শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বেনাপোল স্থলবন্দরের অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট অকেজো

আপডেট : ২০ আগস্ট ২০১৯, ২১:২০

দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরের অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট অকেজো হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের ভারী মালামাল খালাস প্রক্রিয়া। সময় মতো পণ্য খালাস করতে না পারায় বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ পণ্যজট। পণ্য লোড-আনলোডের অপেক্ষায় ভারত ও বাংলাদেশের ট্রাক বন্দরে দাঁড়িয়ে থাকছে দিনের পর দিন। লোড-আনলোডের অনুমতি মিললেও ক্রেন ও ফর্কলিফট বিকল থাকায় তা হচ্ছে না।

৬২ একর জমির ওপর বেনাপোল স্থলবন্দরের অবস্থান। ৩৬ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ বন্দরে প্রতি মাসে ৩ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি পণ্য ওঠানামা করে। দেশের সিংহভাগ শিল্প-কলকারখানা, গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ ও বিভিন্ন প্রকল্পের বেশির ভাগ মেশিনারিজ আমদানি হয় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। ক্রেন ও ফর্কলিফট ছাড়া এসব ভারী পণ্য বন্দরে আনলোড ও বন্দর থেকে খালাস করা সম্ভব নয়। ২০১০ সালের ২১ মার্চ বেনাপোল বন্দরের ভারী পণ্য লোড-আনলোডের জন্য বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঢাকা মহাখালীর মেসার্স এসআইএস (সীস) লজিস্টিক্যাল সিস্টেমের (জেভি) পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়। ২০১০ সালের ১ আগস্ট থেকে তারা বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পায়। বন্দরে সাতটি ফর্কলিফট ও পাঁচটি ক্রেন দিয়ে মালামাল লোড-আনলোডের কাজ শুরুর পর ঐ বছরের ১০ নভেম্বর আরো ছয়টি নতুন ফর্কলিফট নিয়ে আসে। কয়েক দিন কাজ করার পর এসব  ফর্কলিফট ও ক্রেন অকেজো হতে শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী পাঁচটি বিভিন্ন ধারণ ক্ষমতার ক্রেন ও ১১টি ফর্কলিফট দিয়ে কাজ করার কথা। কিন্তু দেখা যায় দীর্ঘ দিন ধরে এসব ক্রেন ও ফর্কলিফট অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এখানে প্রয়োজনের তুলনায় ক্রেন ও ফর্কলিফট না থাকায় বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মেসার্স এসআইএস (সীস) লজিস্টিক্যাল সিস্টেমের (জেভি) পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে হাইকোর্টে ইকুইপমেন্ট টেন্ডারের বিষয়ে মামলা থাকার কারণে এ কোম্পানি এখনো কাজ করে যাচ্ছে।

বেনাপোলের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন ও সাধারণ সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা জানান, বেনাপোল বন্দরে ক্রেন ও ফর্কলিফট প্রায় অচল থাকে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হলেও তারা কোনো গুরুত্ব দেন না। ক্রেন ও ফর্কলিফট না বাড়ালে এ বন্দর থেকে কোনো কিছু আশা করা যায় না। তাছাড়া বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে এসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান হবে না। ভাড়া করা যন্ত্রপাতিতে একটি বড়ো বন্দরের কার্যক্রম চলতে পারে না।

বেনাপোল বন্দরের ক্রেন ড্রাইভার ফারুক হোসেন জানান, ক্রেন খারাপ হলে আমাদের কিছু করার থাকে না। কারণ ক্রেন, ফর্কলিফটের পার্টস পাওয়া মুশকিল। ঢাকা থেকে নিয়ে আসতে হয়। অনেক সময় সেখানেও থাকে না। জাপান থেকে আমদানি করে নিয়ে আসা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

বেনাপোল বন্দরের মেসার্স এসআইএস (সীস) লজিস্টিক্যাল সিস্টেমস কোম্পানি লিমিটেডের ইঞ্জিনিয়ার মহিদুল ইসলাম জানান, এখানে পাঁচটি ক্রেন ও সাতটি ফর্কলিফট আছে। এখন দুটি ক্রেন ও চারটি ফর্কলিফট নষ্ট। এর পার্টস আমাদের দেশে পাওয়া যায় না। চলছে তো ভালো, একবার নষ্ট হলে সেটি  মেরামত করা সময়ের ব্যাপার। এতে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েন।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান, বন্দরে মালামাল লোড-আনলোডের জন্য ক্রেন, ফর্কলিফট প্রয়োজন। যা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তবে হাইকোর্টে ইকুইপমেন্ট টেন্ডারের বিষয়ে মামলা থাকায় এ কর্মকর্তা ক্রেন ও ফর্কলিফটের বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য দিতে রাজি হননি।