শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভ্রমণ

সুলু সাগরের সান্দাকানে

আপডেট : ৩১ মে ২০১৯, ২৩:৪৬

মেঘের ভেতর সেঁধিয়ে গেল বিশাল বপুর বাসটা। দু পাশের পাহাড়ের সারি হারিয়ে গেল তুলোর মতো মেঘের আড়ালে। গত মাসে চাঁদের গাড়িতে থানচি-আলীকদম সড়ক পাড়ি দেওয়ার কথা মনে পড়ল। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু ওই রাস্তাটার উচ্চতা ছিল প্রায় দুই হাজার ৮০০ ফুট। এ রাস্তার উচ্চতা তার প্রায় দ্বিগুণ।

অলটিমিটারে রিডিং ঠেকেছে ৫ হাজার ৪৩৬ ফুটে। এত উঁচুতে কেমন অনায়াসে মেঘ ফুঁড়ে এগিয়ে যাচ্ছে স্ক্যানিয়ার চাকা! প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি, মালবাহী ট্রাক, এমনকি মোটরসাইকেলও চলছে। মাউন্টেন বাইকে পেডেল চেপে পাহাড় পাড়ি দিচ্ছে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা।

আকাশছোঁয়া চূড়াগুলোকে জড়িয়ে রেখেছে কুয়াশার মতো মেঘ। উপত্যকার সবুজ ঢাকা পড়েছে মেঘের চাদরে। রাস্তার ওপরেও ভেসে আছে মেঘের ভেলা। গাড়িগুলোকে তাই ফগ লাইট জ্বালাতে হয়েছে। এর ভেতরেই গাড়িতে ঝোলানো স্ক্রিন কাঁপাচ্ছে জ্যাকি চান। মঙ্গোলিয়ার মরুভূমিতে বিশাল বপু এক পালোয়ানের সামনে পড়েছে। এ পথের নিয়মিত যাত্রীরা তাতেই মত্ত। পাশের ভারতীয় ইলেকট্রিশিয়ান অনবরত বাটন টিপছে মোবাইলে। গোটা বাসে কেবল এক ইউরোপীয় যুবক জানালার কাচ গলে পাহাড়, আকাশ, মেঘের কুয়াশা দেখছে গভীর মনোযোগে।

১৩ হাজার ফুট উঁচু কিনাবালু পাহাড় ছুঁয়ে এগিয়ে চলল গাড়ি। খানিক পর পাতলা হতে শুরু করল মেঘের ভেলা। হুট করে সূর্যটা উদয় হলো পশ্চিম পাহাড়ের মাথায়। যেন সুইস টিপে জ্বালিয়ে দিল কেউ। মেঘ ধোঁয়া ট্রান্স বোর্নিও এক্সপ্রেসওয়েতে তারই ঝিলিক।

এ রাস্তার দৈর্ঘ্য ১২৩৬ কিলোমিটার। জন্ম বোর্নিওর পশ্চিমপ্রান্ত সারাওয়াকের কুচিং শহরে। সেখান থেকে ব্রুনাই পেরিয়ে ঢুকে পড়েছে সাবাহর রাজধানী কোটা কিনাবালুতে। তারপর কিনাবালু পাহাড় পেরিয়ে সান্দাকান হয়ে এগিয়েছে ইন্দোনেশিয়া সীমান্তের শহর সেমপরনার দিকে।

পাহাড়ের পাশে পাশে ঝুলেই এগিয়েছে রাস্তাটা। যেখানে জায়গা কম সেখানে পাহাড় না কেটে গড়া হয়েছে কংক্রিটের সেতু। লোহার জালে পাথর ভরে বসিয়ে রাখা হয়েছে পাহাড়ের গায়ে। প্লাস্টিকের মোড়কে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পাহাড়ি বন ছুঁয়ে এগিয়ে যাওয়া ইলেকট্রিক লাইন।

বোর্নিওর চায়ের রাজ্যখ্যাত রানাও এলাকা পাশ কাটাল স্ক্যানিয়া। পাহাড়ের শরীরে ঝুলে থাকা বৃক্ষলতার মধ্যে সেগুনগাছের সারি আবারো স্মৃতির পাতায় ফিরিয়ে আনল বান্দরবানের পাহাড়গুলোকে। তবে এখানকার পাহাড়গুলোতে জুম চাষের চিহ্নও নেই। জনবসতির ঘনত্বও কম। মাঝেমধ্যে দূরে দূরে পাহাড়ি গ্রাম চোখে পড়ে। ওসব গ্রাম লাগোয়া পাহাড়ে হিমালয়ের মতো ধাপ পদ্ধতির চাষাবাদ। এ পাহাড়ের কলাগাছগুলো বেশ ছোটই বটে। বাঁশগুলোতে পাতা কম। তবে আকাশছোঁয়া রেইনট্রি-এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সটান উঠে গেছে আকাশ পানে। বাংলাদেশের পাহাড়ি পথের পাশে দেখা ঝাড়ু ফুলের গাছ চোখে পড়ল এখানেও। রক্তজবা অবশ্য দেখা গেল না, তবে ছোট ছোট নীল আর গোলাপি ফুল নয়ন জুড়িয়ে দিল।

