শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

উপকূলে কেওড়ার বাম্পার ফলন

আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০১৯, ২১:১৯

কেওড়া টকজাতীয় ক্ষুদ্র ফলের গাছ দ্রুত বর্ধনশীল একটি উদ্ভিদ। এটির পাতা বানর ও হরিণের প্রধান খাদ্য। এর গড় উচ্চতা ২০ মিটার। এ গাছের পাতা চিকন, ফল আকারে ছোট ও গোলাকার। কেওড়া, সুন্দরী ও গোলপাতা সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান বৃক্ষ। সুন্দরবনে নদী ও খালের তীর এবং চরে এ গাছ বেশি জন্মায়। এর কাঠ দিয়ে ঘরের বেড়া, দরজা, জানালা তৈরি ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত হয়ে থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও ওষুধি গুণাগুণ রয়েছে। কেওড়া ফল রক্তে কোলেস্টেরল ও শরীরের চর্বি (ফ্যাট) কমায়। এতে কিছু এনজাইম আছে, যা শরীরের হজমশক্তি বাড়ায়। চুলকানি ও খোস-পাঁচড়ার রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি কমায়।

কেওড়াগাছ মূলত সুন্দরবন কেন্দ্রিক বৃক্ষ হলেও লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় উপকূলীয় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকার নদীর চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে অন্যান্য প্রজাতির গাছের সঙ্গে কেওড়াগাছের চারা লাগানো হয়। সুন্দরবন সংলগ্ন পাইকগাছা উপজেলার শিবসা, ভদ্রা, মিনহাজ, কড়ুলিয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রচুর পরিমাণে কেওড়াগাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।

বাতিখালী বনায়ন সমিতির জিএম এম আজাহারুল ইসলাম জানান, শিবসা নদীর চরে লাগানো কেওড়া গাছে এ বছর প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। কেওড়া ফল এলাকার মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি ফল। এর স্বাদ টক হওয়ায় অনেকেই বলে থাকেন কেওড়ার নাম শুনলে জিহ্বায় জল এসে যায়। চিংড়ি দিয়ে কেওড়ার টক রান্না (খাট্টা) খুব সুস্বাধু হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসার এ এইচ এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, কেওড়া উপকূলীয় অঞ্চলের অতিপরিচিত একটি ফল। ফলটির রয়েছে প্রচুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

পাইকগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. সাইফুল ইসলাম ও ডা. সুজন জানান, কেওড়া মানবদেহের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় একটি বুনো ফল। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। কেওড়া ফল রক্তে কোলেস্টেরল ও শরীরের চর্বি (ফ্যাট) কমায়। এতে কিছু এনজাইম আছে, যা শরীরের হজম শক্তি বাড়ায়। চুলকানি ও খোস-পাঁচড়ার রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি কমায়।

বনকর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় জানান, কেওড়া চাষ অত্যন্ত লাভজনক। এ গাছ দ্রুতবর্ধনশীল হওয়ায় ৩/৪ বছরের মধ্যে ফল ধরে এবং প্রথম বারই এক থেকে দুই মণ পর্যন্ত ফল হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে প্রতিবছর ফল বাড়তে থাকে। উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে চরভরাটি জমি রয়েছে। জোয়ার-ভাটা হয় এমন চরভরাটি জমিতে যদি বাণিজ্যিকভাবে কেওড়া চাষ করা হয় তাহলে একদিকে বাঁধ ও পরিবেশ এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণ করার পাশাপাশি এর কাঠ জ্বালানি ও ফল বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব।