শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে ফের ভাঙন

আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:১২

বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন

অভিজিত্ ঘোষ, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা

ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে গেল বন্যার আগে ব্যাপক ভাঙনে শতশত পরিবার বসতবাড়ি হারিয়ে গৃহহীন হয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি আবার যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের পুরাতন জনপদে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদীপাড়ে বসবাসরত লোকজন। অন্যদিকে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে জানায় ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে জানা গেছে, গেল বন্যায় উপজেলার চারটি ইউনিয়নে যমুনা নদীর ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে গৃহহীন হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছে শতশত পরিবার। যমুনা নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও ক্রমাগতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে যমুনা নদী পূর্বদিকে ধাবিত হচ্ছে। এতে নদীর পশ্চিমপাড়ে বিশাল চর জেগে উঠলেও নদীর পূর্বপাড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়তই পূর্বপাড়ে অবস্থিত শতশত বছরের পুরাতন জনপথ ভেঙে যমুনা নদীতে বিলীন হচ্ছে। অব্যাহতভাবে ভাঙনের ফলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গ্রামের চার-তৃতীয়াংশ বসতভিটা ও ফসলিজমি। অন্যদিকে স্থানীয় প্রভাবশালী বালু খেকোরা ড্রেজার, বলগেটসহ বিভিন্ন যন্ত্র বসিয়ে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে দীর্ঘদিন যাবত্।

জানা গেছে, উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বাগবাড়ি হতে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব সেনানিবাস পর্যন্ত এলাকাজুড়ে প্রায় ১৮-২০টি অবৈধ বালুর ঘাট তৈরি করে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ক্ষমতাশালীরা বালু উত্তোলন ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বালু ট্রাকযোগে পরিবহন করছে। বঙ্গবন্ধু সেতু-ভূঞাপুর সড়কের পাশে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের একাধিক পুকুর ভরাট করে বালু পরিবহনের জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। আর এই রাস্তা তৈরিতে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছে স্থানীয় বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের বলে অভিযোগ করেছেন বালু ব্যবসায়ীরা।

এদিকে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়াসহ গাবসারা, নিকরাইল ও অর্জুনা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে। যদিও খানুরবাড়িতে বালুর পরিবর্তে মাটিভর্তি করে নিম্নমানের জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধে কাজ করছে টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ড। জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজে ক্ষমতাশীলরা জড়িত থাকায় স্থানীয়রা কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এছাড়া যেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ফেলানোর কাজ করছে সেখানেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা বলগেট মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এতে যেমন একদিকে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে অন্যদিকে বালু উত্তোলনের ফলে জিওব্যাগসহ ভেঙে যাচ্ছে যমুনা নদীর পাড়।

খানুরবাড়ি গ্রামের মহির উদ্দিন আকন্দ, আবুল হোসেন মিয়া, খালেদা বেওয়াসহ অনেকেই অভিযোগে করেন, যারা যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে তারা আওয়ামী লীগ করেন। তারা এলাকার প্রভাবশালী ও ভয়ংকর লোক। বাপদাদার ভিটেমাটি যমুনার গর্ভে চলে গেলেও এদের (ক্ষমতাশীল) বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। বললে লাশ হতে হবে। জীবনের মায়া সবারই আছে তাই কেউ এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবে না।

টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শামীম মিয়া বলেন, ভাঙনরোধে খানুরবাড়ি এলাকার যমুনা নদীতে জিওব্যাগ ফেলছি। অন্যদিকে বালু উত্তোলনের ফলে জিওব্যাগসহ নদীর পাড় ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। বালু উত্তোলনের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বালু উত্তোলনের মেশিন সেখান থেকে সরানো হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ জানান, যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন থেকে জিরোটলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। খানুরবাড়ি এলাকার যমুনা নদীতে বসানো বালু উত্তোলনের মেশিন সরানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেখানেই খবর পাই সেখানেই অভিযান পরিচালনা করা হয়। সম্প্রতি যমুনা নদীতে অভিযান চালিয়ে বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।