হাইওয়ের পাশের রেস্তোরাঁয় গলাকাটা দাম হাঁকল না কেউ। রাজধানী শহরের মতো এক রিঙ্গিতই থাকল আধা লিটার পানির দাম। 

ঘণ্টা দেড়েক পর শেষ হলো পাহাড়ের সঙ্গ। তবে সমতল ভূমিতে নামতেই শুরু হলো আর এক বিস্ময়! দুপাশে মাইলের পর মাইল বিস্তৃত পাম বন। তার ওপরে ঝুলে আছে গোধূলির আকাশ। বাস ছুটছে তো ছুটছেই। এ ছোটার বুঝি শেষ নেই। একসময় তো মনে হলো, পাম বন ছাড়া আর কিছুই নেই এদেশে।

টানা ঘণ্টা দেড়েক ছোটার পর শেষ হলো পাম বন। ততক্ষণে সাঁঝ নেমেছে। বনের পাশে ফুটতে শুরু করেছে একটা দুটা আলো জ্বলা বাড়ি, ফার্ম হাউস। সামনে সাবাহ রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সান্দাকান।

 

দুই

সহযাত্রী নবীন পাটনের টানা ঘুম শেষ হয়েছে। উড়িষ্যার এই যুবক একটা পাইভেট বিদ্যুত্ কোম্পানির ট্রান্সমিশনকর্মী। যাচ্ছেন নতুন কর্মস্থল সান্দাকানে। স্বাভাবিকের চেয়ে ঢের বড় তার সঙ্গের লাগেজটা। ওটাকে বক্সে ঢোকাতে গলদঘর্ম সুপারভাইজর খানিক ধাতানিই দিয়েছিল বেচারাকে। তখন থেকেই মুখ গোমড়া ছিল তার। মন খারাপ দেখে যাত্রাবিরতিতে যেচেই একটা বার্গার আর লাল চা সেধেছিলাম নবীনকে। চায়ে চুমুক দিতে দিতে নবীন জানিয়েছিলেন, এবার দেশে গেলে বিয়ে হবে তার। হবু বউ ভুবনেশ্বরের একটা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কর্মী। যেমন রূপবতী, তেমনই গুণবতী। গাড়িতে ফেরার পর হবু বউ-এর গল্প করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন নবীন। সান্দাকান টার্মিনালে ঢোকার খানিক আগে ঘুম ভাঙল তার।

এমনিতেই বাসটা আধাঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। বছরের এ সময়টায় পর্যটক কম থাকে বলে দূরপাল্লার বাসের ট্রিপ সংখ্যা কমে যায় সাবাহতে। তুঙ মা এক্সপ্রেসের আজকের একমাত্র বাসটা ছেড়েছে বেলা ১টায়। সান্দাকান টার্মিনালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তাই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বেজে গেল। টাউন সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে সেই ছ টাতেই। ট্যাক্সিস্ট্যান্ডটাও খাঁ খাঁ করছে। 

এবার কিন্তু ভালোই খেল দেখালেন নবীন! তাঁকে নিতে আসা প্রুটন গাড়িটায় চড়ে হুঁশ করে টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমার গন্তব্য সান্দাকান শহরেই যাবেন তিনি। এখান থেকে চার কিলোমিটার দূরে। 

নিজেকে এবার বড় অসহায় মনে । অস্থির মনে টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে সামনের যাত্রী ছাউনিটায় এসে বসলাম। পাশেই পাইপ ফুঁকছেন এক মধ্যবয়সী মালয়। একটা পা পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ড ভ্যানের পাদানিতে। সান্দাকানের মানুষ যে কত অতিথিপরায়ণ তার যেন জলজ্যান্ত মূর্তি হয়ে উদয় হলেন তিনি।

পরিচয় পর্ব সেরে নিজেই ট্যাক্সি খুঁজলেন এদিক ওদিক। আজ আর দূরপাল্লার গাড়ি আসবে না বলে অপেক্ষারত ট্যাক্সিগুলো এরই মধ্যে চম্পট দিয়েছে। অগত্যা গাড়ির পেছনের দরোজা খুলে উঠতে বললেন দরাজ মালয়ী। সামনে তার পাশের সিটে তারই ছয় বছরের ছেলে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে।

এমনিতেই এ শহরে মানুষ কম। তার ওপর রাতের আঁধারে বড্ড বিপাকেই পড়া গিয়েছিল। এই মানুষটাকে তাই মনে হলো সাক্ষাত্ দেবদূত। জানতে চাইলেন, তুমি কি বুদ্ধিস্ট?

