাটগুলোতে পণ্য খালাস কমে গেছে। ঘাটগুলোর সিঁড়ি ভাঙাচোরা হওয়ায় শ্রমিকরা হতাহত হচ্ছে। ঘাট এলাকা ভরাট হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের দীর্ঘ পথ পণ্য বহন করতে হচ্ছে। সেই অনুপাতে পারিশ্রমিক পাচ্ছে না তারা।’

চট্টগ্রামে আমদানি পণ্য মজুদের কয়েকশ বাণিজ্যিক গুদাম রয়েছে। চট্টগ্রাম গুদাম মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, মাঝিরঘাট দিয়ে পণ্য খালাস অনেক কমে গেছে। আগে ঘাটে লাইটার জাহাজ বার্থিং করার সুযোগ পেত না। সিরিয়াল নিতে ইজারাদারদের তোষামোদ করতে হত। এখন অধিকাংশ ঘাটে জাহাজ নেই। চট্টগ্রামের আমদানিকারকরাও সব পণ্য এখানে খালাস করছে না। কিছু চট্টগ্রামে আর কিছু ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ অন্য এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে।’

জানা যায়, বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে ইজারা নিয়ে ঘাটগুলো করা হয়েছে। এখানে ঘাটের মুখে যে জমির মালিক সে ঘাট ইজারা নিয়েছে। জমির মালিক না হলে ইজারা নেয়া যায় না। ফলে এক বছরের জন্য ঘাট ইজারা নিয়ে অনেক জমির মালিক নিজে ঘাট পরিচালনা করেন আবার অনেকেই দ্বিতীয় পক্ষকে ভাড়া দিয়ে দেন। আদম ঘাটের ইজারাদার সিদ্দিক আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, ঘাটগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ঘাটের মুখ থেকে প্রায় ৮০ ফুট দীর্ঘ সিঁড়ি নির্মাণ করতে হয়েছে। এতে কয়েক ভাগ করে লোহার পাটাতন দিয়ে সিঁড়ি করতে হয়েছে। এর ফলে লাভের মুখ দেখছি না। বন্দর কর্তৃপক্ষ ঘাট ইজারা দিয়ে রাজস্ব আদায় করলেও ঘাট এলাকায় ড্রেজিং করছে না। প্রতিদিন ঘাট দিয়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ টন পণ্য খালাস হচ্ছে। দুর্বল সিঁড়ির কারণে শ্রমিকরা হতাহত হচ্ছে। হতাহতদের আবার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।’

লাইটার জাহাজের সিরিয়াল দিয়ে থাকেন জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল। সংস্থার কর্মকর্তা আতাউল কবির ইত্তেফাককে বলেন, বাজেটে বাড়তি শুল্ক আরোপের পর থেকে পণ্য আমদানি কম হচ্ছে। ফলে আমাদের ২৫ শতাংশ পরিবহন কমে গেছে। আমাদের প্রায় ১২০০ লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। আমদানি কমে যাওয়ায় ৪৫০টি বেশি জাহাজ সিরিয়াল পাচ্ছে না। জাহাজ মালিকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আমদানি কমে যাওয়ায় ঘাটগুলোতে পণ্য খালাস কম হচ্ছে।            বর্তমানে আউটারে প্রায় ৩৫/৪০টি মাদার ভেসেল পণ্য নিয়ে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।’