শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জীবন ও সম্পদ রক্ষার্থে গাফিলতি কাম্য নহে

আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০১৯, ২১:০৮

৩ লক্ষাধিক চলন্ত গ্যাসবোমা ঘুরিতেছে দেশ জুড়িয়া! এই বিষয়ে ইতিপূর্বে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হইয়াছে; কিন্তু পরিস্থিতি খুব বেশি বদলায় নাই। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর এলাকার রূপনগরে বেলুন ফোলানোর জন্য ব্যবহূত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হইয়া সাত শিশুর মৃত্যুর পর সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলি গাড়িতে গ্যাস দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা দেখাইতেছে। সিলিন্ডার পরীক্ষা করা হইয়াছে কি না, তাহা যাচাই করিতেছে স্টেশনগুলি। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) তথ্যানুসারে, গ্যাস ব্যবহার করিতেছে দেশে এমন গাড়ি চলিতেছে প্রায় ৪ লক্ষ। ইহার মধ্যে অন্তত ৩ লক্ষ গাড়ির মালিকই সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষা করান নাই! গত ২৩ অক্টোবর হাইকোর্ট এক আদেশে ফিটনেসবিহীন গাড়িতে তেল, গ্যাসসহ সকল ধরনের জ্বালানি বিক্রি না করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট বিক্রয়কেন্দ্রগুলিকে নির্দেশ দিয়াছেন। আর মহামান্য আদালতের নির্দেশের পরই নড়িয়া বসিয়াছে আরপিজিসিএল। এইদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যানুসারে, ৩ লক্ষ ৯০ হাজার ৫১টি গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করা হয় নাই। এত বিপুলসংখ্যক গাড়ি নিশ্চয়ই বসিয়া নাই গ্যারেজে। এবং ইহার বড়ো একটি অংশ চলন্ত গ্যাস বোমার ন্যায় চলাচল করিতেছে সড়কে-মহাসড়কে। নিয়মানুযায়ী সিএনজি সিলিন্ডার পাঁচ বত্সর পর পর পরীক্ষা করাইতে হয়। পরীক্ষার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হইতে প্রমাণপত্র দেওয়া হয়। তাহা হইতেই বোঝা যায় সিলিন্ডারটি ঝুঁকিমুক্ত কি না।

আমরা দেখিয়াছি বিগত কয়েক বত্সর ধরিয়া যানবাহন, বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁয় মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারের ভয়াবহতার চিত্র। একটি সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৩ হাজার পাউন্ড চাপে যখন গ্যাস ভরা হয় তখন রাস্তায় চলাচলকারী এক একটি গাড়ি একঅর্থে চলমান বোমায় পরিণত হয়। গ্যাস ভরিবার সময় সিলিন্ডার এমনকি গ্যাসও উত্তপ্ত অবস্থায় থাকে। এমতাবস্থায় সিলিন্ডার মানোত্তীর্ণ না হইলে বড়ো রকমের অঘটন ও প্রাণহানির ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। এইক্ষেত্রে বড়ো বাস-ট্রাকের বিস্ফোরণের ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ বাস-ট্রাকগুলিতে ছয় হইতে আটটি সিলিন্ডার থাকে। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, মেয়াদোত্তীর্ণ ও দেশীয় পদ্ধতিতে জোড়াতালি দিয়া প্রস্তুতকৃত সিলিন্ডারে বড়ো মাত্রার গ্যাস চাপ কোনোভাবেই ধারণ করিতে পারে না। ফলে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি, ছোটোখাটো দুর্ঘটনা বা ধাক্কাতেও সিলিন্ডারটি ভীষণ শক্তিতে বিস্ফোরিত হইবার আশঙ্কা থাকে। প্রতিটি গাড়ির সিএনজি সিলিন্ডার রি-টেস্টিংয়ের জন্য দুই-তিন দিন সময় লাগে। লিটারভেদে বিভিন্ন ধরনের মাশুল গুনিতে হয়। এই কারণেও অনেক গাড়ির মালিক এই প্রক্রিয়াকে বাড়তি খরচ ও সময় নষ্ট বলিয়া মনে করেন; কিন্তু সময় ও খরচ লাগিলেও ইহা জীবন ও সম্পদ রক্ষার্থে যে অত্যন্ত জরুরি, তাহা বোঝাইতে হইবে সিএনজিচালিত গাড়ির মালিকদের। দেশে সিলিন্ডার রি-টেস্টের পর্যাপ্ত সেন্টারেরও অভাব রহিয়াছে। ঝুঁকিপূর্ণ কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার কেবল নিজের, পরিবারের কিংবা জানমালের ক্ষতিগ্রস্ত হইবার আশঙ্কা সৃষ্টি করে না, আশপাশের মানুষকেও চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলিয়া দেয়। সুতরাং সিলিন্ডার যাচাইয়ের নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কোথাও গাফিলতি কাম্য নহে।