শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘ঠিকাদার নিয়োগসহ সব কার্যক্রম সম্পন্ন’

আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:১৬

লাঘাটার খনন শুরু অক্টোবরে

নূরুল মোহাইমীন, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা

ফি বছর ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের পতনঊষার, শমসেরনগর, মুন্সীবাজার ইউনিয়ন ও রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের কৃষকেরা। বোরো, আউশ, আমন, সবজিখেত হারিয়ে কৃষকেরা নিঃস্ব হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন ধরে এসব এলাকার কৃষকেরা নদীর বাঁধ মেরামত ও খননের দাবি জানিয়ে আসছেন। অবশেষে আগামী অক্টোবর মাসে লাঘাটা নদী খনন শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বছর লাঘাটা নদী খননের জন্য সার্ভে কাজ সম্পন্ন হলেও নানা জটিলতায় খননকাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ বছর শুষ্ক মৌসুমে আগামী অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে নদীর খনন ও সংস্কারকাজ শুরু হবে। ১১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়ন থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার লাঘাটা নদীর ২৪ কিলোমিটার খননকাজ হবে। এজন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ থেকে সব কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়েছে।

লাঘাটা নদীকে ঘিরে কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, আলীনগর, শমসেরনগর, পতনঊষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের একাংশ এবং রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের একাংশের কৃষকেরা কৃষি চাষাবাদ ও মাছ আহরণ করে থাকেন। কৃষি ও মাছ আহরণের মধ্য দিয়ে অসংখ্য পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তবে ফি বছর নদীভাঙন, পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ পতনঊষারের কেওলার হাওরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত লাঘাটা নদী। নদীটি রাজনগর উপজেলায় গিয়ে মনু নদীতে মিলিত হওয়ায় বন্যা ও জলাবদ্ধতার পানি মনু নদীতে গড়িয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে লাঘাটা নদী ভরাট, বেদখল, ঝোপজঙ্গলসহ বিভিন্ন কারণে নদী সংকোচিত হয়ে খালে পরিণত হয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন হতে দীর্ঘ সময় লাগে। এতে জলাবদ্ধতায় ধানী জমি ও সবজিখেত তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জে হাওর ও নদী রক্ষা আঞ্চলিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তোয়াবুর রহমান, মৌলভীবাজার কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতা রমজান আলী বলেন, নদী খনন ও সংস্কার আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। গত কয়েক বছরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও আমাদের পক্ষ থেকে ইউএনও, জেলা প্রশাসক ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর আমরা স্মারকলিপি প্রদান করেছি। তারা আরো বলেন, নদী খনন, সংস্কার ও ড্রেজিং না করার কারণে তলদেশ ভরাট হচ্ছে। ধলাই ও লাঘাটা নদীর প্রশস্ত ও গভীরতা কমে যাওয়া, দুই পাশে ঝোপ-জঙ্গল ও গাছগাছালিতে ভরপুর হয়ে ওঠা, বসতি স্থাপন এবং অসাধু মাছ শিকারি চক্রের স্থানে স্থানে ফেলা বাঁশের খাঁটি (বেড়া) ও বাঁধ দেওয়ার ফলে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিচ্ছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতায় নিম্নাঞ্চল এলাকার কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বলে তারা দাবি করেন।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, গত বছর থেকে সরকারি উদ্যোগে নদীর সার্ভে কাজ শুরু হয়। তবে লাঘাটা নদীতে একটি মহল মাছ শিকারের জন্য বাঁশের খাঁটি (বেড়া), বাঁধ দিয়ে প্রতিবন্ধকতাসহ নানা জটিলতায় শুষ্ক মৌসুম চলে যায়। আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যবর্তী সময়ে লাঘাটার খননকাজ শুরু হবে। এজন্য রাজনগর অংশে একজন ও কমলগঞ্জ অংশে অপর ঠিকাদার কাজ করবেন।