বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দক্ষ শ্রমশক্তির বিকল্প নাই

আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৫৭

যে কোনো শিল্পের প্রাণ হইল তাহার দক্ষ জনশক্তি। মূলধন ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নির্ভর করিয়া থাকে দক্ষ জনসম্পদের উপরই। তাই দক্ষ জনসম্পদ অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান ও অপরিহার্য শর্ত। বর্তমানে চলিতেছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কাল। এই বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য হইল : ইহা অতীব গতিশীল যে শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ লইয়া একজন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করিতেছে তাহা অল্প সময়ের ব্যবধানেই পুরাতন হইয়া যাইতেছে, ফলে তাহাকে পুনরায় নূতন করিয়া প্রশিক্ষণ লইতে হইতেছে। বলা হইতেছে, এক জন শিশুকে এখন যে শিক্ষা দেওয়া হইতেছে তাহার বেশির ভাগই সে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করিতে করিতে পুরাতন হইয়া যাইবে, তাই আদর্শ শিক্ষা হইল—সারা জীবন ধরিয়া শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লইতে হইবে—এই মানসিক প্রস্তুতি শিক্ষণ ও সেই অনুযায়ী মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ। এই যখন বর্তমান বিশ্ব-পরিস্থিতি, সেই সময় দেশের শ্রমক্ষেত্রের অবস্থা কী? সম্প্রতি ইউএসএআইডি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে বলিতে হয়—তাহা খুব আশাব্যঞ্জক নহে। প্রতিবেদনে দেখা গিয়াছে, দেশের প্রধান প্রধান শিল্প খাত চলিতেছে অদক্ষ শ্রমিক নিয়া। প্রতিবেদনে শিল্পভিত্তিক অদক্ষ কর্মীর হার প্রকাশ করা হইয়াছে। তাহাতে দেখা গিয়াছে, শিল্পভেদে অদক্ষ কর্মীর হার সর্বনিম্ন ৭৩ দশমিক ৮০ হইতে সর্বোচ্চ ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রধান শিল্প ছিল পাট আর সেই ক্ষেত্রেও শ্রমিকদের একটা বড়ো অংশ ছিল অদক্ষ। সময়ের পরিক্রমায় প্রধান শিল্প এখন তৈরি পোশাক খাত আর এই ক্ষেত্রেও মূল চালিকাশক্তি অদক্ষ ও স্বল্পদক্ষ শ্রমশক্তি। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এই অদক্ষ শ্রমশক্তি লইয়া যে শিল্পোন্নত দেশগুলির সহিত প্রতিযোগিতায় টিকিয়া থাকা সম্ভব নহে, তাহা আমাদের নীতিনির্ধারকদের বুঝিতে হইবে।

পোশাকশিল্পের বাহিরে সম্ভাবনাময় খাতগুলির উল্লেখযোগ্য ঔষধশিল্প। বাংলাদেশের ঔষধ খাতের বাজার ইতোমধ্যে ২৪৪ কোটি ডলার। খাতটিতে কর্মসংস্থান হইয়াছে ১ লক্ষ ৭২ হাজার মানুষের, যাহাদের ৯৭ দশমিক ৪০ শতাংশই অদক্ষ। ইহা ছাড়া, দেশের উল্লেখযোগ্য শিল্প খাত কৃষি ব্যবসার ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশই শ্রমিকই অদক্ষ, অটোমোবাইল খাতের প্রায় ৮৫ শতাংশ কর্মী অদক্ষ, সম্ভাবনাময় বেসরকারি খাতগুলোর উল্লেখযোগ্য সিরামিক-শিল্পের ৯২ দশমিক ৫০ শতাংশই অদক্ষ, বাংলাদেশের আরেক বড়ো শিল্প খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য—এই শিল্পের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মীই অদক্ষ। একই অবস্থা হালকা প্রকৌশল শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত, জাহাজ নির্মাণ খাত, চিংড়ি খাত, টেলিযোগাযোগ খাত, পর্যটনশিল্পের। 

শিল্পক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর অভাবে কেবল উত্পাদনশীলতা যে কমিয়া যাইতেছে তাহাই নহে, ইহার ফলে নানা দেশের দক্ষ শ্রমিক আসিয়া সেই শূন্যস্থান পূরণ করিতেছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ স্ব স্ব দেশে লইয়া যাইতেছে। অন্যদিকে, আমাদের দেশ হইতে যাহারা বাহিরে শ্রম দিতে যাইতেছেন তাহাদের একটি বড়ো অংশও অদক্ষ হওয়ায় তাহারা শ্রমের সঠিক মূল্য পাইতেছেন না, ফলে দেশ মূল্যবান রেমিট্যান্স হইতে বঞ্চিত হইতেছে। আমাদের মতো অধিক জনঘনত্বের দেশে দক্ষ শ্রমশক্তি উন্নয়নের কোনো বিকল্প নাই। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলকে এই দিকে যে মনোযোগ দিতে হইবে, তাহা বলাই বাহুল্য।