অবৈধ লিজ, অবৈধ দখল এবং অবাস্তব তথা হঠকারী দাবির বিষয়গুলি অনেক ক্ষেত্রেই অনেকের স্বাভাবিক বোধবুদ্ধির সীমা অতিক্রম করে। গত বুধবার ইত্তেফাকের একটি সংবাদ এই ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যাইতে পারে। সংবাদের শিরোনামটি ছিল—সওজের জায়গা অবৈধভাবে লিজ দিতেছে মানিকগঞ্জ পৌরসভা। সংবাদে জানা যায়, ২০১১ সালে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে সওজ কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত একটি জমি টার্মিনাল নির্মাণ ও যাত্রীসাধারণের সুবিধার্থে আধুনিক শৌচাগার নির্মাণের জন্য চারটি শর্তে মানিকগঞ্জ পৌরসভার নিকট ‘সাময়িকভাবে’ হস্তান্তরের অনাপত্তিপত্র প্রদান করা হয়। কিন্তু মানিকগঞ্জ পৌরসভা অনাপত্তিপত্রের শর্ত ভঙ্গ করিবার কারণে উক্ত হস্তান্তর আদেশ ২০১৬ সালে বাতিল করা হয়। ইহার পরও মানিকগঞ্জ পৌরসভা মানিকগঞ্জ বাস টার্মিনাল, ট্রাফিক অফিসের পিছনে বিভিন্ন স্ট্যান্ড ও প্রতিষ্ঠানের নিকট লিজ দিয়া আসিতেছে। এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালত বাস টার্মিনালের দোকান তালা দিয়া আসিলেও সেই তালা ভাঙিয়া পুনরায় দোকান করিতে শুরু করিয়াছে দোকানদাররা। কেবল মানিকগঞ্জ নহে, এই ধরনের অবৈধ লিজ দেওয়ার ঘটনা বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রের পাতায় জায়গা করিয়া নেয়। কিছুদিন পূর্বে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে ডাকাতিয়া নদীর ৯ একর জমি অবৈধভাবে লিজ দেওয়ার অভিযোগ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইয়াছে। এইভাবে দেশ জুড়িয়াই সড়ক-মহাসড়কের পাশে সরকারি জায়গা অবৈধভাবে লিজ লইয়া কিংবা লিজ ছাড়াই বিভিন্ন স্থাপনা গড়িয়া তুলিতে দেখা যায়।
মনে প্রশ্ন জাগিতে পারে—ইহা কি মগের মুল্লুক? রাজনীতিবিদরা যখন স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি হন, তখন অনেক ক্ষেত্রেই তাহাদের এই সকল বিষয়ে আপস করিতে দেখা যায়। এই স্থানীয় প্রতিনিধিরাও যে রাষ্ট্রেরই প্রতিনিধি, এই বিষয়টি সম্ভবত তাহারা ভুলিয়া যান। তাহারা ভুলিয়া যান যে, লিজ দেওয়া সম্পদ সরকারের এবং উহা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাহার কাঁধেই অর্পিত হইয়াছে। অবৈধ লিজ, অবৈধ দখলের পাশাপাশি কিছু অবাস্তব তথা হঠকারী দাবির একটি সীমা থাকা উচিত। সেই সীমা অতিক্রম করিলে উহার পরিণাম ভালো হয় না। এই ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ জামানার একটি ঘটনা উল্লেখ করা যাইতে পারে। সেই সময় একবার সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের পাইলটরা ৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করিয়াছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ইহাতে আর্থিক সমস্যায় পড়িয়াছিল উক্ত এয়ারলাইনস। ব্যাপক লোকসান গুনিতে হইতেছিল। কিন্তু ইহাকে শক্ত হাতে সামলাইতে দেখা যায় লি কুয়ানকে। তিনি এই মর্মে পাইলটদের পালটা হুঁশিয়ারি দেন যে, তিনি আবার নূতন করিয়া শুরু করিতে পারেন অথবা ইহা বন্ধও করিয়া দিতে পারেন। লি কুয়ান পাইলটদের কাজে ফিরিয়া আসিবার আহ্বান জানান। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে উচ্চারণ করেন যে, আগে শৃঙ্খলা ফিরাইয়া আনুন, তাহার পর আপনারা ‘যুক্তির সহিত’ তর্ক করুন। পাইলটরা মাত্র ৬৫ মিনিট সময় নেন এবং তাহারা কাজে ফিরিয়া যান। কারণ তাহারা জানিতেন যে, তাহারা হারিবেন। সুতরাং আমাদেরও শৃঙ্খলা এবং যৌক্তিক কিছুর বাহিরে আর কোনো কিছু চিন্তা করিবার সুযোগ নাই।