ক্রিকেটে হারজিত ও উত্থান-পতন থাকিবেই। দলীয়ভাবে যেমন, তেমনি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও ছন্দপতন দেখা দেওয়াটা অস্বাভাবিক নহে। ক্রিকেট স্নায়ুর খেলা, এখানে মানসিক শক্তি হারাইলে চলে না। আমাদের ক্রিকেটারদের জীবনে যখন দুঃসময় আসে, তখন তাহাদের পার্শ্বে থাকা দরকার। এমন মন্তব্য করা বাঞ্ছনীয় নহে, যাহাতে তাহারা মনোবল আরো হারাইয়া ফেলে। কিন্তু আমাদের দেশে তাহাই ঘটিতে দেখা যায়। ক্রিকেটারগণ যখন একের পর এক খেলায় জিতিতে থাকে এবং সুসময় আসে, তখন আমরা তাহাদের প্রশংসায় ভাসাইয়া দিই। যখন তাহাদের খারাপ সময় আসে, তখন আমরা অনেক সময় নির্দয়ভাবে তাহাদের নিন্দা জানাই, যাহা মোটেও কাম্য নহে। সম্প্র্রতি ভারতে বাংলাদেশ ও ভারতের ক্রিকেট খেলা নিয়া এখন অনেকেই সমালোচনায় মুখর। এই বত্সরটা লজ্জার হারেই শেষ হইল টাইগারদের। টি-টোয়েন্টি একটি ম্যাচ তাহারা জিতিয়াছিল। কিন্তু এই পর্যন্তই। ইহার পর কেবল পরাজয়ের গ্লানি। আমরা আশা করি, নূতন বত্সরে বাংলাদেশ ঠিকই ঘুরিয়া দাঁড়াইবে।
কথায় বলে, সুখের পর দুঃখ আসে, দুঃখের পর সুখ। এইজন্য আমাদের হতাশ হইবার কিছু নাই। ২০১৯ সালটা শুরুই হইয়াছিল হার দিয়া। হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের নিকট তাহারা ইনিংস ও ৫২ রানে হারিয়া যায়। এই বত্সর পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই ইনিংস হারের লজ্জায় ডুবিয়াছে বাংলাদেশ। বিশেষ করিয়া সোয়া দিনেই কলকাতার ইডেনে ভারতের কাছে ইনিংস ও ৪৬ রানে বাংলাদেশ হারিবে, তাহা কল্পনাই করা যায় না। দুই টেস্টেই শোচনীয় পরাজয়। তবে ক্রিকেট বড়ো অনিশ্চয়তার খেলা। এখানে পরতে পরতে মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা ঘটিতে পারে। সাম্প্রতিক বত্সরে বাংলাদেশ ওয়ানডে ম্যাচে অপেক্ষাকৃত ভালো করিতেছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট ম্যাচে এখনো অপরিপক্বতার পরিচয় দিয়া থাকে। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছেও বাংলাদেশ অনেক সময় ধরাশায়ী হইয়া যায়। টেস্ট ম্যাচই আসলে ক্রিকেটের প্রাণ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হইলেও সত্য যে, বাংলাদেশ টেস্ট খেলিবার সুযোগ কম পাইতেছে। গাইতে গাইতেই গায়েন হওয়া যায়। অনুরূপভাবে খেলিতে খেলিতেই অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হয়। ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলিও সেই কথা বলিয়াছেন। তিনি সাকিব-তামিম ছাড়া বাংলাদেশের এই পারফরম্যান্স অসন্তুষ্ট নহেন। এইজন্য বাংলাদেশের নিয়মিত টেস্ট খেলা উচিত।
বাংলাদেশের উন্নতি করিবার অনেক জায়গা আছে। আশার খবর হইল—সামনের বত্সর অনেকগুলি টেস্ট খেলা আছে। সুতরাং আমাদের ধীরে ধীরে হইলেও উন্নতি করিবার সুযোগ রহিয়াছে। কেবল ঘরোয়া ক্রিকেট নহে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও খেলিতে হইবে যত বেশি সম্ভব। এই পরিসরে বাংলাদেশ দল যত বেশি সুযোগ পাইবে, তত বেশি ভালো ক্রিকেট খেলিতে পারিবে। ব্যর্থতা-সংগ্রাম হইতেই তাহাদের শিখিতে হইবে। তবে এইখানে সরকারেরও যে কোনো দায়দায়িত্ব নাই, তাহা নহে। ক্রিকেট বোর্ডের উচিত আমাদের ক্রিকেটারদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, যাহাতে তাহারা ক্রিকেটে আরো মনোযোগী ও উত্সাহী হইতে পারে। মোটকথা, বাংলাদেশের বর্তমান পারফরম্যান্সে আমরা তেমন হতাশ বা আশাহত নই।