গত রাতে কোটা কিনাবালুতে মালয় তরুণী দিদ্দ ননয় আমাকে ভেবেছিলেন শিখ। কারণটা বোধগম্য হয়নি। ইনি কেন বুদ্ধিস্ট ভাবলেন সেটাও বোধগম্য হলো না। উত্তরের জন্য খানিক অপেক্ষা করে বললেন, আমি মুসলিম। তবে আমার অনেক বুদ্ধিস্ট বন্ধু আছে। তাদের সঙ্গে তোমার চেহারার মিল আছে।

দেখতে দেখতে শহরে ঢুকল গাড়ি। হোটেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন দরাজ দিলের মানসুর মুরাদ। রাস্তা পেরুতেই হোটেলের রিসিপশন। ডেস্কে বসে থাকা মেয়েটা যেন সাক্ষাত্ এক পরী। নিখুঁত চেহারা। নরম আলোর রিসিপশন রুম যেন তার আলোতেই আলোকিত হয়ে আছে! এখানকার আদিবাসী কাদাজান মেয়েরা যে সুন্দরী হয় তা এক বন্ধু বলে রেখেছিলেন আগেই। কিন্তু তাই বলে এতটা! চোখে না দেখলে এ রূপের বর্ণনা করা মুশকিলই বটে!

সুন্দরীর কণ্ঠস্বরও সুরেলা। কিন্তু যে খবর দিলেন, তাতে রূপ উপভোগের তৃষ্ণা পুরোপুরিই উবে গেল। কাদাজান সুন্দরী বললেন, ভুল হোটেলে এসে পড়েছ ভাই। এ হোটেলটার নাম সিটি স্টার। তোমাকে যেতে হবে সিটি ভিউতে।

এরই মধ্যে আরো দুজন বোর্ডার হাজির তার সামনে। অতীব দক্ষতায় তাদের সামলে ম্যাপ এঁকে কোথায় যেতে হবে বুঝিয়ে দিলেন তিনি। বুক করা হোটেলটা খুঁজে পেতে খুব বেশি সময় লাগল না।

 

তিন

জঙ্গি হানার ভয়ে বছরের পর বছর ধরে এ শহরটা তাড়াতাড়িই ঘুমায়। আজও রাত নটাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে সান্দাকান। দোকানপাট সবই বন্ধ। রাস্তার মোড়ে মোড়ে চেক পোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। তবে গাড়ি চলাচল নেই বললেই চলে। রোড ডিভাইডারে বসানো ল্যাম্পপোস্টগুলো যেন লণ্ঠনের মতো ধুঁকছে। গলি রাস্তাগুলো নিষিদ্ধপল্লীর মতো আলো-আঁধারিতে ঢুলুঢুলু। গোটা শহরের মধ্যে কেবল ওসব গলিতেই মানুষের আনাগোনা। 

সেলুনের সাইনবোর্ডগুলোর নিচে অন্ধকার সিঁড়িতে আদিম রসের আহবান। সামনে দেহের ফাঁদ পেতে বসে আছে টিশার্ট-ট্রাউজারপরা তরুণীরা। চারতলার হোটেল রুমে বসেও ওদের হাসি-ঠাট্টার কোলাহল কানে আসছে। নিজেদের অবস্থান জানান দিয়ে খদ্দের খুঁজছে ওরা। ঘুমন্ত শহরটাকে যেন ওরাই জাগিয়ে রেখেছে।

 

