বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিল্ডিং কোর্ড অনুসরণে কেন এই উদাসীনতা?

আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৪৮

বিল্ডিং কোড তৈরি করিবার উদ্দেশ্য হইল পরিকল্পিত শহর নির্মাণে সহায়তা করা; কিন্তু আমাদের দেশে বিল্ডিং কোড মানিয়া চলিবার ব্যাপারে যেমন সাধারণ মানুষের কোনো সচেতনতা নাই, তেমনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও এই কোড মানিয়া যথারীতি বিভিন্ন ভবন নির্মিত হইতেছে কি না সেই ব্যাপারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়া থাকেন। স্বাভাবিক কারণে প্রশ্ন উঠে, বিল্ডিং কোড যদি না-ই মানা হইবে তাহা হইলে ইহা প্রণয়নের সার্থকতা কোথায়? ইত্তেফাকের খবরে বলা হইয়াছে যে, নারায়ণগঞ্জে বিল্ডিং কোড না মানিয়াই যত্রতত্র ভবন নির্মাণ করা হইতেছে। একের পর এক অট্টালিকা গড়িয়া উঠিতেছে; কিন্তু তাহা দেখিবার কেহ নাই। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের বিভাগীয় শহর তো বটে, এমনকি গ্রামে-গঞ্জেও আজ বহুতল ভবন ও স্যাটেলাইট শহর গড়িয়া তুলিবার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়াছে। আমেরিকার মতো জোনিং পদ্ধতি অনুসরণ করিয়া কৃষি জমি রক্ষা করিয়াও পরিকল্পিত শহর-নগর গড়িয়া তোলা যায়; কিন্তু বহুতল ভবন যেখানেই নির্মাণ করা হউক না কেন, বিল্ডিং কোড যদি অনুসরণ না করা হয়, তাহা হইলে ইহাতে যে নৈরাজ্য দেখা দিবে, তাহা হইতে আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে রক্ষা করা কঠিন হইবে। গত ৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইল তাঁতিপাড়ায় ব্যক্তি মালিকানাধীন ও নির্মাণাধীন একটি চারতলা ভবন অকস্মাত্ ধসিয়া পড়ে। ইহাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয় এবং আহত হয় পাঁচ-সাত জন। বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করিলে ইহার পরিণাম কী হয়, ইহাই তাহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

বিল্ডিং কোডে কোনো ভবন নির্মাণে নির্দিষ্ট পরিমাণ খোলা জায়গাসহ পার্কিং প্লেস রাখিবার বিধান রহিয়াছে। ফাউন্ডেশন কেমন হইবে তাহার ব্যাপারেও আছে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা; কিন্তু অনেকে একতলা ভবনের ফাউন্ডেশন দিয়া অবৈধভাবে উপরে বাড়াইতে থাকে। যেমন আলোচ্য ভবনটি একতলার ফাউন্ডেশন দেওয়ার পর একে একে চারতলা ভবন তৈরি করা হইতেছিল। তাহা ছাড়া এই জেলায় কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করিয়া খাল-বিল ও ডোবা ভরাট করিয়া তৈরি করা হইতেছে বহুতল ভবন। বহুতল ভবন খাল-বিল এমনকি নদীনালাতেও তৈরি হইতে পারে; কিন্তু এইজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন হয় সয়েল টেস্ট বা মাটি পরীক্ষা। আমাদের দেশে নদীভাঙনকবলিত এলাকায় নদীর ধারে স্কুলকলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা সরকারি-বেসরকারিভাবে তৈরি হইতে দেখা যায়, কিন্তু সয়েল টেস্ট না করিয়া বা এই টেস্ট করিলেও সেই অনুযায়ী ফাউন্ডেশন না দিবার কারণে বিভিন্ন ভবন টেকসই হয় না। এইজন্য শুধু মাটি পরীক্ষা নহে, ষষ্ঠতলার বেশি ভবন নির্মাণে অবকাঠামোগত সুবিধা, অগ্নিনিরাপত্তাসহ ১০টি নিয়ম মানিবার কথা রহিয়াছে ইমারত আইনে। ইহা অনুসরণ করিলে ভূমিকম্পসহ যে কোনো দুর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা কমিয়া যাইবে।

কথায় আছে, কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নাই। বিল্ডিং কোডসহ বিভিন্ন নিয়ম কানুন কেবল কাগজকলমেই আছে, আসলে তাহার বাস্তবায়ন তেমন একটা নাই। নারায়ণগঞ্জ শহরে বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমোদন ও প্ল্যান পাশ করে রাজউক। এই কাজটি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে বুঝাইয়া দিলেও অনেক জটিলতার অবসান হইতে পারে। ইহা ছাড়া আমাদের নিজেদেরই স্বার্থে ভবন নির্মাণে নিয়মকানুন মানিয়া ছাড়পত্র গ্রহণ করিতে হইবে এবং ইহা প্রদানে অনিয়ম ও হয়রানি বন্ধ করিতে হইবে।