শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সাড়ে তিন মাস ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ

আপডেট : ২১ জুলাই ২০১৯, ২১:১২

দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস ধরে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে দেশের একমাত্র পাথরখনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের পাথর উত্তোলন কার্যক্রম। পাথর উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে খনি কর্তৃপক্ষ দুষছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে, আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি দুষছে খনি কর্তৃপক্ষকে। গত তিন এপ্রিল থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন খনির প্রায় এক হাজার শ্রমিক। এদিকে মজুত প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় বন্ধের উপক্রম পাথর বিক্রি।

মধ্যপাড়া পাথরখনিতে বাণিজ্যিক উত্পাদন শুরু হয় ২০০৭ সালে। প্রথম অবস্থায় দৈনিক ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টন পাথর উত্তোলন হলেও পরে তা নেমে আসে মাত্র ৫০০ টনে। এমন অবস্থায় উত্পাদন বাড়াতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খনির উত্পাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম-জিটিসিকে। চুক্তি অনুযায়ী ১২টি নতুন স্টোভ (পাথর উত্তোলন ক্ষেত্র) নির্মাণের কথা।

জিটিসি ৯২ লাখ মেট্রিক টন পাথরের স্থলে এ পর্যন্ত উত্তোলন করেছে মাত্র ৩০ দশমিক ৭৬ লাখ মেট্রিক টন পাথর এবং ১২টি স্টোভের স্থলে নির্মাণ করেছে মাত্র ছয়টি স্টোভ। এরপর পাথর উত্তোলন যন্ত্র ক্রিপ্ট মোটর গিয়ারবক্সের পিনিয়াম নষ্টের কারণ দেখতে চলতি বছরের তিন এপ্রিল রাত থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রেখেছে চুক্তিবদ্ধ এই প্রতিষ্ঠানটি।

পাথর উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ থাকার ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসিকে দুষছেন মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল) কর্তৃপক্ষ। এমজিএমসিএল-এর মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আবু তালেব ফারাজী জানান, উত্পাদন শুরু করতে বার বার চিঠি দেওয়া হলেও জিটিসি কোনো জবাব দিচ্ছে না। উত্পাদন শুরুর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। তাই কবেনাগাদ খনির উত্পাদন শুরু হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এতে খনিটি লোকসানে পড়ছে এবং সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তিনি জানান, গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) খনির লোকসান ছিল ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। নতুন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির জন্য টেন্ডারের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

আবু তালেব ফারাজী দাবি করেন, জিটিসির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তা আগামী ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। তবে চুক্তি অনুযায়ী উত্পাদন করতে পারেনি জিটিসি। কাজ না করলে লিকুইডেটেড ডেমেজ এলডি ও নিরাপত্তার অর্থ কর্তন করা হবে।

এদিকে উত্পাদন বন্ধ থাকার ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম-জিটিসির কর্মকর্তারা দুষছেন খনি কর্তৃপক্ষকে। জিটিসির মহাব্যবস্থাপক জাবেদ সিদ্দিকী জানান, খনি কর্তৃপক্ষ বরাবরই পাথর উত্তোলনের ব্যাপারে তাদের অসহযোগিতা করে আসছে। পাথর উত্তোলন বৃদ্ধির ব্যাপারে অনেক প্রস্তাব দেওয়া হলেও খনি কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। সবশেষ পাথর উত্তোলন যন্ত্রের ক্রিপ্ট মোটর গিয়ারবক্সের পিনিয়াম নষ্টের কথা জানিয়ে পিনিয়াম আনার কথা বললেও খনি কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করছে না। এ কারণেই পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি। 

দীর্ঘদিন থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় সবচেয়ে কষ্টে পড়েছে খনির প্রায় এক হাজার শ্রমিক। কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

মধ্যপাড়া পাথর খনির শ্রমিক লীগের সভাপতি সাদেকুল ইসলাম জানান, খনির পাথর উত্তোলন কার্যক্রমের পাশাপাশি লোড-আনলোড, ট্রাক শ্রমিকসহ প্রায় তিন হাজার শ্রমিক খনি সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত। খনির পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় এই তিন হাজার শ্রমিক বর্তমানে বেকার হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের পরিবার পরিজনের স্বার্থে ও দেশের স্বার্থে তিনি দ্রুত পাথর উত্তোলন কার্যক্রম শুরুর দাবি জানান।

খনি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে খনিতে মজুত রয়েছে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭১১ মেট্রিক টন পাথর। আর প্রতি মাসে এখান থেকে বিক্রি হচ্ছে গড়ে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন পাথর। তবে এই পরিমাণ পাথর থাকলেও বিভিন্ন সাইজের চাহিদা অনুযায়ী পাথর পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।