চার

সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়া সান্দাকান জাগল পাখি ডাকা ভোরে। সাত সকালেই জমে উঠল রাস্তাঘাট। বাসস্ট্যান্ডে গলা হাঁকিয়ে যাত্রী ডাকছে হেলপাররা। ছাউনি লাগোয়া অস্থায়ী হোটেলগুলো গাবতলী বাস টার্মিনালের হোটেলগুলোর কথা মনে করিয়ে দিল। ছাউনির ভেতরের হোটেলগুলো তুলনামূলক পরিষ্কার। নাস্তা খাওয়ার জন্য একটাতে ঢুকে পড়লাম। খিচুরি মতো দেখতে একটা খাবার আছে বটে, কিন্তু ওটা ঠিক খিচুরি নয়। আবার ভাতভাজাও নয়। খিচুরি আর ভাতভাজার মাঝামাঝি কিছু একটা। খেতে হবে টমেটো সস আর সিদ্ধ ডিম দিয়ে। অপরিসর খুপরির মতো দালান ঘরে দেয়ালে ঝোলানো তাকে প্লেট রেখে টুলে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা। মাত্র দু-আড়াই রিঙ্গিতে উদোর পূর্তির সুলভ আয়োজন। 

মা আর মেয়ে মিলে সামলাচ্ছে খুপড়ি দোকানটা। মায়ের পরনে স্কার্ফ আর বোরখা। মেয়ের কেবল স্কার্ফ বাঁধা মাথায়। কৌতূহলী চোখে বারবার আমাকে মাপছে। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক আলাপ চালালাম ওর সঙ্গে। জানাল, এ হোটেলে স্থানীয়রা খেতে আসে। পরিবহন শ্রমিকই বেশি। বিদেশিরা খুব একটা আসে না।  

মায়ের তাগাদায় নতুন আসা খদ্দের সামলাতে ছুটল মেয়েটা। বিল মেটানোর সময়ে বলল, আমার দেখা তুমিই প্রথম বাংলাদেশি।

প্রাতরাশের পাট চুকিয়ে রাস্তায় নামতেই জোর ধাক্কা। ২৩ কিলোমিটার দূরের সেপিলক বনে যাওয়া আসার বিল শত রিঙ্গিত হাঁকছে ট্যাক্সিওয়ালা। তবে হতাশ হওয়ার আগেই সেপিলকের একটা পাবলিক মাইক্রোবাস পাওয়া গেল। যাওয়া-আসার খরচ ছয় দ্বিগুণে ১২ রিঙ্গিত। ১৪ সিটের আরামদায়ক আসন। ভেতরের একমাত্র যাত্রী গতকাল বাসে দেখা সেই ইউরোপীয়। চিনতে পেরে হাত বাড়াল ফিলিপ। প্রাণবন্ত এক সুইস তরুণ। জেনেভার এক সুপার শপে কাজ করে। টাকা জমিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছে। এখান থেকে থাইল্যান্ড ঘুরে সুইজারল্যান্ড ফিরবে।

যে হোটেলে উঠেছি, সেটারই নিচের তলায় ডেরা বেঁধেছে ফিলিপও। এক বাস, এক হোটেল, আজকের এক যাত্রা। পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুই অচেনা মানুষ যেন পরস্পরের আপনজন বনে গেল অচেনা দেশে এসে। 

গোটা বাসে কেবল আমরা দুুজনই যাত্রী। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা ধরে নির্ধারিত সময়েই ছাড়ল গাড়ি। রাস্তায় আরো ক জন যাত্রী উঠল বটে, কিন্তু সেপিলক পর্যন্ত যাত্রী রইলাম আমরা দুজনই।

এক সময় শেষ হলো শহরের সীমানা। নির্জন বনের ভেতর দিয়ে পিচঢালা রাস্তাটা শেষ হলো ওরাংওটাং স্যাঙচুয়ারির সামনে। বেশ পরিপাটি করে সাজানো জায়গাটা। শখের ক্যামেরার জন্য বাড়তি ৩০ রিঙ্গিত গুনতে হলো ফিলিপকে। ছবি তোলার জন্য টাকাটা একটু বেশিই মনে হলো। ভাগ্যিস, মোবাইলে ছবি তোলার কোনো চার্জ নেই!

 

পাঁচ

কানের কাছে বিকট চিত্কারে পা পিছলে উল্টে পড়ার দশা। ধুপধাড় করে ছুটে এল কজন দর্শনার্থী। কাছেই দাঁড়িয়ে এক নিরাপত্তাকর্মী হাসছে। তার হাসিতে অভয় পেয়ে শুরু হলো ক্যামেরার ক্লিক। এদিক-ওদিক মুখ ঘুরিয়ে কিছু হয়তো পর্যবেক্ষণ করল ওরাংওটাংটা। তারপর গাছের ঠিক মাঝখানটায় ডালে হেলান দিয়ে যেন ইজি চেয়ারে বসল। এমনিতেই এরা মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকে। কী করে যেন মানুষঘেঁষা হয়ে গেছে এটা।

