শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সড়ক পরিবহন আইন :গণসচেতনতা জরুরি

আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ২১:২৭

সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ গত ১ নভেম্বর হইতে কার্যকর হইবার কথা। কিন্তু এই আইনে আগের আইনের তুলনায় শাস্তি ও জরিমানা ১০ হইতে ৫০ গুণ বৃদ্ধি করা হইয়াছে বিধায় জনসচেতনতা তৈরির জন্য আইনের কার্যকারিতা এক সপ্তাহ পিছাইয়া দেওয়া হয়। কিন্তু তাহাও যথেষ্ট ছিল না। এইজন্য সর্বশেষ খবর অনুযায়ী এই আইন বাস্তবায়নের তারিখ আরো এক সপ্তাহ পিছানো হইয়াছে। বিআরটিএর কার্যালয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন। আইনটির বিধিমালা তৈরির কাজ চলমান রহিয়াছে। একইভাবে আইনটিকে ‘মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট, ২০০৯’-এর তপশিলভুক্ত করিবার জন্য পাঠানো হইয়াছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। একটি আইন কার্যকর করিবার ক্ষেত্রে এই বিধিমালা তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। ইহা ছাড়া যেহেতু ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে তাত্ক্ষণিকভাবে শাস্তি প্রদানের বিষয় রহিয়াছে, তাই ইহাকে মোবাইল কোর্ট অ্যাক্টের আওতাভুক্ত করাও জরুরি। আসলে ইহার আগে প্রণীত ‘মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩’ এবং ‘মোটরযান বিধিমালা ১৯৮৪’ লঘু শাস্তির কারণে অনেকটাই ছিল অকার্যকর। এই কারণে নূতন আইন বান্তবায়ন হইলে সড়কে দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়া আসিবে বলিয়া মনে করা হইতেছে। এই ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

প্রকৃতপক্ষে সড়ক পরিবহন আইন নিয়া দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নাই। এই আইন আমাদের কল্যাণের জন্যই করা হইয়াছে। সড়ক-মহাসড়কে যেই হারে দুর্ঘটনা বাড়িতেছে এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়াছে, তাহা হইতে মুক্তি পাইতে হইলে তুলনামূলকভাবে কঠোর আইনের কোনো বিকল্প নাই। যদিও সংসদে পাশ হইবার প্রায় এক বত্সর পর আইনটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হইয়াছে, তথাপি ইহাকে স্বাগত না জানাইয়া কোনো উপায় নাই। ২০১৮ সালের ৪৭ নম্বর এই আইনটিতে প্রারম্ভিক, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ইত্যাদি, কন্ডাক্টর লাইসেন্স, মোটরযান রেজিস্ট্রেশন, পরিবহন কমিটি, রুট পারমিট ইত্যাদি, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি, মোটরযানের নির্মাণ, সরঞ্জাম বিন্যাস ও রক্ষণাবেক্ষণ, ট্রাফিক ও ওজনসীমা নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি, দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ, চিকিত্সা ও বিমা, মোটরযান ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল, মোটরযান মেরামত কারখানা, ডাম্পিং ইয়ার্ড ইত্যাদি, অপরাধ, বিচার ও দণ্ড, পুনর্বিবেচনা ও আপিল, কার্যপদ্ধতি এবং বিবিধ নামে মোট ১৪টি অধ্যায় রহিয়াছে।

নূতন সড়ক পরিবহন আইনে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে দায়ী চালকের সর্বোচ্চ পাঁচ বত্সরের সাজা বা সর্বোচ্চ পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হইয়াছে। ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটাইয়া মানুষের মৃত্যু হইয়াছে প্রমাণিত হইলে ফৌজদারি আইনের ৩০২ ধারায় মামলা স্থানান্তর হইবে যেখানে আছে মৃত্যুদণ্ডেরও সুযোগ এবং এই ধারার অপরাধ অজামিনযোগ্য। এখানে আইন অমান্যের কারণে পথচারীদের জন্যও কঠোর শাস্তির বিধান করা হইয়াছে। যেমন—সড়ক-মহাসড়কে জেব্রা ক্রসিং, পদচারী-সেতু, পাতালপথসহ নির্ধারিত স্থান দিয়া পার না হইলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হইয়াছে। এই কারণে পরিবহনমালিক, চালক, পথচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে এই আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। প্রয়োজন সড়কে যথারীতি সাইন-সিম্বল স্থাপন ও সড়ক নির্মাণে রোড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনুসরণ।