বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও উদ্বেগজনক

আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৪৮

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দূষিত বায়ুর শহর হইল আমাদের প্রতিবেশী ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। সেখানে আমাদের ক্রিকেটাররা ইতিমধ্যে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলিয়াছেন। খেলার আগে তাহাদের মাস্ক পরিয়া অনুশীলন করিতে হইয়াছে। ইহাতে সেখানকার বায়ুদূষণের মাত্রা সম্যক উপলব্ধি করা যায়। বরাবরই আমাদের রাজধানী ঢাকার বায়ুর মান ছিল দিল্লির চাইতে তুলনামূলকভাবে ভালো। কিন্তু গত মঙ্গলবার ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা নয়াদিল্লিকেও ছাড়াইয়া যায়। ঢাকা ও নয়াদিল্লিতে মার্কিন দূতাবাস একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে তাত্ক্ষণিক বায়ুমান সূচি প্রকাশ করিয়া আসিতেছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা ছিল ৩১৮, যাহা ভয়ংকর দূষণের নির্দেশক। অন্যদিকে একই সময়ে নয়াদিল্লির নম্বর ছিল ২৬০, যাহা অতি অস্বাস্থ্যকর। সাধারণত বায়ুদূষণের মাত্রা বুঝাইতে ১ থেকে ৩০০ নম্বর ব্যবহার করা হইয়া থাকে। কিন্তু ঢাকার বাতাসের মাত্রা তাহারও অধিক। মূলত অপরিকল্পিত উন্নয়ন, অনাধুনিক ইটভাটা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা দিনে দিনে বাড়িয়াই চলিয়াছে।

শুধু রাজধানী ঢাকা নহে, সারাদেশেই বায়ুদূষণের সমস্যা রহিয়াছে। গত বুধবার ছিল বিশ্ব সিওপিডি দিবস। সিওপিডি হইল দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগ। এই উপলক্ষ্যে এক তথ্যে বলা হয় যে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার কমপক্ষে ৫ শতাংশ এবং চল্লিশোর্ধ্ব বয়সিদের মধ্যে ২১ শতাংশ এই জটিল রোগে ভুগিয়া থাকেন। বলা বাহুল্য, এই রোগের মূল কারণ বায়ুদূষণ ও ধূমপান। গাড়ির ধোঁয়া ও বাইরের পরিবেশগত দূষণের পাশাপাশি গ্রামে ঘরের রান্নার চুলার ধোঁয়াও মারাত্মক ক্ষতিকর। এইজন্য বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুরা সবচাইতে ঝুঁকির মধ্যে থাকে। ধুলাবালু হইতে দেখা দেয় অ্যালার্জির সমস্যা। আমাদের যে সকল অসুখ-বিসুখ হয়, তাহার অধিকাংশের জন্য দায়ী পানি, বায়ু বা শব্দদূষণ। এই সব দূষণ প্রতিরোধে আমাদের সকলের সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন।

কেবল দক্ষিণ এশিয়াই নহে, সারা বিশ্বে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা রহিয়াছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এই পরিসংখ্যান আসলে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমাদের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড অবশ্যই চালাইতে হইবে। তবে খেয়াল রাখিতে হইবে, তাহাতে যেন পরিবেশ ও প্রতিবেশের কোনো ক্ষতি সাধিত না হয়। ১৯৯০ সাল হইতে ২০১৫ সালের মধ্যে আমাদের দেশে বায়ুদূষণ প্রকট আকার ধারণ করিয়াছে। তাই এখন দূষণবিহীন উন্নয়ন পদ্ধতিই আমাদের অনুসরণ করিতে হইবে। প্রতি প্রকল্পে এই জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, শিল্পায়ন ইত্যাদি আমাদের অবশ্যই দরকার, একই সঙ্গে মানুষের সুস্বাস্থ্য ও নূতন প্রজন্মের সুরক্ষায় বায়ুদূষণ রোধ করাও জরুরি। এই জন্য বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে সকাল ও বিকালবেলা নির্মাণসামগ্রী বিশেষত ইট ও বালু পানি দিয়া ভিজাইয়া রাখিবার যে নিয়ম রহিয়াছে, তাহা অনুসরণ করিতে হইবে। ইটভাটাগুলোকে দ্রুত আধুনিকায়নের আওতায় আনিতে হইবে। ইহা ছাড়া নিজ নিজ ঘরবাড়ি, আঙিনা, মহল্লার রাস্তাঘাট, দোকানপাট, বাজার-হাট, সড়ক-মহাসড়ক প্রভৃতি জনবহুল স্থানে যাহাতে ধুলার সৃষ্টি না হয় বা তাহা নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেই ব্যাপারে আমাদের প্রত্যেককেই সজাগ থাকিতে হইবে।