একটু দূরেই একটার পর একটা গাছে ঝাঁকুনি শুরু হলো। বিশাল বপু নিয়ে কেমন অনায়াস ছন্দে গাছের শাখায় শাখায় লাফিয়ে লাফিয়ে আরেকটা ওরাংওটাং এসে বসল আগেরটার সামনে। শুরু হলো দুজনের গলাগলি। এ এক অদ্ভুত দৃশ্য! দুটোরই লালচে বাদামি চুল। লেজ নেই একটারও।

৪ হাজার ২৯৪ হেক্টর বিস্তৃত সংরক্ষিত এলাকার প্রবেশ মুখেই এমন দৃশ্যে তাক লেগে যাওয়ার জোগাড়। কানে হেডফোন লাগানো নিরাপত্তাকর্মী তখন বলছে—ইউ আর লাকি, লাকি, লাকি।

একটু পরই চার হাত পায়ে গাছের ডালে ডালে হারিয়ে গেল ওরা। ক্যানোপি স্টাইলে বনের ভূমি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে গড়া ওয়াকওয়েটা সামনে এগিয়ে ডানে বেঁকেছে। মাথার ওপরে রেইন ফরেস্টের সবুজ ছাদ। মোড় নিতেই অদ্ভুত দৃশ্যটা চোখে পড়ল।

উঁচু গাছের গোড়ায় গড়া ফ্লাটফর্মটায় ঝুড়ি হাতে এক বনকর্মী। ছুড়ে দিচ্ছে কলা, ডুমুর, ডুরিয়ান, কাটা পেঁপে। বিপরীতে রোমশ শরীরের বিশাল দেহী এক মানুষ বসে আয়েস করে ফল খাচ্ছে যেন! তাকে ঘিরে বাচ্চা ওরাংওটাং আর বিভিন্ন প্রজাতির বানরের মেলা বসেছে।

একটা দুষ্টু প্রজাতির বাচ্চা ছুঁ মেরে নিয়ে গেল বিশাল বপুর হাতের পেঁপের টুকরোটা। আর একটা এগিয়ে আসতেই দাঁত খিঁচে একটা ধমকানি দিল বিশাল বপু। ঠিক যেন কোনো মেজাজি মানুষ বসে ফল খাচ্ছে।

আসলেই তো মানুষের জাতভাই ওরা। মালয়েশিয়ান শব্দ ওরাং মানে মানুষ। আর ইন্দোনেশিয়ার শব্দ ওটাং মানে অরণ্য। দুয়ে মিলে হয় অরণ্যের মানুষ। জেনেটিক্যালি মানুষের খুব কাছের প্রজাতি এরা।

বনকর্মী ঝুড়ি উল্টিয়ে বিদায় নিতেই এক এক করে সটকে পড়তে থাকল বানরের দল। কিছুক্ষণের মধ্যেই শূন্য হয়ে পড়া প্লাটফর্মটায় একটা কালো কাঠবিড়ালী এল দড়ি বেয়ে।

এখন আর কোনো ওরাংওটাং বা বানর দেখা যাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে দূর থেকে ভেসে আসছে বিকট চিত্কার।

এদের প্রিয় খাদ্য ডুমুর। আরো খায় গাছের ফুল, ফল, কচি পাতা, নরম বাকল। তাই বলে এদের নিরামিষাসী ভাবার কারণ নেই। পাখির ডিম আর কীটপতঙ্গও দারুণ পছন্দ তাদের। মাছ ধরে খায় অগভীর জলাশয় থেকে। অদ্ভুত কৌশলে ভেঙে খায় বাদাম জাতীয় ফল। ছাড়ে না মধু পেলেও।

পুরুষগুলোর গড় ওজন ৭৫ কেজি। স্ত্রী ওরাংওটাংয়ের গড় ওজন ৪০ কেজির নিচে। পুরুষদের উচ্চতা হয় সাড়ে চার ফুট, স্ত্রীদের চার ফুটের নিচে। অর্ধশত বছরেরও বেশি আয়ু পায় একেকটা ওরাংওটাং।

এখন ফলের মৌসুম নয় বলেই এত সহজে দর্শন মিলেছে তাদের। ফলের মৌসুমে নিজের খাবার নিজেই জোগাড় করে ওরা। আসে না বিনে পয়সার খাবার খেতে। আবার ফলের মৌসুম না হলেই যে আসে তাও নয়। রুচি বদলাতে চাইলে খাবার খোঁজে গভীর বনেই।

