শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নিকলীর হাওরে শামুক নিধন নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য

আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ২১:১৩

কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওরগুলোতে অবাধে শামুক ধরা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। এদিকে মত্স্য সংরক্ষণ আইনে শামুক নিধন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু উল্লেখ না থাকায় মত্স্য অধিদপ্তরও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

মত্স্য অধিদপ্তরের নিকলী উপজেলার মত্স্য কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘শামুক হাওরাঞ্চলের জলজ প্রাণীর জীবনচক্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। শামুক এভাবে আহরণ করা হলে হাওরের জীববৈচিত্র্য পুরোপুরি নষ্ট হবে। শামুকের প্রজননক্ষমতাও নষ্ট হবে। অনেক শামুক আছে, যেগুলো মাছের জন্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খায়। আবার মাছও শামুক খায়। শামুকের সংকট দেখা দিলে মাছেরও আকাল তীব্র হবে। এ ব্যাপারে হাওরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’

নিকলী সদর, দামপাড়া, কারপাশা, সিংপুর, জারুইতলা, গুরুই ও ছাতিরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওরে শামুক নিধন ও বিক্রি চলছে। হাঁসের খামার ও মত্স্য খামারের জন্য হাওরের শামুকের কদর রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

গত প্রায় তিন সপ্তাহে নিকলীর কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ‘ভাসান পানির’ মৌসুম থাকায় হাওর এলাকা অনেকটা সুনসান। মাছ ধরার জন্য নির্ধারিত জলমহালগুলোতে মত্স্যজীবীদের একটি অংশ শামুক ধরছে।

নিকলী উপজেলার হাওরগুলো থেকে শামুক ধরে সেগুলো বস্তাবন্দি ও নৌকায় করে হাঁসের খামার ও মত্স্য খামারের জন্য রাখা হচ্ছে। নদী থেকেই নিজস্ব নৌকা দিয়ে শামুক গন্তব্যস্থানে পাঠানো হয়। এ সময় নদীর পাড়ে ১০-১২টি নৌকায় শামুক দেখা যায়। প্রতিটি নৌকায় প্রায় ১৫-২০ মণের মতো শামুক রয়েছে বলে জানা যায়। যেসব হাওর এলাকার সঙ্গে নিকলীর সঙ্গে নৌকায় ও সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে, সেখান থেকে এভাবে শামুক নেওয়া হচ্ছে।

নিকলীর বড়ো হাওর, সোয়াইজনী নদী, করগাঁও খাল, পুড্ডার হাওর, কুর্শা হাওর, মহরকোনা হাওর, সিংপুর হাওর, নরসুন্দা নদী, এলাকা থেকে জেলেরা হর-হরি জাল দিয়ে শামুক সংগ্রহ করে। শামুক নিধন করে সেগুলো নিকলীতে প্রায় দুই শতাধিক হাঁসের খামারে যোগান দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শামুক নিধনকারী বলেন, ‘হাঁসের খামার ও মাছের খামারের মালিকদের কাছে তারা প্রতি বস্তা ২৫০-৩০০ টাকা দরে হাওরের শামুক বিক্রি করেন।’

নিকলীর কুর্শা ও পুড্ডা হাওরে প্রায় দুই মাস ধরে নৌকা দিয়ে শামুক আহরণ করছে কয়েকজনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। তারা নিজেদের শ্রমিক পরিচয় দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।