বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতলের বাড়ি!

আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ২১:১৪

হোমনা উপজেলা প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্লাস্টিকের নানা রঙের পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি জেনেছি। কিন্তু এ ধরনের বাড়ির স্থায়িত্ব কেমন হবে তা বলা যাচ্ছে না। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখে ও জেনে-শুনে তারপর বলা যাবে এমন বাড়ির স্থায়িত্ব কেমন হবে।’

মো. লুত্ফুর রহমান, কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লায় প্লাস্টিকের রং-বেরঙের পরিত্যক্ত বোতল (পানির খালি বোতল) দিয়ে পাঁচ কক্ষের নির্মাণাধীন বাড়ি সকলের নজর কেড়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে সড়কপথে ঐ এলাকা দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় উত্সুক লোকজন গাড়ি থামিয়ে বোতলে গড়া বাড়ির দেওয়াল হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেন। এ সময় কেউবা বাড়ির আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে সেলফি কিংবা ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দিচ্ছেন। ঐ বাড়িটি একনজর দেখার জন্য প্রতিদিন লোকজনের ভিড় জমে। জেলার হোমনা পৌরসভা এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লটিয়া গ্রামের বাসিন্দা পুলিশের কনস্টেবল মো. শফিকুল ইসলাম বাড়িটি নির্মাণ করছেন।

শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি গত আট বছর আগে সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে তিনতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি নির্মাণের খবর পত্রিকায় পড়েন। ঐ সময় থেকে এমন একটি বাড়ি নির্মাণের জন্য তার আগ্রহের সৃষ্টি হয়। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণের কলাকৌশল তার জানা ছিল না, তাই এতোদিন তিনি তা বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি। সেই সুপ্ত আগ্রহ থেকে এ বিষয়ে জানার জন্য প্রায় সময় তিনি ইউটিউব ঘেঁটে ও নানাভাবে কলাকৌশল জেনে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজগ্রামে রাস্তার পাশে দৃষ্টিনন্দন করে বাড়িটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পরিচিত আর্কিটেকচার ও নির্মাণ শ্রমিকদের পরামর্শ নিয়ে কুমিল্লা ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ভাঙারি দোকান থেকে বিভিন্ন সময়ে প্লাস্টিকের নানা রঙের ১ লাখ পরিত্যক্ত বোতল কিনে সংগ্রহ করেন এবং গত প্রায় চার মাস ধরে বাড়ি নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বোতলগুলোর ভেতরে বালু ভর্তি করে মাটির নিচ থেকে আড়াই ফুটের বেশি ভিত তৈরি করে তারপর দেওয়ালে গাঁথুনি দিয়েছেন। এরই মধ্যে পাঁচটি কক্ষের ঐ বাড়ির সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এজন্য ছোটো-বড়ো অন্তত ৮০ হাজার বোতল লেগেছে। বাকি কাজের জন্য তিনি বাড়ির উঠানে আরো ২০ হাজার বোতল সংরক্ষণে রেখেছেন। শফিকুল ইসলাম আরো জানান, এখন ছাদ ঢালাই করা হবে, বাকি কাজ শেষ হয়েছে। ছাদ দেওয়ার পরে বাড়িটির পরিপূর্ণ সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। এ ধরনের বাড়ির বিশেষত্ব হচ্ছে—ভূমিকম্পে বাড়ির তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। অগ্নিকাণ্ডেও প্লাস্টিকের বোতলের ভেতরে বালু থাকায় আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে না। এছাড়াও বোতলে বালু থাকার কারণে গরমের সময় ঘরের ভেতরটা ঠান্ডা থাকবে এবং শীতের সময় উষ্ণ থাকবে। তিনি বলেন, রড ও ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পাকা বাড়ির খরচের চেয়ে প্লাস্টিকের বোতলের বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে খরচ অন্তত ৩০ ভাগ কম হবে। এদিকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে এতো সুন্দর করে মজবুত ও দর্শনীয় কারুকার্যের বাড়ি নির্মাণ করা যায় তা ভেবেই অবাক হচ্ছেন উত্সুক লোকজন ও পথচারীরা। তারা বাড়ির নির্মাতা শফিকুল ইসলামকে কৌতূহল থেকে এ বিষয়ে নানান প্রশ্ন করেন। এতে উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনিও হাসিমুখে এসব প্রশ্নের উত্তর দেন। স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘উচ্ছিষ্ট, পরিত্যক্ত কিংবা ফেলনা (অকেজো) বলে কোনো বস্তু নেই, আমাদের শফিক তার মেধামনন ও সদিচ্ছা কাজে লাগিয়ে তাই প্রমাণ করেছেন। রকমারি প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে নির্মাণাধীন বাড়িটি দেখার জন্য পথচারী ছাড়াও প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে উত্সুক মানুষজন আসছেন। এতে আমরাও অনেক আনন্দ পাচ্ছি, ভালো লাগছে।’

হোমনা উপজেলা প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্লাস্টিকের নানা রঙের পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি জেনেছি। কিন্তু এ ধরনের বাড়ির স্থায়িত্ব কেমন হবে তা বলা যাচ্ছে না। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখে ও জেনে-শুনে তারপর বলা যাবে এমন বাড়ির স্থায়িত্ব কেমন হবে।’