ওরা বাসা বাঁধে প্রতিদিনই। ডাল, লতা, পাতা দিয়ে ছাতার মতোই ছাদ বানিয়ে নেয় নিজের মতো। দিনভর জঙ্গলের লতাপাতা আর মাটিতে দাপিয়ে রাতে ঘুমায় নিজের গড়া গাছের বাসায়। ওরাংওটাং তাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৃক্ষবাসী স্তন্যপায়ী।

এই ওরাংওটাংয়ের বসবাস কেবল এই বোর্নিও দ্বীপেই। এদের তাই বলা হয় বোর্নিয়ান ওরাংওটাং। তাদের জাতিভাই হিসেবে সুমাত্রান ওরাংওটাং নামে আরেকটি প্রজাতি কেবল আছে পাশের দ্বীপে। এছাড়া দুনিয়ার আর কোনো বনে ওরাংওটাং নেই। উল্লুক প্রজাতির মধ্যে আফ্রিকায় গরিলা, শিম্পাঞ্জি আর বেবুনের দেখা মিললেও ওরাংওটাং আছে কেবল এ এলাকাতেই। কিন্তু আশঙ্কার কথা, পাম চাষের কারণে এদের সংখ্যা দিন দিন কমছেই। এ দেশের মাইলের পর মাইল বিস্তৃত পাম বাগান ওদের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে চলেছে। কাঁটা থাকায় পাম গাছে মোটেই চড়তে পারে না এরা।

 

ছয়

মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে গাছের খোঁড়লে সেঁধিয়ে গেল রোমশ কালো শরীরটা। আহা! আর একটু সময় কেন থাকল না! আরে, ওই তো আরেকটা। দিঘল গাছগুলোর গোড়ায় জমিয়ে বসা গুল্মঝোপের ভেতর থেকে আরেকটা বেরিয়ে এল। গাট্টাগোট্টা শরীর। কালো রোমে ছাওয়া দেহ। ছোট্ট লেজ। হাঁটাচলা আয়েশি। দূর থেকেও বোর্নিয়ান সান বিয়ারের বোঁটকা গন্ধ নাকে এল।

একটু দূরে আরেকটা কালো শরীর উঁচু গাছ বেয়ে তরতরিয়ে নামছে। এদিকে আরেকটা এসে যোগ দিল আগেরটার সঙ্গে। অবজার্ভেশন টাওয়ারে দাঁড়ানো জনা ছয় মানুষের দিকে খেয়ালই নেই তাদের। আপনমনে মাটি শুঁকতে শুঁকতে গুটিগুটি পায়ে চরছে।

টাওয়ারে বসানো বায়নোকুলারটায় একটু আগেও চোখ গলিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছিল সবাই। লাইনে সিরিয়াল পাওয়াই মুশকিল ছিল। এখন আর ওতে আগ্রহ নেই কারো। চোখের সামনেই তো জ্যান্ত ভল্লুক আপনমনে চরে বেড়াচ্ছে। গাছের মাথাছোঁয়া প্লাটফর্মে দাঁড়ানো মানুষগুলোর দিকে মন নেই তাদের।

পড়ে থাকা একটা গাছের খোঁড়লে মাথা সেঁধিয়ে বোধহয় পোকা-মাকড় খুঁজল একটা। আরেকটা মাটিতে পা ছড়িয়ে বসে মাথা চুলকালো কিছুক্ষণ। একটু পরই একটা ঝোপের ভেতর ঢুকে বিশ্রামে বসল বুঝি। আর বেরুল না।

বোর্নিয়ান সান বিয়ার নামে বিশেষ প্রজাতির এই ভল্লুকের বাস কেবল এই বোর্নিও মুলুকেই। ওরাংওটাংয়ের চেয়ে এদের দেখেই বেশি মজা পেল সুইস তরুণ ফিলিপ। সাবজেক্ট কাছে হওয়ায় অতিকায় লেন্সটা খুলে রেখেছে অনেক আগেই। শার্টারে ক্লিক করতে আরো বেশি মনোযোগী হলো সে।

বোর্নিয়ান এই সানবিয়ারের উচ্চতা ৪ থেকে ৫ ফুট। পুরুষগুলোর ওজন হয় ৩০ থেকে ৬০ কেজি। মেয়েগুলোর ২০ থেকে ৪০ কেজির মধ্যে। লেজের দৈর্ঘ্য ইঞ্চি দুয়েকের বেশি নয়। চাপ দিয়ে ধরতে পারলে নিমিষে মানুষ পিষে ফেলতে পারে এরা।

এদের আরেকটা প্রজাতি আছে মালয়ান সানবিয়ার নামে। ওদের দেখা মেলে পূর্ব ভারত, দক্ষিণ চীন, কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয় উপদ্বীপ আর সুমাত্রার উপকূলীয় বনে। ওদের তুলনায় বোর্নিয়ান সান বিয়ারের আকৃতি অর্ধেক। খাদ্য ঘাটতির কারণেই এদের আকার এমন ছোট হয়ে এসেছে বলে মতবাদ আছে।

অধিকাংশ সময়ে গাছে গাছে ঘুরতেই পছন্দ করে সানবিয়ার। পোকা-মাকড় ছাড়াও বিছা, শুয়োপোকা আর মধু ভীষণ পছন্দ তাদের। মাটি খোঁড়ে বলে ওরা বনের কৃষক। আবার পোকা-মাকড় খেয়ে বাঁচিয়ে দেয় অনেক গাছকে। মৌচাকে হানা দিয়ে মধু খেয়ে চাক ফেলে রাখে কাঠবিড়ালী বা আর কোনো বন্যপ্রাণীর জন্য। একটা পুরুষ সান বিয়ারের খাবার খুঁজে বেঁচে থাকার জন্য অন্তত ১৫ বর্গকিলোমিটার বন প্রয়োজন হয়। যদিও এই অভয়ারণ্যে নিয়মিত খাবার সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সানবিয়ারের খাবার খাওয়ার কোনো ধরাবাঁধা সময় নেই। এরা নিজের ইচ্ছামতো সময়ে খায়।

 

সাত

শতবর্ষী মসজিদ জামেক থেকে শুরু হলো ঐতিহাসিক অতীতের পথে হাঁটা। মসজিদটা টিলার ওপরে। অষ্টভূজাকার ছাদের ওপরে পঞ্চভুজী গম্বুজ। নারীদের নামাজের জন্যও পৃথক কক্ষ। টিলার নিচে বিশাল এক সাইনবোর্ডে হেরিটেজ ট্রেইলের বিবরণসহ পুরো ম্যাপ। তার সামনে তামার পাতে মুড়ে পদচিহ্ন এঁকে ট্রেইলের দিক-নির্দেশনা।

নির্দেশনা মেনে সামনে পা বাড়াতেই সিটি কাউন্সিলের সামনে গ্রানাইট পাথরের স্মৃতিস্তম্ভ। সান্দাকানের প্রতিষ্ঠাতা ইউলিয়াম বি প্রায়োরের নামাঙ্কিত পাতটা ক্ষয়ে অস্পষ্ট হয়ে গেছে। পেছনে রাস্তার ওপাশে পাহাড়ের ওপরে উঠে গেছে বাঁধানো সিঁড়ি। বাঁশবনের ভেতর দিয়ে গড়া সিঁড়িটায় টিনের ছাদ। জায়গাটা নির্জন বলে কয়েক জোড়া টিনএজার প্রেমে মত্ত। ভিনদেশী এই আগন্তুককে দেখল বটে, সতর্ক হওয়ার গরজ দেখাল না। মনে পড়ল ক্রীতদাসের হাসির কথা। গ্রন্থটিতে কালজয়ী কথা সাহিত্যিক শওকত ওসমান অভিসারে মত্ত হয়ে ওঠা যুগলের বর্ণনায় হাল ছেড়ে দিয়ে বলেছেন, প্রেমিক প্রেমিকার কুহর শুনেছ কখনো? যদি না শুনে থাকো, লেখক তোমাকে আর কিছু বোঝাতে পারবে না। 

শ দুই সিঁড়ি বাওয়ার পর ওই কুহর এলাকা শুরু হলো। পাহাড়ে উঠে বায়ে মোড় নিতেই শহর প্রশাসকের বাসভবন। বিপরীতে অর্ধবৃত্তাকার ফ্লাটফর্মটা ঝুলে আছে পাহাড়ের গায়ে। এবার পায়ের নিচে সান্দাকান শহর। চোখের সামনে সুলু সাগরের উন্মুক্ত পোতাশ্রয়।

সাগরটাকে এখানে বৃত্তের মতো বেড় দিয়ে রেখেছে মিন্দানাওয়ের বর্ধিত অংশ সুলু দ্বীপপুঞ্জ। আর প্রশান্ত মহাসাগরের অংশ এই সুলু সাগরের এখানটায় সৈকত ছুঁয়ে অর্ধবৃত্তাকারে গড়ে উঠেছে সান্দাকান শহর। উন্মুক্ত জলরাশির দৃষ্টিসীমায় ওই বড় দ্বীপটার নাম টার্টেল আউল্যান্ড। নানা প্রজাতির কচ্ছপ ওখানে এসে ডিম দেয়। কিন্তু সারি সারি দ্বীপ আর আশপাশের জলরাশিতে কারফিউ চলে সন্ধ্যা সাতটা থেকে ভোর পাঁচটা অবধি। দক্ষিণ ফিলিপাইনের জঙ্গি ঠেকাতেই এ আয়োজন সাবাহ সরকারের।

প্লাটফর্মের উল্টোদিকে আরেকটা উঁচু টিলার ওপরে বিখ্যাত মার্কিন লেখিকা অ্যাঙস কেইথের হাউস। বিশাল বিশাল গাছঘেরা বাড়িটা এখন সান্দাকান মিউজিয়াম।

পাহাড় বেয়ে আরেকটু নামতেই ক্লক টাওয়ারের উল্টোদিকে অনেকগুলো পাথর। ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকা এসব পাথর আসলে আরেক ঐতিহাসিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে সান্দাকান ছিল ব্রিটিশ চার্টারড নর্থ বোর্নিও কোম্পানির রাজধানী। জাপানিরা সে শহর গুঁড়িয়ে হত্যা করেছিল ২ হাজার ৪০০ অস্ট্রেলীয় ও ব্রিটিশ বন্দিকে। শহরের বাইরে সারি সারি কবর এখনো সেই গণহত্যার ইতিহাসের সাক্ষী।

ধ্বংসাবশেষ পেরিয়ে বিশাল এক গাছের গোড়ায় ছোট্ট এক চাইনিজ খুপরি। ওটাকে দেবীর দয়া বলে থাকে চাইনিজরা। একটু দূরে আরো একটা মন্দির আছে তাদের। তারপর একটা চার্চ।

শহরের একমাত্র স্টেডিয়ামে মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ চলছে। পুরনো অংশটায় মোটর গ্যারেজের মতো শার্টারের ভেতরে বোর্নিও পোস্টের আঞ্চলিক অফিস। আরেকটু এগুতেই সারি সারি তাঁবুতে রাতের বাজার বসেছে। মূলত নারীরাই দোকানি এখানে। পেছনে সৈকত ছুঁয়ে গড়া রানওয়ের মতো রাস্তাটায় ইয়ংস্টারদের মোটরবাইক মহড়া চলছে।

ফিলিপাইন সাগরের টাইফুন প্রায়ই আঘাত হানে এদিকটায়। জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে শহর রক্ষায় তাই সাগর তীরে বুক সমান উঁচু কংক্রিটের দেয়াল। ওপাশে পাথর ফেলে ঢেকে দেওয়া হয়েছে সাগর তীর। এখানে তাই সমুদ্র সৈকত বলে কিছু নেই। কেউ এখানে সমুদ্র   স্নানেও নামে না। বিশাল বিশাল বোল্ডারগুলোর ওপরে বসে ছিপ ফেলেছে শখের মাছ শিকারিরা।

সুলু সাগরের ওপরে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। চোখের সামনে অন্ধকারে হারিয়ে গেল টার্টেল আইল্যান্ড। কারফিউ বলে ওদিকটায় কোনো আলোও নেই। আজ রাতে আর এই সাগরে টহল বোট ছাড়া অন্য কোনো নৌযান ভাসবে না।

বন্দর হারবারে বিশাল এক জাহাজ নোঙর ফেলা। এখানে তীরের কাছেই গভীর পানি। সেই পানির পাড়ে সি ফুড রেস্টুরেন্ট। ওপাশের শপিংমলটাই সম্ভবত সান্দাকানের সবচেয়ে বড় ভবন। সারি সারি রেস্টুরেন্টগুলোতে ফিলিপিনো মেয়েদের মেলা। ডাটা রিচার্জের জন্য রাস্তার পাশের খুপড়ি দোকানে গিয়েও ফিলিপিনি সুন্দরীরই দেখা মিলল। এজন্যই বুঝি মিনি ফিলিপাইন বলা হয় সান্দাকানকে!

হারবার জেটির কাছে ফিলিপের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ফের। সাগরের পাড়ে বসে আমরা কফি খেলাম। ঘোরাঘুরি আর ছবি তোলাটাকে ব্যয়বহুল শখ বলে হাসল ফিলিপ। যত ব্যয়বহুলই হোক, এই শখের তাড়ায় সে যে আরো অনেক দেশে দেশে উড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কাঁধে হাত রেখে ফিলিপ বলল, বিদায় বন্ধু। এ ক দিনে তো বন্ধুই হয়ে গেছিলাম আমরা। v