শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘ফরাশ পাতি করিব ধুলা বন্ধ’

আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৪৮

দিল্লিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন টি-২০ ম্যাচ খেলিতে গেল, তখন বিশ্বব্যাপী চাউর হইয়া গেল দিল্লির বায়ু বিশ্বের সবচাইতে ভয়াবহ আকার ধারণ করিয়াছে। দেশের মানুষ আমাদের ক্রিকেটারদের লইয়া উদ্বিগ্ন হইল—খেলোয়াড়রা সুস্থ থাকিবেন তো, সুস্থ দেহে খেলিতে পারিবেন তো? ইহা মাত্র কয়েক দিন পূর্বের ঘটনা। সিরিজ শেষ করিয়া দেশের ক্রিকেটাররা এখনো সবাই ঘরে ফিরেন নাই। ইহারই মধ্যে খবর উলটাইয়া গেল। এই মুহূর্তে দিল্লি নহে, ঢাকাই বিশ্বের সবচাইতে দূষিত বায়ুর শহর। ক্রিকেট সিরিজে জয় আসে নাই, কিন্তু বায়ুদূষণে দিল্লিকে পিছনে ফেলিয়া ঢাকা এক নম্বর স্থান দখল করিয়াছে! উদ্বিগ্ন হইবার মতো বিষয়ই বটে। তাই সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা আন্তঃমন্ত্রণালয় ‘সভা’ ডাকিয়া কিছু সিদ্ধান্ত লইয়াছেন। বলা হইয়াছে, ইটভাটা হইতে যাহাতে দূষণকারী পদার্থ বাহির না হয় তাহার ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। একই সঙ্গে সকাল ও বিকালে নিয়ম করিয়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পানি ছিটাইবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ইহা ছাড়াও রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি এবং  মেট্রো রেল প্রকল্প নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ধুলা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে। সেই সঙ্গে জানানো হইয়াছে, ইট, বালু, মাটিসহ নির্মাণসামগ্রী বহনকারী গাড়িগুলি যাহাতে ঢাকিয়া বা আবরণ দিয়া পরিবহন করা হয়, তাহা নিশ্চিত করিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।

এই সকল ব্যবস্থা জানিয়া ও শুনিয়া রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা অবিষ্কার’ কবিতার কয়েকটি চরণ অনেকের মনে আরো একবার উঁকি মারিতে পারে : ‘তখন বেগে ছুটিল  ঝাঁকে ঝাঁক/ মশক কাঁখে একুশ লাখ ভিস্তি।/ পুকুরে বিলে রহিল শুধু পাঁক,/ নদীর জলে নাহিকো চলে কিস্তি।/ জলের জীব মরিল জল বিনা,/ ডাঙার প্রাণী সাঁতার করে চেষ্টা—’

সরকার করিতে পারিলে খুবই ভালো কথা। বায়ুদূষণের এই দুর্ভোগ হইতে রাজধানীবাসীকে বাঁচাইবার এই প্রচেষ্টাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সবকিছু তালগোল পাকাইয়া যাইবে না তো! ইহা বাস্তবে সম্ভব হইবে কি? প্রশ্ন আসিয়া আমাদের ধাক্কা দেয়, যেই শহরের কোথাও কোথাও এখনো পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় নাই, সেইখানে ঢাকা নামক শহরটি হইতে মলিন ধুলা পানি ছিটাইয়া সারাইয়া ফেলা সম্ভব হইবে কি? যেই লক্ষ লক্ষ যানবাহনের মধ্যে বহু গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়িয়া শহরে অনাসৃষ্টি করিতেছে, উহার কী ব্যবস্থা হইবে? ঢাকা শহরের চারিপাশ ঘিরিয়া আছে হাজার হাজার ইটের ভাটা, উহাদের ধোঁয়া আবৃত করিবার কোনো ব্যবস্থা কি আমাদের জানা আছে? সুতরাং ধুলাদূষণ হইতে রাজধানীবাসীকে খানিকটা রক্ষা করিতে সাময়িক পানি ছিটানো যাইতে পারে বটে, তাহা কোনো স্থায়ী সমাধান হইবে না। বরং ধুলা-দূষণের উত্স বন্ধ করিতে হইবে। কালো ধোঁয়া উদিগরণকারী গাড়িগুলি রাস্তা হইতে যে করিয়াই হউক সরাইতে হইবে, ঢাকার নিকটবর্তী ইটের ভাটাগুলি সরাইয়া নিতেও বাধ্য করিতে হইবে। তাহা না হইলে ‘ফরাশ পাতি করিব ধুলা বন্ধ’ অবস্থা দাঁড়াইবে।