শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

লাউয়াছড়া স্লুইসগেট

সুবিধার বদলে অসুবিধার কারণ হওয়ার অভিযোগ

আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ২১:০৮

লাউয়াছড়ায় স্থাপিত স্লুইসগেটটি বর্তমানে স্থানীয় কৃষকদের জন্য সুবিধার বদলে অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্লুইসগেটের কারণে আট গ্রামের ৩০০ একর কৃষিজমি চাষের অনুপযোগী উল্লেখ করে স্লুইসগেটটি অপসারণে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় এলাকার শতাধিক কৃষক মিছিলযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ সংক্রান্ত ৬ দফা দাবিনামা স্মারকলিপি প্রদান করেন।

কমলগঞ্জ উপজেলার মণিপুরী অধ্যুষিত আদমপুর ইউনিয়নের নয়াপত্তন এলাকায় প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে ২০০৬ সালে স্লুইসগেটটি স্থাপিত হয়। আদমপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত নয়াপত্তন-কোনাগাঁও গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে স্লুইসগেটটি অবস্থিত। কৃষকদের অভিযোগে জানা যায়, কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে স্থাপিত স্লুইসগেটটি এখন কাল হয়ে দেখা দিয়েছে। গেট স্থাপনে ত্রুটির কারণে অল্প বৃষ্টিতেই পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি, ঝোপজঙ্গল, আবর্জনায় গেটের মুখটি বন্ধ হয়ে যায়। পানির স্রোত বাধাগ্রস্ত হয়ে স্লুইসগেটের সামনের দুর্বল অংশে ছড়ার বাঁধের প্রায় ২৫০ ফুট জায়গা ভাঙনের সৃষ্টি হয়। ফলে গোটা এলাকায় বন্যা দেখা দেয় এবং মাঝেরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ রাস্তা, স্কুলের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা রাস্তা দিয়ে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

কৃষক মন্তাজ আলী, বিশ্বজিত্ সিংহ, প্রাক্তন মেম্বার হাবিব আলী, রিয়াজ উদ্দীন, বদরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে নয়াপত্তন, কোনাগাঁও, ছনগাঁও, তেতইগাঁও, ঘোড়ামারা, বন্দরগাঁও, ভানুবিল ও হুমেরজান গ্রামে বসবাসরত কৃষকদের প্রায় ৩০০ একর কৃষিজমি বিনষ্ট হয়ে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। লাউয়াছড়ায় পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির উদ্যোগে গাইডওয়ালটিও দুই মাসের মাথায় নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। ফলে নয়াপত্তন ও কোনাগাঁও গ্রামের ফসলি জমির প্রায় ১৫০ একর পলিবালুতে ভরাট হয়ে গেছে। কৃষকরা আরো বলেন, অপরিকল্পিত স্লুইসগেটের কারণে আর্থিক দুর্যোগের মুখে তাদের শোচনীয় অবস্থা ধারণ করেছে। এর প্রতিকার হিসেবে ২৫০ ফুটের মতো পাহাড়ি ছড়ার বাঁধ নির্মাণ, অপরিকল্পিত স্লুইসগেট অপসারণ, নিরাপদ পানিপ্রবাহের জন্য নদী খনন, ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের রাস্তা-স্কুলমাঠ-ফিশারী নির্মাণে সরকারি সহযোগিতা প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান, ছড়ার ভাঙন এলাকার উভয় পার্শ্বে গাইডওয়াল নির্মাণ করার দাবি জানানো হয়।

কমলগঞ্জের বাসিন্দা ও জেলা কৃষক সমিতির সদস্য আহমদ সিরাজ বলেন, নয়াপত্তন এলাকায় লাউয়াছড়ার ভাঙনে শত শত কিয়ার কৃষিজমি বালু পড়ে নষ্ট হওয়া, স্লুইসগেটের অব্যবস্থাপনা ও অকেজো হওয়া ইত্যাদির প্রতিবিধান হিসেবে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও ফসলি জমি চাষ উপযোগী করাসহ স্লুইসগেটের অকার্যকারিতার তদন্তক্রমে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

লাউয়াছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি.-এর সভাপতি আব্দুল গফুর বলেন, পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হয়ে ছড়ার বাঁধ ভেঙে আটটি গ্রামের কৃষিজমি ও আলীনগর ইউনিয়নের হলদিয়ার হাওরের কৃষিজমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব সমস্যা নিয়ে সমিতির সভায় রেজ্যুলেশন করে ছড়ার নিম্নাঞ্চলসহ দুই কিলোমিটার খনন প্রস্তার করে উপজেলা এলজিইডি অফিসে দাবি জানানো হয়েছে।

আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, অপরিকল্পিত স্লুইসগেটের কারণে গোটা এলাকার কৃষকরা ভোগান্তির মধ্যে। তবে কৃষকদের এই সমস্যাটির সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।

এলজিইডি কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, স্লুইসগেটটি অনেক আগে কৃষকদের স্বার্থে স্থাপন করা হয়। তবে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়া, ছড়ার বাঁধ ভাঙার বিষয়ে গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে। এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক শতাধিক কৃষকের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে কৃষকদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে।