শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গল্প

শেষ বেলার গান

আপডেট : ৩১ মে ২০১৯, ২৩:৫৫

অনিকে স্কুলে পৌঁছে বাজারে ঢুকতে যাবে শ্রাবণী, এমন সময় খুব পরিচিত কণ্ঠস্বরটা কানে এসে বাজল। সচকিত হলো শ্রাবণী। সামনে দাঁড়িয়ে অয়ন। দুজনের গলার আওয়াজই একসঙ্গে ধ্বনিত হলো।—তুই এখানে?

হাসল অয়ন, তাই তো দেখছি।

শ্রাবণী হতবাক, ঠিক দেখছি তো?

আগের ভঙ্গিতে তাকাল অয়ন, কদ্দিন পর বল তো?

আঙুল গুনে বলল শ্রাবণী, তা প্রায় বছর দশেক তো হবেই।

ঠিক বলেছিস। অয়ন বলল, এই শ্রাবণ তোর সঙ্গে বাজারে ঢুকব নাকি?

জি, না। বাসা আমার কাছেই, চল।

আশ্বাস দিচ্ছিস তো? তোর বরের রোষানলে পড়ব না তো?

মেয়েদের এত দুর্বল ভাবিস?

মোটেই না। অন্তত তোকে তো নয়ই। কেমন করে যে উধাও হয়ে গেলি টেরই পেলাম না। পরে খবর পেলাম, ঘর-সংসার নিয়ে দিব্বি আছিস।

শ্রাবণী হাসল, আহা তুই যেন উধাও হয়ে যাসনি। তোকে না পেয়েই তো এই পন্থা অবলম্বন।

দুজনের কলহাসিতে মুখরিত হলো চারিদিক। ততক্ষণে ওরা শ্রাবণীর বাসায় এসে পৌঁছেছে। শ্রাবণীর উচ্ছ্বাস যেন আজ বাঁধ মানছে না।—কী খাবি বল?

আজ কিছুই খাব না। চাকরিটা তাহলে আর থাকবে না।

কী বলছিস অয়ন? সেরা ছাত্রের মুখে এমন কথা।

না রে, চাকরি আর সেরা পেলাম কোথায় বল?

অয়ন বিদায় নিল। যাবার সময় বলে গেল, খুব তাড়াতাড়ি আমার ছোট্ট কুঁড়েঘরে নিয়ে যাব তোদের।

শ্রাবণীর মনটা আজ আনন্দে কানায় কানায় পূর্ণ। শ্রাবণীর  বারান্দার টবগুলো যেন অথৈ বন্যায় হাসছে। ফুলগুলি যেন হাসিতে মশগুল হয়ে গেছে। হাজারো কথা মনে পড়ছে শ্রাবণীর। পুরনো সব দিনের কথা। ইউনিভার্সিটির প্রাণবন্ত দিনগুলির কথা।

ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই অনির কথা মনে পড়ল। তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হলো শ্রাবণী। অনিকে নিয়ে বাসায় এল। ভাত খেতে বসে মুখ গোমড়া করল অনি,  মামনি, শুধু ডিম দিয়ে ভাত খাব? ডালও রান্না করনি?

লজ্জিত হলো শ্রাবণী। বলল, সোনামনি, সন্ধ্যায় সব করে দেব।

হঠাত্ অনি বলল, তুমি হাসছ কেন মা?

শ্রাবণী অপ্রস্তুত হয়ে বলল, চোখে যেন কী পড়ল।

অনি তো অবাক, চোখে কিছু পড়লে বুঝি হাসতে হয়?

শ্রাবণীর সারা অন্তরজুড়ে আজ অনেক তরঙ্গ খেলা করছে। শ্রাবণীর মনে হলো ওর নিস্তরঙ্গ জীবনে আজ যেন নতুন করে হাজারো তরঙ্গ উচ্ছল হয়ে অপরূপ হয়েছে। অনিকে এসব কথা বোঝানো যাবে না।

সন্ধ্যায় এল আবির। খুশির আবেগে আবিরকে চা-নাস্তা দিতেও ভুলে গেল শ্রাবণী। আবির অবাক হলো। পরে ভাবল, চা বোধহয় ফুরিয়ে গেছে। শ্রাবণীর খুশি খুশি ভাব দেখে প্রশ্ন করল আবির, কী ব্যাপার এত খুশি যে?

শ্রাবণী আর খুশি চেপে রাখতে পারল না। হাসিমুখে বলল, তোমার অয়নের কথা মনে আছে?

অয়ন? ও তোমার সেই প্রাণের বন্ধু?

আহা, তোমার যেন প্রাণের বান্ধবী নেই?

নাঃ আমার ওসব নেই।

শ্রাবণীদের বাসার সামনে দুটো আমের গাছ আছে। পাখিরা ওদের ডালে বসে আড্ডা দেয়। কিচিরমিচির করে গান গায়। আজকাল শ্রাবণীর মনে হচ্ছে, পাখিরা বেশ প্রাণভরে গান গায়। শ্রাবণীর বেশ লাগে।

ভালোই কাটছিল শ্রাবণীর দিনকাল। অয়নও মাঝে মাঝে আসে। ভালোই আড্ডা জমে। মাঝে মাঝে আবিরও ওদের সঙ্গী হয়। হঠাত্ একদিন অয়ন আসে মন খারাপ করা খবর নিয়ে। বদলি হয়েছে অয়নের। চলে যেতে হবে আরেক শহরে। শ্রাবণীর চোখ ছলছল করে।

অয়ন হাসতে চায়, মন খারাপ করিস না। আবার দেখা হবে।

সত্যি কি দেখা হবে! শ্রাবণী ভাবে, দশটা বছর অপেক্ষা করেছি। আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে?

জানি না। v