বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রসঙ্গ :স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য-সক্ষমতা

আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৪৪

বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলা এবং ত্রাণ বিতরণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করিয়াছে—ইহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়িয়াছে, ইহাও সত্য। বিভিন্ন দুর্যোগে দ্রুত প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয়কেন্দ্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সরাইয়া লইবার পদক্ষেপ লইতে দেখা যাইতেছে। গত ১০ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা গিয়াছে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন। ১০ নম্বর মহাবিপত্সংকেত থাকিলেও বুলবুল শেষাবধি তাহার অতি ভয়ংকর থাবা বসাইতে পারে নাই। তাহার পরও কয়েক হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হইয়াছে, নিহত হইয়াছে ১১ জন। ইহা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ যে, এত ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকারের ব্যবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি লক্ষ করা যায় নাই। তবে কিছু ঘাটতি পরিলক্ষিত হইতেছে, যাহা সম্পর্কে সরকারের নজরদারি ও সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে।

আমরা লক্ষ্য করিয়াছি যে, দেশে যখন কোনো দুর্যোগ দেখা দেয় তখন সরকার ও জনগণকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাইতে প্রশাসনের উপর নির্ভর করিতে হয় বেশি। অথচ এই কর্মে নেতৃত্ব থাকিবার কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপর। তাহার কারণ স্থানীয় প্রতিনিধিরাই সম্পূর্ণ এলাকা সম্পর্কে এবং এলাকার জনগণের আর্থিক সক্ষমতা সম্পর্কে অধিক ওয়াকিবহাল থাকেন; কিন্তু তাহাদের ভূমিকা গৌণ হইয়া যায়। ইহা সত্য যে, কিছু কিছু এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ত্রাণ বিতরণ এবং পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণে ঘাটতি দেখা যায়। তাহার অর্থ এই রকম নহে যে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সঠিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন না। বরং ভোটের রাজনীতির কারণে তাহাদের স্থানীয় জনগণের নিকট একটি অলিখিত জবাবদিহি রহিয়াছে। আমরা লক্ষ করিয়া থাকি, স্থানীয় পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণে অংশগ্রহণ করিয়া থাকে প্রশাসন এবং কিছু এনজিও; কিন্তু তাহাদের সহিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় থাকে না। তাহা ছাড়া ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবারের সদস্যসংখ্যা নিরূপণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যতটা জ্ঞাত থাকেন, প্রশাসন বা এনজিও ততটা জ্ঞাত থাকে না। আরো একটি সমস্যা রহিয়াছে। বিভিন্ন এনজিও ও প্রশাসন  সরাসরি বিভিন্ন সাহায্য লইয়া স্থানীয় জনগণের দ্বারে উপস্থিত হইবার কারণে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করিবার একটি সুযোগ তৈরি হয়, যাহা গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য মোটেই শুভসংবাদ নহে।

এইসব কারণে সরকারের উচিত হইবে সেনিটেশন, বয়স্ক, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের সরাসরি সম্পৃক্ততা বাধ্যতামূলক করা। প্রশাসনের ব্যক্তিরা আজ এক স্থানে থাকেন, কাল অন্য স্থানে বদলি হইয়া যান; কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একই স্থান নিয়া থাকিতে হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় ত্রাণ বা সাহায্য বিতরণ, স্বজনপ্রীতি এইসব ক্ষেত্রে প্রায়োজনমতো তদারকি করিতে হইবে; কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপেক্ষা করা যাইবে না কোনোক্রমেই। সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব দূর করিতে হইবে। ইহার সহিত প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলিতে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের জন্য বিশেষ বরাদ্দের কথা বিবেচনায় রাখিতে হইবে। মোদ্দা কথা, বেশির ভাগ সাহায্য-বরাদ্দ প্রশাসনের দ্বারা বিতরণ করা হইলে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা আছে কী করিতে?